এবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এসেছে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামী ও এলাকায় কুখ্যাত ভূমিদস্যু হিসেবে চিহ্নিত এক ব্যক্তির নাম। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে যুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় বইছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে।
অবাক করার বিষয়, তালিকা প্রকাশের অনেক আগেই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির দেয়া আপত্তি সত্তে¡ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ময়েজ উদ্দিন মন্ডলের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। এত অভিযোগ ও প্রমাণের পরও কিভাবে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী থেকে মুক্তিযোদ্ধা বনে গেলেন, এই প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছে সর্বমহলে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে ওই বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে অর্ধসহস্রাধিক মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মামলা ও মানববন্ধনে দেয়া বক্তব্যে সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালুয়া গ্রামের বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন মন্ডল স্বাধীনতাবিরোধী একজন বিতর্কিত মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত মজিদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে তিনি এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবার ও লোকজনের উপরে তিনি ব্যাপক নির্যাতন চালান সে সময়। এ সব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের একটি মামলা রয়েছে (পিং নং- ১৮/২০১২)।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে তিনি মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদে আসীন হয়ে এলাকার বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িসহ অনেক জমিজমা দখল করে নেন। এলাকাছাড়া হতে বাধ্য করেন চরবালুয়া গ্রামের একটি শীল পরিবারকে। এ ছাড়াও মহিমাগঞ্জ বাজার এলাকার অনেকের বাড়ি ও জমি একই কায়দায় দখল করে নেন তিনি। বর্তমানেও একই কায়দায় নানাজনের জমি নিজ নামে জাল দলিল তৈরি করে দখলসহ নানা অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। এমন নানান অপকর্মের পর এবার একেবারে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী থেকে মুক্তিযোদ্ধা সাজার খায়েসও পূরণ করে ফেলেছেন তিনি। গত ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৮৫তম সভায় বেসামরিক গেজেটে ২০৯২ নং ক্রমিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এর আগে বিগত ২০২২ সালের ২৯ মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মস্ত্রণালয়ে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামী ওই ময়েজ উদ্দিন মন্ডলের নাম ‘খ’ তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আবেদন জানানো হয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বিষয়টি আমলে নিয়ে ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, পূণঃযাচাই করে বলুন’ নোট দিয়ে গোবিন্দগঞ্জের ইউএনওকে নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভার কার্যবিবরণীসহ মন্ত্রণালয়ে ০৫.৫৫.৩২৩০.০০১.০৬.০১৫.১৬.১১৬৭ স্মারকে ‘খ’ তালিকাভূক্ত ময়েজ উদ্দিন মন্ডলকে ‘গ’ তালিকায় অন্তর্ভূক্তকরণের সুপারিশ করে একটি পত্র দেয়া হয়।
ওই সভার কার্যবিবরণীতে ময়েজ উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সকল অপকর্মের এবং মুক্তিযুদ্ধ ও দেশবিরোধী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সেটিও প্রেরণ করা হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের এই আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে গত ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৮৫তম সভায় বেসামরিক গেজেটে ২০৯২ নং ক্রমিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন।