এএসপি জুয়েল রানা এসেই জয় করে চলছেন অগনিত মানুষের হৃদয়
এইচএম দিদার,দাউদকান্দি,কুমিল্লা রবিবার সন্ধ্যা ০৬:৩০, ১৬ মে, ২০২১
সূর্যের আলো একসময় গোধূলি লগ্ন ঘনিয়ে এলে ফিকে হয়ে যায়, তেমনি রাত শেষে প্রভাত যখন ঘনিয়ে আসে চাঁদের আলো ম্লান হয়ে যায়।
কিন্তু কিছু মানুষের কর্ম মানুষকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়, মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার স্তম্ভ তৈরি করে দেয় চিরকাল। এসব মানুষের নাম মানুষের অন্তরে থেকে যায়।ঠাঁই হয় মানুষের মন মণি কোঠায়।
বলছি(দাউদকান্দি –চান্দিনা) সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) মো.জুয়েল রানার মানবিক কল্পের কথা। তিনি এ জনপথে অল্পতেই আজ গল্প হয়েছেন। তিনি দায়িত্ব্যের বাহিরে গিয়েও জনসেবায় নিজেকে বিলীন করে স্থাপন করে চলছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি যেমন সৎ একজন পুলিশ কর্মকর্তা, তেমনি তার পুরো হৃদয়টা মানবিকতায় ভরপুর। একবার তিনি বক্তৃতায় বলেছিলেন,” আমরা যেনো অকারণে কারো চোখের জল না হই“।
তার এই বক্তব্যের কথাটা সেদিন অনেকের হৃদয়ে রেখাপাত করেছে। অনেকের বুকের ভিতর সেদিন আশার চেরাগ জ্বলেছিলো।
তিনি যোগদানের পর থেকে প্রথমত দাউদকান্দি পৌরসভার ক্যাসিনো সম্রাটখ্যাত আউলিয়ার ওপেন–সিক্রেট জুয়ার আস্তানা ঘুরিয়ে আলোচনায় আসেন। ভাসতে থাকেন সর্বমহলের প্রশংসায়।
এরপর একে একে শুরু করেন মাদক নির্মূলের বিরুদ্ধে অভিযান। এখানেও তিনি সফল, দাউদকান্দি পৌরসভার বেশ কয়েকজন মাদক কারবারিকে মাদক ও মাদক বিক্রির টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। চোর ডাকাত ও মাদককারবারীদের এক আতংকের নাম এখন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এক কথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিনি জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল।
এবার আসি তার মানবিক গল্পের কথায়:করোনাকালীন মহামারির লকডাউনে যখন স্থবির গোটা দেশ তখন তিনি এবার রোজার মাসজুড়ে তাঁর হাতে গড়া সংগঠন “নিরাপদ ফাউন্ডেশন” এর উদ্যোগে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। এইতো সদ্য গত হওয়া ঈদের কিছু দিন আগে দাউদকান্দি পৌরসভার গোমতির নদীর বুকে ভাসমান ২৮ টি বেদে পরিবারকে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার উপকরণসহ শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করে এই অবহেলিত মানুষগুলোর মুখে ঈদানন্দের উচ্ছ্বসিত হাসি ফুটিয়েছেন।
মানবিক পুলিশ অফিসারের পক্ষ থেকে ঈদে এমন উপহার পেয়ে বেদে পরিবারের এক মধ্যবয়সী নারী কাঞ্চনি বেগম উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলেন, আমরা নৌকায় থাহি,নৌকায় আমগো জীবন–মরণ,আমগো খবর কেউ নেয় না। ঐ দিন পুলিশের বড় স্যার আইয়া আমগো ঈদের পোশাক, চাল –ডাল হাট বাজারের অনেক কিছু দিয়া গেছে।আমরা বহুত খুশি বাজান। বড় স্যার আমগো কইছে আমগোরে থাহার জন্য ঘর বানাই দিবো। স্যারের জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।আল্লাহ স্যারকে ভালো রাখুন।
এরই ধারাবাহিকতায় তিনি গৌরীপুরে অবস্থিত বিভিন্ন পথশিশু,ছিন্নমূল ঈদের নতুন পোশাক জড়িয়ে দিয়ে ঈদানন্দের পরম তৃপ্তি উপহার দেন এসব অসহায়দের।
এভাবেই তার মানবিক যজ্ঞ চলছে। কল্যাণের পথে,আলোর পথে তিনি হাটছেন। তার মানবিক উদার হৃদয় ও সহযোগীতার পরশে অনেকগুলো পরিবার আজ আনন্দিত।
শেষ করার আগে বলছি কিছু কিছু ফুল আছে গাছে থাকলে যেমন সুভাস ছড়ায়, তেমনি ঝরে পরে ধুলায় শুকিয়ে থাকলেও সুবাস ছড়ায়। এএসপি জুয়েল রানা হয়তো সরকারি চাকরি করার সুবাদে বদলিজনিত কারণে একদিন বিদায় নিবেন আমাদের এই জনপথের মানুষদের অশ্রু সিক্ত জলে ভাসিয়ে। তবে তার মানবিক কর্মকাণ্ডগুলো মানুষের মাঝে সুবাস ছড়াতে থাকবে।
এ বিষয়ে কথা হয় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) মো.জুয়েল রানার সাথে তিনি জানান,”অসহায় দু:খ দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের আর্তনাদ আমাকে পীড়া দেয়,তাদের কষ্টে আমি ব্যথিত হয়। সেই তাড়না থেকেই আমি আমার প্রতিষ্ঠিত আর্তমানবিক সংগঠন “নিরাপদ ফাউন্ডেশন “এর তরফ থেকে অসহায় মানুষদেরকে সহযোগীতা করি। সাহায্য পাওয়ার পর এসব মানুষের মুখে যখন দেখি স্বস্তির নিঃশ্বাস ও মলিন মুখে আনন্দের হাসি ফুটছে তখন নিজের মাধ্যমে এক ধরনের শান্তি অনুভব করি।তখন এই অনুভূতি আমার কাছে বিধাতার দেয়া স্বর্গীয় অনুভূতি মনে হয়।
তিনি আরও জানান,আমি ও আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে যতোদিন আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে ততোদিন আমি কল্যাণকর ও মানবিক কাজগুলো করে যেতে চাই।প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৃত্তবানদের অসহায় মানুষের কল্যাণে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় আমরা একটি আদর্শ ও মানবিক দেশ গড়ে তুলতে পারবো।“