কুমিল্লা-১ আসনে ভোট যুদ্ধে মুখোমুখি দুই হেভিওয়েট প্রার্থী
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার সোমবার সন্ধ্যা ০৬:২৬, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩
দেশের লাইফলাইন বলা হয় ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ককে। এই দুই শহর বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানীর প্রবেশমুখ বলা হয় দাউদকান্দিকে। ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ের কারণ খুবই গুরুত্ববহন করে এ উপজেলাটি।
দাউদকান্দি-তিতাস নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১ সংসদীয় আসন। তিতাস উপজেলার ৯ টি,দাউদকান্দি উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৬ ভোট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে এই ভোটার সংখ্যার বিপরীতে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে আছে ৮ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী ।
এরা হলেন— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, ঈগল প্রতীককের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যরিস্টার নাঈম হাসান, সাবেক সাংসদ জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. আমির হোসেন, জাসদ মনোনীত মশাল প্রতীকের প্রার্থী মনোজীত বড়ুয়া দীমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মিনার প্রতীকের প্রার্থী মাও. নাছিরউদ্দীন, মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকের প্রার্থী জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেন, তৃণমূল বিএনপি থেকে সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী সুলতান জিসানউদ্দীন আহম্মেদ।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই আসনে নির্বাচনের দামামা বেজে ওঠলেও ভোটারদের মধ্যে তেমন প্রভাব পড়েনি,ভোট বা পছন্দের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়নি চায়ের টেবিলেও।
মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে ব্যারিস্টার নাঈম হাসান মনোনয়ন বৈধতা পাওয়ার পর এই এলাকায় এখন নির্বাচন জমে ওঠেছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বেশ লক্ষণীয়। তবে ভোটারদের মতাদর্শ প্রাধান্য দিয়ে বুঝা যায় এই আসনে ভোটের তুমুল লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসান। এই দুই প্রার্থীর তুমুল লড়াইয়ে হাওয়া বইছে এখন এই এলাকায়।
এই লড়াইয়ে কেউ কাউকে বিন্দু পরিমান ছাড় দিতে নারাজ। যে যার অবস্থানে ভোট প্রার্থনায় ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসান।
সাধারণ মানুষের মতে,দুজনেই ক্লীন ইমেজের প্রার্থী। এখন ভোটের বেলায় কে বেশি উত্তম, এই থিওরিতেই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান সাধারণ ভোটাররা।
তবে উভয় হেভিওয়েট প্রার্থীই চান শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর :
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তিনি।
দলীয় প্রতীক নৌকায় এইবারই প্রথবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। বিগত দিনে মাঠে ছিলেন তিনি। দলীয় সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার সরব উপস্থিতি লক্ষণীয় ছিলো। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তিনি অনেকটা নির্ভার। দলীয় কিছুটা মতানৈক্য থাকলে তার পক্ষে শক্ত অবস্থানে ভোটের মাঠে আছে দাউদকান্দি পৌরসভার মেয়রসহ বেশকিছু ইউপি চেয়ারম্যান। এই নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জয়ের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। তার নির্বাচনী সভাসমাবেশে মানুষের ব্যাপক সাড়া মিলছে।
তবে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে তার সম্মুখে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ঈগল প্রতীককের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে ব্যারিস্টার নাঈম হাসান নির্বাচন করছেন। এজন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে মনে করছেন এখানকার সাধারণ ভোটারগণ। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেকোনো মূল্যে এই আসনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে চায় তারা।
ব্যারিস্টার নাঈম হাসান: তাদের পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। এই অঞ্চলের মানুষ তাদের পারিবারিক অবদানের কথা এখনও বলে বেড়ায়। ব্যক্তিগতভাবে তিনিও ১০ বছর যাবৎ রাজনৈতিক মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। রাজনৈতিক সভাসেমিনার,সামাজিক অনুষ্ঠানে তারও সরব উপস্থিতি ছিলো ব্যাপক। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছেন।সেই হিসেবে তার ব্যক্তিগত একটি নির্বাচনী অভিজ্ঞতা ও মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক অনেক কাজে আসতে পারে এই নির্বাচনে জয়ের জন্য। জনশ্রুতি আছে তাদের দাউদকান্দি-তিতাসে ব্যাপক ভোটব্যাংক আছে। এই ভোট ব্যাংক এই নির্বাচনে টার্নিং পয়েন্ট। এছাড়া এই দুই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও বেশকিছু ইউপি চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসানকে সমর্থন দিয়ে মাঠে কাজ করছেন। এছাড়াও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসান যেখানেই পথসভা ও গণসংযোগ করছেন সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
তার নেতাকর্মীরা যেভাবে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচন অবধি একাট্টা হয়ে তারা কাজ করতে পারলে ভোটের ফলাফল পাল্টে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসানের বিজয়ের পথ তৈরি করবে বলে জানান তার নেতাকর্মীরা।