ঢাকা (রাত ১১:৩২) মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


আওয়ামী লীগের কী আসলেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে?

মুক্ত কলাম ২২০৩ বার পঠিত
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার

মেঘনা নিউজ ডেস্ক মেঘনা নিউজ ডেস্ক Clock রবিবার বেলা ১২:১৩, ২৮ জুলাই, ২০২৪

যেকোনো যৌক্তিক দাবি ও মৌলিক অধিকার আদায় আন্দোলন বা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়েছে। তবে সংবিধান বা রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সমর্থন করে থাকে। আবার কখনও কখনও করে না।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার সংগ্রাম এসব বড় অর্জন একটা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়েছে।

তবে আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে চলতি বছরের জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দেখে।

এই আন্দোলনের ঝড় খুব বেশি বৈরী ছিলো। এই আন্দোলনের তীব্র ঢেউ পুলিশ, বিজিপি, র‍্যাব নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছিলো। যদিও আন্দোলনের শুরুতে তীব্রতা এতো বেশি ছিল না।

দায়িত্বশীলদের বেফাঁস কথাবার্তার কারণে হয়তো আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে,তবে এই আন্দোলনের এত আস্ফালনের কারণ হিসেবে ছাত্রলীগও দায় এড়াতে পারে না।

ছাত্রদের আন্দোলনে বিএনপি জামাতের অংশগ্রহণ কতটুকু যৌক্তিক। এই দুই দলের নেতাকর্মীরা যদি এই আন্দোলনে জড়িত থাকে তাহলে এর দায় কী সরকার এড়াতে পারবে?

ধরে নিলাম বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন ছিলো। কিন্তু এই স্পেসটা কে দিয়েছিল?

সরকার যদি ছাত্রদের আন্দোলনকে স্বাগতম জানিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দাবি মেনে নিত তাহলে ছাত্রদের আন্দোলন পুঁজি করে অন্যরা দাঁড়াতে পারত না। অন্যরা এই স্পেসটুকু পেত না। শুরুতে সরকার নমনীয় হলে হয়তো এতে করে সরকারের ইজ্জত বাঁচত। এত সংঘাত, এত প্রাণহানি, রাষ্ট্রীয় এতো সম্পদ নষ্ট হতো না।

আমি কোটার পক্ষে নই, কোটা সংস্কারের পক্ষে কিন্তু স্বাধীন দেশের পতাকা যারা আমাদের উপহার দিয়েছিল তারা অবশ্যই আমার কাছে সম্মানের, তারা দেশের শ্রেষ্ঠ নাগরিক। তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা তাদের কাছে চিরঋণী।

তবে মুক্তিযোদ্ধারা কী নিজেদের বা তাদের সন্তান কিংবা নাতি-নাতনীদের বিশেষ সুবিধা নিতে এই দেশ স্বাধীন করেছিল?

এখানে আমার অবশ্যই দ্বিমত আছে; মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের মূল বিষয় ছিল বৈষম্য দূর করা, নির্দিষ্টভাবে যাতে কাউকে বিশেষ সুবিধা নিতে না হয় ভিন্ন কথায় মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল কোটা বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম ।

বলছিলাম কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কী মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে? মোটেও নয়। বরং আমার দৃষ্টিতে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক চেতনার জন্য এই আন্দোলন বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের আকুতি বা আবেদন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি।

এর আগেও কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল,সেবারের তুলনায় এবারের আন্দোলন ছিলো ভয়াবহ ও বেসামাল। তবে আন্দোলন এতো তীব্র হতো না যদি সরকার পক্ষ নমনীয় হতো। প্রাথমিক দিকে ছাত্ররা এই আন্দোলনের রুটিওয়ার্ক শান্তিপূর্ণভাবে করেছিল।

সরকার কী বুঝতে পারেনি এই আন্দোলন শুরুতেই যেকোনো উপায়ে নির্মূল করা দরকার। আমার মনে হয় বুঝলেও সেটা ইচ্ছে করেই সরকার এই আন্দোলনকে বড় হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তা না হলে নিশ্চয়ই এই আন্দোলন বড় হওয়ার আভাস কিংবা ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে অন্যরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করতে পারে। যদি এই ধরনের পূর্বাভাস পেয়ে থাকে তা হলে সরকারের উচিত ছিল তখনই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার।

যদি এত বড় আন্দোলনের পূর্বাভাস পেতে ব্যর্থ হয়ে থাকে তাবড়-তাবড় গোয়েন্দারা তাহলে এই দায়বদ্ধতা কী সরকার এড়াতে পারে? নিশ্চয়ই সরকার এর দায়ভার এড়াতে পারে না।

আর যদি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে এই ধরনের আন্দোলনে নাশকতার আভাস দিয়ে থাকে তাহলে সরকার তখন কেনো তা রুখে দিতে ব্যবস্থা নিল না। নাকি সরকার বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এই ছাত্র আন্দোলন বড় করে নিজেদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ক্ষমতাসীনদের শক্তি পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন?

যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এই শক্তিমত্তার খেলায় আওয়ামী লীগ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যারা সারা বছর খেলা হবে, খেলা হবে বলে দম্ভ করে আওয়াজ তুলেছিল সর্বাজ্ঞে তারাই গা ঢাকা দিয়েছে। তবে ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ নিতে আপাতত সরকার সফল, এ নিয়ে যদিও বা দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় নেতিবাচক সমালোচনা চলছে। এর পনুরাবৃত্তি আর যে হবে না সরকার তা নিয়ে হয়তো এখন অবধি নির্ভার নয়।

টানা চতুর্থবারে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগে। এই একটানা ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ এখন প্রচন্ড সবল ও শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার কথা। কিন্তু এই ছাত্র আন্দোলনের কার্যকলাপে বুঝা গেল আওয়ামী লীগ খুব বৃদ্ধ হয়ে গেছে; শক্তিহীন বৃদ্ধের ন্যায়।

ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য একমাত্র ছাত্র লীগের যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু ছাত্র লীগ প্রথমদিন সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন প্রতিহত করতে দাঁড়াতে পারলেও এরপরদিন থেকে দেশের সবকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ছাড়া করেছে ছাত্র লীগকে। আওয়ামী লীগের সহযোগী অঙ্গ সংগঠন বা ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিপদে ছাত্র লীগ ঝাপিয়ে পড়ার নিয়ম পুরানো ও প্রমাণিত কিন্তু ছাত্র লীগের এই দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের কোনো সংগঠনকেই রাজপথ লড়তে দেখা যায় নি।

ছাত্রদের আন্দোলন এতোটাই বেসামাল ছিল যে এই সেতু মন্ত্রী বলতে আবার বাধ্য হয়েছিলেন, ” আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ” এরপর ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।

সেতু মন্ত্রীর এই বক্তব্যে প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ দেশে টানা ১৬ বছর শাসন করে এখন বড্ড ক্লান্ত। ক্লান্ত আওয়ামী লীগ আর নিজে নিজে দাঁড়াতে পারছে না, এখন লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতে হচ্ছে, উঠবস করতে হচ্ছে।সেতু মন্ত্রীর কথা প্রমাণিত হয়েছে,যে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ যেভাবে নাজেহাল হয়েছে, বলতে ইচ্ছে করছে দীর্ঘ পথ আওয়ামী লীগের ক্ষমতা থাকাকালে যারা অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তারা আন্দোলনের সময় মাঠে নেমেছেন কী? আর নামলেই বা তাদের ভূমিকা কী ছিল? এ নিয়ে খোদ দলপতি শেখ হাসিনাই রাগান্বিত হয়েছেন। যারা ছাত্র আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিহত না করে গা ঢাকা দিয়েছে তাদের নাকি তালিকাও হচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ আরও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে মনে হচ্ছে।

গোটা দেশের কোথাও আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনকে ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে মাঠে দেখা যায় নি। যেই আওয়ামী লীগ আন্দোলন সংগ্রামের অভূতপূর্ব সোনালী এক ইতিহাস আছে সেই আওয়ামী লীগ আজ বড় অসহায় হয়ে গেছে যা জাতি দেখল।
তবে আওয়ামী লীগের প্রয়োজন এখন নিজের চেহেরাটা একটু আয়নায় দেখুক। তাহলে কোথাও খুঁত থাকলে দেখতে পাবে। নিজের ভগ্ন রুগ্ন চেহেরাটা একটু দেখতে পাবে। আয়নায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ তার নিজের ভুল শুধরে নিলে হয়তো আর সামনে দেয়ালে পিঠ ঠেকবে না।

না হয় আবার যদি দেয়ালে আওয়ামী লীগের পিঠ ঠেকে যায় তাহলে সামনে পিছনে যাওয়ার আর জায়গা থাকবে না।

সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনে মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেলের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এই ক্ষয়ক্ষতির বিচার চাইলেন দেশের জনগণের কাছে।
এই ধরনের বিচার করার ক্ষমতা দেশের জনগনের নেই৷ অপরাধী শনাক্ত হলে রাষ্ট্রের বিজ্ঞ বিচারিক আদালত বিচার করবে। তবে জনগণের বিচারিক রায় দেখতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে আরও সাড়ে ৪ বছর অপেক্ষায় থাকবে। নারকীয় তাণ্ডবলীলায় ধ্বংসযজ্ঞের এই বিচার জনগণ কেবল ব্যালটের মাধ্যমে করতে পারবে।

জনগণের এই ব্যালট বিপ্লবের রায় দেখতে হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের ভিতরে এবার এক ভিন্নরকম ভয় ঢুকে গেছে , এই ভয়ে কারণে আওয়ামী লীগ আগামীতে দিশেহারা হয়ে যাবে। দলটির দলীয় অন্তঃকোন্দল প্রকাশ না হলেও এইবার ছাত্র আন্দোলনে তা প্রমাণিত। কারণ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যতীত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি। এর কারণে সারাদেশজুড়েই আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপিং তৈরি হয়েছে।

টাকার কারণে দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্যে
এসব নির্বাচনগুলোতে শাসক দলীয় ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়েছে। এতে তাদের নীরব অভিমান থেকে ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ কাজ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে ছাত্র আন্দোলনে বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছিল। বলাবাহুল্য আওয়ামী লীগ এমুহূর্তে ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে অবস্থান করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হলে ভালো চিকিৎসক নিয়োগ করে আওয়ামী লীগকে চিকিৎসা দিতে হবে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের খেসারত আওয়ামী লীগকে অবশ্যই দিতে হবে। এভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে ঢালাওভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সরকার প্রধানকে বহির্বিশ্বে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারের সকল অর্জন, সকল উন্নয়ন, মাদার অব হিউম্যানিটি খ্যাত শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সকল অর্জনও
এই নিরীহ শিক্ষার্থীদেরকে গুলি করে নির্বিচারে হত্যার কারণে ম্লান হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এরমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা আগামির দিনগুলোতে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে শাসকগোষ্ঠীকে।

হোসাইন মোহাম্মদ দিদার
কবি ও সাংবাদিক




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT