ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:২৭) বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

করোনায় বাড়ছে বাল্যবিবাহ



জুঁই আক্তারের(ছদ্মনাম) বিয়ের আয়োজন করেন তার বাবা। স্কুলপড়ুয়া মেয়ের বিয়ে ঠেকাতে না পেরে ফোন করে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ নম্বরে। স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে জুঁই আক্তারের বাল্যবিবাহ বন্ধ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে দেশে বাল্যবিবাহ প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবার-প্রতিবেশীরা বিষয়গুলো জেনেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছে না, পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা ভেবে। আর পরিবারও কিছুটা গোপনে, কোনো রকম আয়োজন ছাড়াই নীরবে কিশোরী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে আহারের মুখ কমাতে চাইছেন। ফলে ঠেকানো যাচ্ছে না বাল্যবিবাহ। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কিছু বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গেলেও বেশির ভাগ বাল্যবিবাহই ঠেকানো যাচ্ছে না। তারা বলছেন, বন্যা এবং কোভিড-১৯ মহামারি বাল্যবিবাহর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। দেশের চরাঞ্চল, উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বাল্যবিবাহর হার বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকা ও চরাঞ্চলে এর প্রভাব বেশি। এক্ষেত্রে গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর ও ভোলা এগিয়ে। দরিদ্র পরিবারের দৈনিক উপার্জন কমে যাওয়া, স্কুল বন্ধ হওয়া, লেখাপড়া বন্ধ থাকায় পরিবার কন্যার বিয়ে দেওয়াকেই ভালো বলে মনে করছেন। এতে করে পরিবারে খাবারের মুখ কমে যাচ্ছে। অসচেতনতা, কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তা দিতে না পারা, মহামারিতে কম খরচে ও স্বল্প যৌতুকে বিয়ে দেওয়াও বাল্যবিবাহর অন্যতম কারণ বলে জানান বিজ্ঞজনরা।

প্রসঙ্গত, সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ সারা দেশে বিপদে পড়া শিশুদের সাহায্য করে থাকে। প্রতিটি উপজেলায় চাইল্ড হেল্পলাইনের মোবাইল টিম কাজ করছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও সংস্থাটির কর্মীরা কাজ করছেন।

করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে জানান হেল্পলাইনের ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. মোহাইমেন। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিলে চাইল্ড হেল্পলাইনে বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত ৪৫০টি ফোনকল আসে। অথচ মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৩২২। মহামারির আগে যেখানে আমরা বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত ১০০টি কল পেতাম, এখন সেখানে কমবেশি ১৮০টি ফোনকল পাচ্ছি।’

চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এর তথ্য থেকে জানা যায়, এ সময়ে বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত ফোনকলের সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। অনেক পরিবারই করোনার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গ্রামে ফিরে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের অভিভাবকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মেয়েদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আবার করোনাকালে অনেক প্রবাসী অবিবাহিত যুবক দেশে ফিরে এসেছেন। তারাও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের বিয়ে করছেন।

বাল্যবিবাহর ক্ষেত্রে বিশ্বের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথম দিকে। ইউনিসেফের তথ্য মতে, দেশের ৫৯ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগেই। আর ২২ শতাংশের বিয়ে হচ্ছে ১৫ বছরের আগে। বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ ৫৭ হাজার নারী-শিশুকে ফোন দিয়ে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে বলা হয়, চলতি বছরের জুনে ৫৩টি জেলায় ৪৬২টি বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান নাটালি ম্যাককলে বলেন, দরিদ্রতা অবশ্যই বাল্যবিবাহের অন্যতম প্রধান প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। তবে কোভিড-১৯-এর কারণে আয় কমে যাওয়ায় দারিদ্র্যের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আমরা এখনো বিশদ তথ্য জানতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, মহামারির প্রভাবে যেসব পরিবারের আয় কমেছে তাদের জন্য শিগিগরই কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT