কচুর লতি চাষে সফল গৌরীপুরের চাষীরা
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ০৬:৫১, ২১ জুন, ২০২২
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা সাশ্রয়ী শ্রম ও কম খরচে অধিক লাভের দিশা পেয়ে কচুর লতি চাষে সফল কৃষকরা। এ মৌসুমে কচুর লতির বাম্পার ফলন আর বাজারে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
কৃষিসমৃদ্ধ এলাকা গৌরীপুরের মাটি ও আবহাওয়া ফসলের জন্য উপযোগী হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা ধান চাষের পাশাপাশি নানা শাকসবজিসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের চাষাবাদ করে থাকেন। তবে অন্যান্য ফসলের তুলনায় রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি কম থাকায় কচুর লতি চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অঞ্চলে চলতি মৌসুমে কচুর লতির বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছেন তারা।
গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের ভূটিয়ারকোনা বাজারে পাইকারের কাছে কচুর লতি বিক্রি করার সময় ধেরুয়া কড়েহা গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ২৫ শতক জমি বর্গা নিয়ে কচুর লতি চাষ করেছেন, তাতে ফলন খুব ভালো হয়েছে। এতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার টাকা। মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার কচুর লতি বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
অন্য আরেক কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ২৫ শতক জমির মধ্যে লতি চাষ করেছি খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা আর আমি বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকা। প্রথমে প্রতি কেজি লতি পাইকারী ৪৫ টাকা বিক্রি করেছি আর এখন প্রতি কেজি ৩৫ টাকা বিক্রি করছি, এতে আরও এক মাসে আরও ১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো, এতে আমি লাভবান।
তিনি আরো বলেন, এলাকায় কচুর লতির ভালো ফলন হওয়ায় সরাসরি কৃষকের জমি থেকে পাইকাররা কিনে নিচ্ছে। আবার বাজারে নিয়ে আসার পর কৃষকের কাছ থেকে ৩৫/৪০ টাকা কেজি ধরে কচুর লতি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পাইকাররা।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল হেলিম জানান, মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী থাকায় মাওহা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের কৃষক অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কচুর লতি চাষ করে থাকেন। কম খরচে ভালো উৎপাদন হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছে এই ফসলের প্রতি।
কচুর লতি ক্রয় করতে আসা পাইকার কালাম মিয়া ও আলতাব মিয়া জানান, গৌরীপুর উপজেলার কচুর লতি অনেক স্বাদের, তাই সারাদেশে এ কচুর লতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ উপজেলার উৎপাদিত কচুর লতি ক্রয় করে তারা সিলেটে নিয়ে বিক্রি করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ মোট ৬০ হেক্টর জমিতে লতি কচু চাষ করেছেন, মুখী কচু চাষ করেছেন ৩০ হেক্টর জমিতে অন্য দিকে পানি কচু ১৮ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন। সর্বমোট ১০৮ হেক্টর জমিতে এ উপজেলার কৃষকরা লতি, মুখী ও পানি কচু চাষ করেছেন। এছাড়াও কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩৫ জন কৃষক বিভিন্ন রকমের প্রদর্শনী করেছেন।
গৌরীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার লিপি জানান, এ উপজেলার মাওহা ইউনিয়নে কচুর লতির চাষ বেশি হয়ে থাকে। এছড়াও অচিন্তপুর, মইলাকান্দা ও রামগোপালপুর ইউনিয়নের কৃষকরাও কচুর লতি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ অঞ্চলে দিনে দিনে কচুর লতির আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এ অর্থকারী ফসল উৎপাদনে তদারকির পাশাপাশি পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়ে থাকে।