মাসে লাখ টাকার মাদক লাগে শিক্ষকের ছেলের
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ শুক্রবার রাত ১১:২৪, ৭ জানুয়ারী, ২০২২
বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা অনুষদের সাবেক পরিচালক। রাজশাহীতে রয়েছে ৩টি বিশাল বাড়ি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে রয়েছে একাধিক মার্কেট। রয়েছে ৭৩ বিঘা ফসলী জমি ও আমবাগান। ২০০০ সালে এইচএসসি পাশের পর ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বেপরোয়া জীবনযাপন ও মাদকে জড়িয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায়।
এমন জীবনযাপনের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে মাদক সেবনেই মাসে লাখ টাকা লাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা অনুষদের সাবেক পরিচালক মৃত আবেদ আলীর ছেলে আজাহার আলী ওরফে আপেলের (৪১)। ১২ বছর আগের মাদক মামলা, সন্তানের ভ্রুণ হত্যা ও নারী নির্যাতনের একাধিক মামলায় আপেলকে শিবগঞ্জ থেকে আটক করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (০৬ জানুয়ারী) বিকেলে শিবগঞ্জের জালমাছমারীর গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে আটক করে র্যাব-৫, সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল। শুক্রবার (০৭ জানুয়ারী) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র্যাব। এসময় আপেলসহ তার মাদক সরবরাহকারী আসিফ আলী নিশান ও আপেলের আমেরিকা প্রবাসী ভাইয়ের ছেলে মাদকসেবী সাদমান শাকিব আলীকে আটক করে র্যাব। পরে তাদের দেয়া তথ্যে, শিবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে শুক্রবার সকালে আরও ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান ইয়াবা, জাল টাকা জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলো- শিবগঞ্জ উপজেলার জালমাছমারী এলাকার মৃত আবেদ আলীর ছেলে মো. আজহার আলী আপেল (৪১), আতাহার আলীর ছেলে ও আপেলের ভাতিজা সাদমান শাকিব আলী (২০), দৌলতপুর উপরটোলা গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে আসিফ আলী নিশান (২৬), উজিরপুর ডাকাতপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মো. জাহির (৩৫), সেলিমাবাগ গ্রামের মৃত ধনা মমিনের ছেলে রানাউল হক (৩১), দৌলতপুর মহাজনপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা ইয়াসিন (৪২), তার ছেলে শাহরিয়ার নাজিম জয় (২২)।
র্যাব জানায়, সাবেক শিক্ষকের ছেলে আপেলের কাছ থেকে ৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। এই ৪টি কার্ডে আনুমানিক ৫ কোটি টাকা রয়েছে বলে র্যাবকে জানিয়েছে আপেল। এইচএসসি পাশ করার পরই ২০০০ সালে বাড়ির অসম্মতিতে প্রেম করে আফসানা ইয়াসমিনকে বিয়ে করে আপেল। মাদকাসক্তির কারনে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। মাদক মামলা থেকে বাঁচতে বিদেশে পালিয়ে যায় আপেল। পরে ২০১৫ সালে দেশে ফিরে আফরোজা খাতুনকে বিয়ে করে এবং ৬ মাসের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।
র্যাব-৫, সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সানারিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ২০১৭ সালে আপেল হিরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েন। পরে ২০১৮ ঢাকায় একটি পুর্নবাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ২০১৯ সালে তাজনুভা তাজরিন অভিকে বিয়ে করে। বিয়ের ২ মাসের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন অভি। এছাড়াও ২০১০ সালের একটি মাদক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আপেল।
মেজর সানারিয়া জানান, আপেল বর্তমানে পুরোপুরি মাদকাসক্ত। প্রতিমাসে তার মাদকের পেছনে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। এমনকি তার একাধিক গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। যাদের নিয়ে তিনি টিকটক ভিডিও করেন। মাদক ব্যবসায়ী আসিফ আলী নিশান তার মাদকের সরবরাহ করত। আপেল তার ভাতিজা আমেরিকা প্রবাসী ভাইয়ের ছেলে সাদমান শাকিব আলীকে নিয়ে মাদক সেবন করত ও প্রতিদিন তার বাসায় আসর বসাতো। সাদমান শাকিবের মা সুবর্না খাতুন এয়ার হোস্টেস ছিলেন এবং বিমানে স্বর্ণ পাচারের সময় পুলিশ তাকে আটক করে। গত কয়েক বছর ধরে সুবর্না জেলে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আপেলের সাবেক স্ত্রী তাসনুভা তাজরিন অভি বলেন, তাকে (আপেল) বিয়ে করে অনেক বড় ভুল করেছি। সে আমার সকল গহনা বিক্রি করে মাদক সেবন করতো। আমাকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। এমনকি আমার পেটে থাকা সন্তানকেও হত্যা করেছে। আমি এর নায্য বিচার চাই।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এবিষয়ে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।