ঢাকা (রাত ১:১৬) সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

উলিপুরে তিস্তার করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত বজরা; কার্যকর ভূমিকায় নেই পাউবো



কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত; উপজেলায় বজরা ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পরিবার। তিস্তার খরস্রোতে ভাঙন তীব্র থেকে তীব্র আকার ধারন করলেও কোন কার্যকর ভূমিকা নেয়নি পাউবো! ভাঙন ঠেকাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের বিপর্যস্ত মানুষজন। এমন ভাঙন দেখে হতবাক তারা।

গত একদিনে নিমিষেই বজরা ইউনিয়নের সাদুয়া দামারহাট, পশ্চিম বজরা ও কালপানি বজরা এলাকার মাদরাসা, ব্র্যাক প্রি-প্রাইমারী স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান, মন্দির, ফসলিজমি, অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতভিটাসহ আধা কি.মি. পাঁকা সড়ক তিস্তার গর্ভে চলে গেছে।

এছাড়াও গত একমাসের ব্যবধানে আরো ৩ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব এসব পরিবার। নিঃস্ব পরিবারগুলো কেউ উচু স্থান বা অন্যোর জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো মাথা গোঁজার ঠাই পায়নি অনেক পরিবার। ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে শতাধিক ঘর-বাড়ী, ফসলিজমিসহ অনেক স্থাপনা।

ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ওইসব এলাকার মানুষজন। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বজরা ইউনিয়ন থেকে বিলীন হয়ে যাবে অনেক এলাকা। দ্রুত ভাঙন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে শুধু কাগজ কলমে থাকবে এসব এলাকার নাম ঠিকানা।

জানা গেছে, খামার দামারহাট, সাদুয়া দামারহাট, বগুলাকুড়া, সাতালস্কর, পশ্চিম বজরা, চর বজরা, কালপানি বজরা, খামার বজরা, পূর্ব বজরা এবং পূর্ব ও মধ্য বজরা এই ১০টি মৌজা নিয়ে উপজেলার বজরা ইউনিয়ন গঠিত। এতে প্রায় অর্ধ লক্ষ লোকের বসবাস। তিস্তার করাল গ্রাসে খামার দামারহাট মৌজার ৫৫০ পরিবার, বগুলাকুড়ায় ১৫০ পরিবার ও সাতালস্কর মৌজার ৬৫০ পরিবারের বসতভিটাসহ আবাদী জমি নদী গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। যার অস্তিত্ব এখন শুধু কাগজে কলম ও স্মৃতিতে। সাদুয়া দামারহাট, পশ্চিম বজরা ও চর বজরা মৌজাও অধিকাংশ সময় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পানিতে নিমজ্জিত থাকে।

সরেজমিন ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেকে বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। গত একদিনের ব্যবধানে ব্র্যাক প্রি-প্রাইমারী স্কুল, পশ্চিম বজরা কমিউনিটি ক্লিনিক, পশ্চিম বজরা হাট, পশ্চিম বজরা জামে মসজিদ, পশ্চিম কালপানি বজরা জামে মসজিদ এ একটি ঈদগাহ মাঠ, সাদুয়া দামারহাট কবরস্থান, পুরাতন বজরা কালী মন্দিরসহ ১০ একর ফসলিজমি ও বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও ভাঙনের মুখে পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসাটি এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন শিক্ষক-কর্মচারীগণ। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাপ-দাদার কষ্টে গড়া স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটাসহ ফসলিজমি।

বজরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল সরদার বলেন, শেষ রক্ষা হলো না আমাদের পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসা, ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ মাঠ, মসজিদ, পশ্চিম বজরা ক্লিনিক; যেখানে হাজারো অসহায় পরিবার বিনা পয়সায় পেত চিকিৎসা সেবা। সেই ক্লিনিকটি নদী গর্ভে চলে গেল। কেড়ে নিলো অর্ধশত অসহায় পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটা মাটি৷ রক্ষা পেলনা বাবা-দাদা, নানা-নানী, ভাই, বন্ধুর শেষ ঠিকানা কবরগুলো। বজরাবাসীর প্রাণের দাবি এমন দুরাবস্থা থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসার সুপার মাও. রেফাকাত হোসেন বলেন, নিজের হাতে তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠানটির ভবন ভাঙতে হচ্ছে; ভাবতেই বুক ফেটে চৌচির হচ্ছে। আমরা রিলিফ চাই না, নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা চাই।

এ ব্যাপারে বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, তিস্তা নদী ভাঙনের বিষয়টি লিখিত ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হলেও; কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এছাড়াও স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও ইতিপূর্বে যারা নদী ভাঙনে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তাদের পুনবাসনের দাবী জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙন রোধে কাজ চলছে। এখন ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়, তবুও আমরা কাজ করছি। ভাঙন রোধে প্রকল্প প্রস্তত করে জমা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT