ঈদকে উপজীব্য করে ঈদুল আযহার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
মেঘনা নিউজ ডেস্ক সোমবার দুপুর ০২:১৯, ২০ আগস্ট, ২০১৮
নজরুল ইসলাম তোফা: বারবার ফিরে আসে ‘ঈদ’।
ঈদ আরবি শব্দ। আসলে এর অর্থটাই হচ্ছে ফিরে আসা। এমন এই দিনকে ঈদ বলা হয়, এই জন্য যে মানুষ বারবার একত্রিত হয় এবং সাধ্যমতো যার যা উপার্জন তা নিয়েই আনন্দ উৎসব করে। বলা যায়, একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ ভুলে। তাই ঈদ দ্বারাই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে নিয়ামাত কিংবা অনুগ্রহে ধন্য করে থাকে। বারংবারই তাঁর ইহসানের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে। এক কথায় বলা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক মুসলিম উম্মাদের প্রতি নিয়ামাত হিসেবেই ঈদ দান করেছে। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় যখন আগমন করে ছিল তখন মদিনা বাসীদের ২টি দিবস ছিল, সে দিবসে তারা শুধুই খেলাধুলা করত।’ আনাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্বের সঙ্গে প্রশ্ন করে ছিল এমন দু’দিনের তাৎপর্য কী? মদিনাবাসীগণ উত্তর দিলেন : আমরা জাহেলী যুগে এই দুই দিনে খেলাধুলা করে কাটাতাম। তখন তিনি বলেছিলেন : ‘আল্লাহ রাববুল আলামিন এমন এই দু’দিনের পরিবর্তেই তোমাদেরকে এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ দু’টো দিন দিয়েছেন। তাহচ্ছে মুসলিম উম্মার ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।’ সুতরাং শুধু খেলাধুলা ও আমোদ-ফুর্তির জন্য যেদু’টি দিন ছিল মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে পরিবর্তন করেই এমন এ দু’টি ঈদের দিন দান করলেন। যেন ঈদের দিনে মহান আল্লাহর শুকরিয়া, জিকির এবং তাঁর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গেই শালীনতায় আমোদ-ফুর্তি, নিজস্ব সাজ-সজ্জা কিংবা খাওয়া-দাওয়ার ব্যপারে সবাই সংযম অবলম্বন করে। বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ পুস্তকে তা ইবনে জারীর রাদি আল্লাহু আনহুর অনেক বর্ণনায় উঠে এসেছে। দ্বিতীয় হিজরিতে প্রথম ঈদ করেছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ইসলাম ধর্মাবলম্বির জনসাধারণের বড় দুইটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যেই একটি ঈদ হলো ঈদুল আযহা। এ দেশে এই উৎসবটিকে আবার ‘কুরবানি’র ঈদ নামে সবাই চেনে। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ করা। এই দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দিয়ে থাকে। এই ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পরই কুরবানি দিয়ে গোশত খাওয়াটাই যেন সুন্নাত। বুরাইদা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না, আবার এমন ঈদুল আযহার দিনে তিনি ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না।
আসলে যখন ঈদ শব্দকে মানুষ প্রথম বুঝতে শিখে তখন তাঁদের শিশু কাল থাকে এবং সেই সময় তারা বড়দের উৎসাহে ১ম ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। তারা সারা রাত না ঘুমিয়েই খুব ভোরে নতুন সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করে, কেন না তাদের অন্য দিন এতো ভোরবেলা গোসল করানো হতো না। তারপর ঈদের নামাজের জন্য তারা আতোর, সুরমা ও নতুন নতুন জামা কাপড় পরে বাবা ভাইদের সহিত পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদগাহে যেত। তবে ঈদগাহে যে পরিবেশ হয়ে উঠে সেটিই মুলত ঈদের খুশি। পায়ে হেঁটে যাওয়া কিংবা আসার মজাই আলাদা। জানা যায়, আলী রাদি আল্লাহু আনহুর বর্ণনা মতে সুন্নাত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাতাযাত করা। সুতরাং উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাও ভালো হয়। উদাহরণস্বরূপ নবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে এক পথে গিয়ে আবার অন্য পথেই ফিরেছেন।
ঈদুল আযহার তাৎপর্য হলো ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বর্ননায় যা পাওয়া যায় তাহলো এই, মহান আল্লাহ তাআলা ইসলাম ধর্মেরই এক নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কুরবানির নির্দেশ দিয়ে ছিল। সে এক আদেশ অণুযায়ী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকেই কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল কিন্তু তাঁর সৃষ্টি কর্তা তাঁকে তা করতে বাধা দিয়ে ছিল এবং পুত্রের পরিবর্তেই পশু কুরবানীর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্ঠি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জির হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের দশ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরেই যেন ঈদুল আযহা চলে। হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অণুযায়ী “ঈদুল ফিতর” এবং ঈদুল আযহার মাঝে দু’মাস ১০দিনের ব্যবধান থাকে। দিন হিসেবেই যা সবোর্চ্চ ৭০ দিন হতে পারে।
ইসলাম ধর্মে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষেই পশু কুরবানি করাটি ওয়াজীব। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে যেন পরবর্তী দুই দিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মুসলমানেরা সাধারণত গরু বা খাসী কুরবানি দিয়ে থাকে। এক ব্যক্তি একটি মাত্র গরু, মহিষ কিংবা খাসি কুরবানি করতে পারে। তবে গরু এবং মহিষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্য ৭ ভাগে কুরবানি করা যায় অর্থাৎ দুই, তিন, পাঁচ বা সাত ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ কুরবানিতে শরিক হলে ক্ষতি নেই। তাই এ দেশে সাধারণত কুরবানির গোস্ত তিন ভাগে ভাগ করেই ১ ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এবং এক ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা উচিত, তবে ইসলামের আলোকেই জানা যায়, এই ঈদের গোস্ত বিতরনের জন্য কোন প্রকার সুস্পষ্ট হুকুম নির্ধারিত নেই। এমন কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ গুলো দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। কোনো মুসাফির অথবা ভ্রমণকারির ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। আবার ঈদুল আযহার ঈদের নামাজের আগেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পশু কুরবানি সঠিক হয় না। জানা যায়, এমন কুরবানির প্রাণী খাসী বা ছাগলের বয়স কমপক্ষে ১ বছর ও ২ বছর বয়স হতে হয় গরু কিংবা মহিষের বয়স। নিজ হাতে কুরবানি করাটাই উত্তম। এই কুরবানি প্রাণীটি দক্ষিণ দিকে রেখে কিবলা মুখী করে খুবই ধারালো অস্ত্র দ্বারা অনেক স্বযত্নে মুখে উচ্চারিত ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করাই ইসলাম ধর্মের বিধান।
লেখক:
নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।