সুনুই জলমহাল লুটের ঘটনায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ) সোমবার দুপুর ০২:২৭, ১ মার্চ, ২০২১
সুনামগঞ্জ জেলা্র ধর্মপাশা উপজেলার মনাই নদী প্রকাশিত সুনই জলমহাল থেকে কয়েকজন মৎস্যজীবীকে মারধর করে প্রায় চার লাখ টাকা মূল্যের মাছ লুটের ঘটনা নিয়ে ধর্মপাশা থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার সুনই মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণ (৩৬)বাদী হয়ে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন (৩২)ও তাঁর আপন বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন মাসুদ (৫৫)সহ ৪২জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২৪/২৫জন আসামি করে (২৮ফেব্রুয়ারি) রোববার রাত ১০টার দিকে এই অভিযোগটি করেছেন। গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে উপজেলার সুনই জলমহালে এই ঘটনা ঘটে।
উপজেলা প্রশাসন, ধর্মপাশা থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের মনাই নদী প্রকাশিত সুনই জলমহালটি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন।১৪২২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৪২৭ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য এটি ইজারা পায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতিটির সভাপতি চন্দন বর্মণসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকনের অনুসারী সুবল বর্মণের (৪০) সুনই জলমহাল সংক্রান্ত বিরোধসহ দুই পক্ষেরই আদালতে পৃথক মামলা মোকাদ্দমা চলে আসছিল। গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুসারীরা সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সুনই জলমহালে যান এবং সেখানে সুনই মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যদের তিনটি নৌকায় জলমহাল থেকে আহরন করে রাখা প্রায় চার লাখ টাকার মাছ লুটে নিয়ে যায় উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীরা।
এতে বাধা দিলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ৮/১০জন সদস্যকে কিল ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করা হয়। এর আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুসারীরা গত ৭ জানুয়ারি রাতে চন্দনদের খলাঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা সেখানে থাকা ১৫-২০মণ জাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ সময় ১৫/২০জনকে মারধর করে আহত করা হয়। বাধা দিতে গেলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫)কে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে নিহতের ছেলে চন্দন বর্মণ ঘটনার একদিন পর গত ৯জানুয়ারি সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তাঁর আপন ছোট ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনসহ ৬৩জনকে আসামি করে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করেনি। পরে ১০জানুয়ারি পুলিশ বাদী হয়ে হয়ে অজ্ঞাত ৬০/৬৫জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন।
সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সমিতির সহ সভাপতি মণীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৫৫) বলেন, সুনই জলমহালটির বৈধ ইজারাদার হওয়ায় আমরা আদালত থেকে মামলার রায় পেয়েছি। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রোকনের নির্দেশে আমার বড় ভাই শ্যামাচরণ বর্মণ হত্যার ঘটনায় জড়িত বেশির ভাগ আসামিরা ও নতুন কিছু অপরিচিত লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে (২৭ ফেব্রুয়ারি) শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে আমাদের তিনটি নৌকায় মৎস্য আহরণ করে রাখা চার লাখ টাকার মাছ লুটে নিয়ে গেছে। এতে বাধা দিতে গিয়ে আমাদের সমিতির ৮/১০জন সদস্য কিল ঘুষি ও লাথি মারা হয়েছে।ঘটনাটি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তাঁর বড় ভাইসহ ৪২জনকে আসামি করে থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও এটি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করা হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি করে রিসিভ করেননি। তবে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফেরদৌসুর রহমান বলেছেন, সুনই জলমহালটির পাড়ে চন্দন বর্মণদের খলাঘরের পাশাপাশি সুবলদেরও তিনটি খলাঘর আছে। ওই খলাঘরের টিন খুলে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন খবর পেয়ে ১৫ থেকে ২০ জন সেখানে গিয়েছিলেন। মাছ লুটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিপদে ফেলার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তার দাবি।
ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজ সোমবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, সুনই জলমহালটি থেকে মাছ লুটের ঘটনায় নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি।অভিযোগটি তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, জলমহালটি নিয়ে উচ্চ আদালতে সুনই মৎস্যজীবী সমিতির পৃথক দুটি মামলা ছিল। কিন্ত উচ্চ আদালত থেকে সম্প্রতি সুবলদের মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে।