কিয়ামতের দিন মুমিনের আমল নামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না!
নিজস্ব প্রতিনিধি শুক্রবার রাত ১০:৩০, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকীঃ হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উত্তম চরিত্র ও আচরণের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছে নিবেদন করার মানসিকতা তৈরির পাশাপাশি মানুষের উন্নত নৈতিক চরিত্র গঠন ও উত্তম আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ইমানকে উচ্চতর পর্যায়ে উপনীত করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। ইসলামে নামাজ-রোজার পর উত্তম আচরণের ব্যাপারেও অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উত্তম চরিত্র ও আচরণের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। কীভাবে মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হয় তা তিনি শিখিয়েছেন হাতে-কলমে। তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহ ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।’ (তিরমিজি) সুন্দর আচরণ হতে পারে জাহান্নাম থেকে মুক্তির উসিলা।
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ভালো কথা ও সদকা করা উত্তম কাজ। সুতরাং তোমরা দোযখের আগুন থেকে বেঁচে থাকো একটি খেজুর দিয়ে হলেও। যদি তা না পারও তাহলে মধুর ভাষা ও ব্যবহারের বিনিময়ে। (বুখারি) আমরা সবাই অন্যের কাছ থেকে ভালো আচরণের প্রত্যাশা করি কিন্তু অনেকেই অন্যের সঙ্গে ভালো আচরণ করি না। অথচ আমরা যেমন আচরণ অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি তেমন আচরণ আগে আমাদের অন্যের সঙ্গে করার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
হাদিসে এসেছে, যে চায় তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ইমান রাখে আর মানুষের সঙ্গে তেমন আচরণ করে যেমন আচরণ (অন্যের কাছ থেকে) পেতে সে পছন্দ করে। (মুসলিম) স্বাভাবিকভাবে তো আছেই, এমনকি কেউ খারাপ আচরণ করলেও এর বিপরীতে ভালো আচরণের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। আল কোরআনে বলা হয়েছে, সমান নয় ভালো ও মন্দ। জবাবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যার শত্র“তা রয়েছে, সেও যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। (সূরা হা-মিম সিজদাহ, আয়াত ৩৪)
এ আয়াতের তাফসিরে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতের নির্দেশ এই যে, যে ব্যক্তি তোমার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করবে, তার মোকাবিলায় তুমি ধৈর্য ধারণ কর। যে তোমার প্রতি মূর্খতা প্রকাশ করে, তুমি তার প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন কর এবং যে তোমাকে জ্বালাতন করে, তুমি তাকে ক্ষমা কর!(তাফসিরে মাজহারি) কেউ গালি দিলে কোনো মুসলমান এর জবাবে গালি দেবে এতেও ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে।নুমান ইবনে মাকরান আল মুজানি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একটি লোক অন্য একটি লোককে গালি দেয়। কিন্তু ওই লোকটি উত্তরে বলে, তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক! তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বলেন, তোমাদের দুজনের মাঝে ফেরেশতা বিদ্যমান ছিল। তিনি তোমার পক্ষ হতে গালিদাতাকে উত্তর দিচ্ছিলেন। সে তোমাকে (খারাপ কোনো কথা বলে) যে গালি দিচ্ছিল ফেরেশতা বলছিল এ নয় বরং তুমি। আর তুমি যখন বলেছিলে তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক! তখন ফেরেশতা বলছিল, তার ওপর নয়, বরং তোমারই ওপর শান্তি বর্ষিত হোক! শান্তি ও নিরাপত্তার হকদার তুমিই।(মুসনাদে আহমাদ)
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সুন্দর চরিত্র তৈরি করার তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।