উদ্ভোধন হচ্ছে ২য় তিস্তা শেখ হাসিনা সড়ক সেতু
মেঘনা নিউজ ডেস্ক রবিবার ১২:১৫, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
ঈশাত জামান মুন্না
লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে কর্মীরা বিভিন্ন সাইজের বিলবোর্ড তৈরী করেছে। কিন্তু সেই বিলবোর্ডেই উদ্বোধনী সভা মঞ্চে নিয়ে যেতে হচ্ছে নৌকায়। আর মাত্র কয়ক ঘন্টা বাকি উদ্বোধন হবে লালমনিরহাট-রংপুর বাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু।
প্রধানমন্ত্রী গনভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন এ সেতু। সেতুটির পাশাপাশি আরো ৫টি ব্রীজ উদ্বোধন করবেন। এর একটি ব্রীজ ধসে যাওয়ার ফলে লালমনিরহাটের সাথে রংপুরসহ সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধা হয়ে যায়। ধ্বসে পড়া ব্রীজটি অংশে মেরামত করছে। বিকেলে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ধসে যাওয়া ব্রীজ দেখতে দ্রুত মেরামত করতে প্রকৌশলীকে নির্দেশ প্রদাণ করেন।
উদ্বোধনের দুই দিন আগে পানির তোড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক ধ্বসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বিলবোর্ড যাচ্ছে নৌকায়।
শনিবার(১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত সড়কের ধ্বসে পড়া অংশে মেরামত করছিল প্রকৌশল দফতর। তবে সন্ধ্যার মধ্যে সচল করার ঘোষনা প্রকৌশল দফতরের।
এর আগে বৃহস্পতিবার(১৩ সেপ্টেম্বর) দিনগত মধ্য রাতে সেতুর উত্তর পাশ্বে ইচলী এলাকার সেতুর সংযোগ সড়কের একটি ব্রীজের মোকা ধ্বসে যায়। এর ফলে সেতুর লালমনিরহাট অংশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিকল্প হিসেবে নৌকায় যাতায়ত করছে পথচারীরা।
সেতুর উত্তর প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেই মঞ্চের আসবাবপত্রসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিলবোর্ড যাচ্ছে নৌকায়। ধসে যাওয়া অংশে মেরামত না হলে মঞ্চে যেতে অতিথি ও সর্বসাধারনকে নৌকায় যেতে হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতরকে শনিবার বিকেলের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সচল করার নির্দেশ দেয়া হলেও সচল হয় নি।
স্থানীয়রা জানান নিম্ন মানের কাজের কারনে তিন গুনের অধিক ব্যায় করেও সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা নিয়ে রোববার(১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সেতুর উত্তর পাশ থেকে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ৫টি ব্রীজ কালভার্ট নির্মান করা হয়। শুধু ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের তিন দফায় বরাদ্ধ নিয়ে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যায় করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৫টি ব্রীজ কালভার্টের মোকা সংস্কারের বরাদ্ধ দেয়া হয় ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। সব মিলে এই ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মানের প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ করে সরকার।
এত ব্যায় বহুল খরচেও রক্ষা পাচ্ছে না সংযোগ সড়ক। গত মাসে ধ্বসে পড়তে শুরু করে ইচলী এলাকার ব্রীজ। জোড়া তালি দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার(১৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ধ্বসে পড়ে পানির তোড়ে ভেসে যায়। ফলে সেতুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে লালমনিরহাট জেলা। শুধু ইচলী ব্রীজই নয় এ সড়কের বাকী ব্রীজ কালভার্টও ঝুঁকিপুর্ন বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান মুল সেতু নির্মানে অপরিকল্পিত নদী শাসন বাঁধের কারনে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে স্রোত মুল সেতু দিয়ে না গিয়ে বিনবিনা বাঁধ ছিড়ে উত্তরের সংযোগ সড়কে আঘাত হানছে। সংযোগ সড়কের পশ্চিমে বিনবিনা এলাকায় নদীর তীরে বাঁধ না হলে এ সংযোগ সড়ক রক্ষা করা অসম্ভব বলে দাবি স্থানীয়দের।
সেতুপাড়ের কামরুজ্জামান বলেন সংযোগ সড়কের কাজের মান যেমন নিম্ন মানের ছিল। অনুরুপ অপরিকল্পিত নদী শাসন বাঁধের কারনে সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়ক ও ব্রীজ কালভার্ট ঝুঁকিপুর্ন রয়েছে। ধসে যাওয়া অংশের মেরামত কাজের ধিরগতির কারনে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স শুরুর আগে যোগাযোগ সচল করতে পারবে না বলেও আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
পশ্চিম ইচলী গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন আশা ছিল মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাব। কিন্তু নিম্ন মানের কাজের কারনে সড়ক ধসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেই আনন্দ নেই তিস্তা পাড়রের মানুষের। যদিও তা মেরামতের কাজ চলছে। দুই দিনেও যোগাযোগ সচল করতে পারবে না। দুঃখে যাদের জিবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কি? যোগ করেন শরিফুল।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ খান জানান দ্রুত গতিতে চলছে ধসে পড়া অংশ মেরামতের কাজ। আজ সন্ধ্যার মধ্যে মহিপুর কাকিনা সড়কের যোগাযোগ সচল করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চ সন্ধ্যার মধ্যে প্রস্তুত হবে। অতিথি ও সর্বসাধারন সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান স্থলে যেতে পারবেন বলেও দাবি করেন তিনি।