ঢাকা (রাত ৯:২৭) রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাঘাটায় ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঝলসে গেলো ৮০ বিঘা ফসলের ক্ষেত

আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা Clock বুধবার রাত ০১:৫৬, ২০ এপ্রিল, ২০২২

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়নের স্কুল বাজার এলাকার কৃষক ঘুটু রাম। এবার চলতি বোরো মৌসুমে ধার-দেনা করে ২ বিঘা জমিতে বোরোধানের আবাদ করেছে। সবেমাত্র তার জমির ধান ফুলেও বের হয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই ধান পাকলে কেটে ঘরে তোলার সোনালী স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এরই মধ্যে গত শনিবার সকালে জমিতে দেখেন তার সমস্ত জমির ধানক্ষেত ইট ভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঝলসে সদ্য ফুলে বের হওয়া ধানের শীষ গুলো শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।

শুধু ঘুটুই নন, এলাকার কৃষক আসাদ, হারুন অর রশিদ, আজাদুল,আনটু, হিটলার, আসাদুল ইসলাম, ভুট্রুসহ প্রায় ৫০ জন কৃষকের ৮০ বিঘা জমির বোরোধান ক্ষেত ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঝলসে গাছের ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।

কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, লাভের আশায় এবার সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করতে গিয়ে অনেক ধার-দেনা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে আসছি। আমার জমির ধানের শীষ সবেমাত্র বের হয়েছে, এমন সময় ইট ভাটার ধোঁয়ার এই সর্বনাশ কি ভাবে সহ্য করা করা যায়।

এলাকাবাসি জানান, ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় শুধু ধান ক্ষেতই নষ্ট হয়নি। ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ, বাঁশঝাড় পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। মরে গেছে পুকুরের মাছ, শাক সবজিসহ মাঠের ফসল। গাছের ছোট আম, কাঠাল নষ্ট হয়ে গাছ থেকে ঝড়ে পড়া সহ প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হমকির মুখে পড়েছে।

সাঘাটা উপজেলা কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার কর্মকর্তারগণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পদুমশহর স্কুল বাজার এলাকায় ৭ বছর আগে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ইট পোড়ানো শুরু করে বি এম কে-২ ব্রিক্সস নামের একটি ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে কোন আবাসিক এলাকা ও তিন ফসলী এলাকায় কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপন করা যাবে না। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল ও ক্লিনিকের এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করিতে পারবে না।

কিন্তু এই ইট ভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারী কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কাই করা হয়নি। এখানেই ইটভাটার পাশে রয়েছে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি বাজার, একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও তিন ফসলী কৃষি জমি। এদিকে ভাটার ধোয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার নারী, শিশু ও বয়স্করা ভুগছেন শ্বাসকষ্টে।

জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভাটা স্থাপন করেছেন মনির হোসেন মণির। এ ব্যাপারে ভাটা মালিক মনির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া না গেলে, কথা হয় ভাটার ম্যানেজার নিপেন্দ্র এর সাথে। তিনি জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন মেনেই ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভাটার নির্গত ধোঁয়ায় কৃষকদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সহ কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, ভাটাটি তিন ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। যা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়েনা। এই ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে ভাটার মালিককে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সে ক্ষতিপুরণ দেয়া অবশ্যই জরুরী।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT