স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে স্বামীর বাড়িতে সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করার হুমকি
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার রাত ১১:০০, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
এম এ ইউসুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলায় দুইদিন ধরে সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন ফাতেমা বেগম (৩৩) নামে এক নারী।
গত সোমবার দুপুরে স্বামীর বাড়িতে গেলে স্বামী আবুল কাশেম বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায় এরপর থেকে ২ সন্তানকে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন ফাতেমা বেগম।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার তুরুক বাড়িয়া গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর ছেলে আবুল কাশেমের সঙ্গে নওগাঁ সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের সোলায়মান সরদারের মেয়ে ফাতেমা বেগমের প্রায় ১২বছর পূর্বে ১ লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এর মাঝেই দুই সন্তানের মা হন ফাতেমা বেগম। তারপর সংসার এবং দুই সন্তান মরিয়ম আক্তার ও মো.হোসাইন এর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কর্মের তাগিতে প্রায় ১০বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমান আবুল কাশেম। বিদেশে থাকাকালীন সময়ে সাংসারিক খচর নিয়মিত দিতেন কিন্তু গত ৫বছর থেকে কোন খরচ দেয়না এবং এক পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
যার কারনে সন্তানদের নিয়ে ফাতেমা বেগম বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। কিছুদিন পূর্বে বিদেশ থেকে আবুল কাশেম বাড়িতে ফিরলে সন্তানদের সাথে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরে গেলে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায় স্বামী আবুল কাশেম। এর পর থেকে স্ত্রীর অধিকার ফিরে পেতে ২সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান শুরু করেন ফাতেমা বেগম।
স্থানীয় প্রতিবেশি মোর্শেদা বেগম বলেন, ফাতেমা তার দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে বসে থাকেন কখন স্বামী আসবে কিন্তু তার স্বামী আবুল কাশেম বাড়িতে তালা মেরে চলে গেছে কই গেছে কেই জানেনা না। আমি কয়েক বার বলেছি এমন আচারন কেন করছিস সন্তানদের নিয়ে সংসার কর কিন্তু কোন উত্তরইদেয়না। মেয়েটা দুই সন্তানকে অনেক অসহায় হয়ে পরেছে।
অন্য প্রতিবেশি মকলেছ সরদার জানান, বিষয়টি নিয়ে সুরাহার জন্য আবুল কাশেমকে গ্রামের ময়মুরব্বি এবং মাতব্বরা মিলে কয়েবার বলেছি যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেছি কিন্তু সে আমাদের কথাকে পাওাই দেয়না। ঘরে তালা দিয়ে গেছে, কই থাকে কি করে আমরা কিছুই জানিনা।
ফাতেমা বেগমের মেয়ে ৮ম শ্রেনী পড়ুয়া মরিয়ম আক্তার বলেন, আব্বু এমন করছেন কেন। বিদেশ থেকে আসার পর আমরা বাসায় এসেছি তবুও আব্বু একটু কথা না বলে বাসায় তালা দিয়ে চলে গেছে। আমরা এখন কি করবো। আমরা আব্বুর সাথে থাকতে চাই।
ফাতেমা বেগম বলেন, স্বামীর বাড়িতে আসলে আমার স্বামী তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বিদেশ থাকতে নাকি আমাকে তালাক দিয়েছে বলে কিন্তু তার কোন কাগজ আমি আজও হাতে পাইনি। তাহলে তালাক হলো কিভাবে । শশুর শশুরী বেঁচে নেই। আমার স্বামীর এক ছোট ভাই আছে সেও মানুষিক ভারসম্যহীন কখন কই থাকে আমরা জানিনা।কার কাছে সাহায্য চাইবো বলেন। আমি আমার স্বামীর অধিকার চাই। আমার স্বামীকে ডিভোর্স দেইনি, তাই আমার অধিকার আছে। আমার স্বামীকে ফিরে পেতে চাই। কেন সে এমন করছে কিছুই জানিনা। সমাধান না পেলে হাসুয়া দিয়ে সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করব।
মুঠোফেনে এবিষয়ে কথা হলে ফাতেমা বেগমের স্বামী আবুল কাশেম জানান, বিদেশে থাকাকালীন সময়ে কাজীর সাথে পরামর্শ করে ২বছর পূর্বেই তালাক দিয়েছি তবে তালাকের কাগজ হয়তো ফাতেমা গ্রহন করেনি সে জন্য অস্বীকার করছে। এখন কাবিননামার বিষয়ে সময় নিয়ে বসে ফয়সালা করা হবে। তিনি আরও বলেন, অনেকদিন যাবৎ আমার বাসায় না থাকার কারনে ঘরটি সংস্কারের প্রয়োজন তাছাড়া আমি যেহেতু আবার বিদেশে চলে যাবো তাই আমার বাসায় না থেকে অন্যখানে আপাদত থাকছি। ফাতেমার চরিত্র ভালো নয়, আমার অনেক টাকা – পয়সা সে নষ্ট করেছে। তার সাথে আর ঘর সংসার করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন জানান, ফাতেমা থানায় এসেছিল তার পর বিষয়টি নিয়ে ফাতেমার স্বামীকে ফোন দিয়েছিলাম তখন তিনি বলেন আমার বাসায় উঠলে উঠুক আমি তো বাঁধা দেইনি। তবে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। তার পর ফাতেমাকে আদালতে গিয়ে উকিলের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেই।