মীর এম ইমরান,মাদারীপুর রবিবার রাত ০২:৩০, ১৫ আগস্ট, ২০২১
এমনই অভিযোগ রয়েছে কলেজ পড়ুয়াে এক শিক্ষার্থীকে অপহরন মামলার প্রধান পালাতক আসামী বাবু হাওলাদার (২২) এর বিরুদ্ধে। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা কালিকাপুর ইউনিয়নের হোসনাবাদ এলাকার ফারুক হাওলাদারের ছেলে। বাবু অপহরন মামলার প্রধান আসামী হলেও ভূক্তভোগী পরিবারকে এখানো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে কলেজ পড়ুয়াে এক শিক্ষার্থীকে উত্যাক্ত করে আসছিল বাবু হাওলাদার (২০)। একাধিকবার মেয়ের পরিবরের কাছে বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি। এলাকায় মাদক সহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকায় বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয়ননি মেয়ের পরিবার। তাতেই ক্ষিপ্ত হয় বাবু এবং যেকোনো মূল্যে তাকে বিয়ে কারার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
এর কিছুদিন পরে, ২০২০ সালের (২ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে ঐ তরুনী বাড়িরপাশেই তার বান্ধবীর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিল। সে সময়ই বাবু পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আরো দুজন সহযোগী নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে জোরপূর্বক ওই তরুনীকে তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষনিক ভাবে শিক্ষার্থীর পরিবার অনেক খোঁজাখুজির পরে তার কোন সন্ধান না পেলেও লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে বলতে পারেনি এবং বাবুর এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় তাদেরবিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। ঘটনার দুই মাস পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে সম্পূর্ন বিষয়টি খুলে বলেন, বাবু হাওলাদার তাকে নিয়ে গিয়ে জোর পূর্বক শিবচর পাঁচ্চর এলাকায় একটি বাসায় আটকে রাখে এবং পরে সুযোগ পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে।
ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল মাদারীপুরের, শিবচর উপজেলা বাঁশকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান নামের এক কাজির মাধ্যমে মেয়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সত্ত্বেও জোর পূর্বক বিবাহ করতে বাধ্য করে বাবু। তখন বাবু ওই মেয়ের নামে নকল একটি জন্মনিবন্ধন তৈরি করে কাজি আব্দুল মান্নানকে দেয়। যেখানে তার বয়স দেখানো হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ। অথচ মেয়ের মূল জন্মনিবন্ধনে বয়স ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ এবং মেয়ের স্কুল সার্টিফিকেট এবং এস এস সি সার্টিফিকেট সনদে একই জন্মতারিখ রয়েছে। তখন ওই শিক্ষার্থীর বয়স মাত্র ১৭।
এদিকে কাজী আব্দুল মান্নান এর কাছে গিয়ে তার নিকাহ রেজিস্ট্রার খাতায় মেয়ের জন্ম তারিখ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ দেয়া থাকলেও সেখানে মেয়ের বা ছেলের কোন স্বাক্ষর করা নেই। কিন্তু বাবু হাওলাদার একটি নকল কাবিন নামা তৈরি করে এলাকার সবাইকে দেখিয়ে বলছেন এ মেয়ে তার বিবাহ করা স্ত্রী। ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে আর কোন উপায় না পেয়ে একতরফা তালাক দেয় তার কথিত স্বামীকে।
এরপর থেকে আবারো তাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল বাবু। এসবের ভয়ে ওই শিক্ষার্থীকে রাজধানীর ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে আসে তার পরিবার। দীর্ঘদিন পর গত ৬ আগষ্ট বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসেন ওই শিক্ষার্থী। এদিন তার বিয়ের জন্য বাড়িতে মেহমান আসবে এমন খবরে কথিত স্বামী বাবু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তাদের বাধা দিলে নারীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবু ও তার সহযোগীরা।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে অভিযান চালিয়ে রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার কালিকাপুর থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সবাই পালিয়ে গেলেও বাবুর সহযোগী বেলায়েত খানকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতেই নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় বাবুকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নামে মামলা করেন। এর পর শুক্রবার (১৩ আগস্ট) রাত ১০ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপন হাওলাদার নামে মামলা ৮ নং আসামিকে আটক করে মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। মামলার প্রধান আসমী বাবু হাওলাদার সহ অন্যান্য আসামী এখনো পালাতক রয়েছে। বাবু হাওলাদার জোরপূর্বক ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করানোর ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করবেন বলের জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবার।
ওই শিক্ষার্থী বাবা বলেন, বাবু আমার মেয়েকে সবসময় বিরক্ত করতো। ওর কারনে আমারা এলাকায় মুখ দেখাতে পারতাছি না। আমরা মামলা করার পর থেকে সবসময় হুমকি দিয়ে আসতেছে। আমারা নিরাপত্তা হীনতায় ভূগতেছি। আমরা এর বিচার চাই।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞাঁ বলেন, আমারা ইতিমধ্যেই মামলার দুজন আসামীকে আটক করছি।শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আসাদুজ্জামান এর কাছে উক্ত কাজির আইন বহির্ভূত বিবাহ রেজিস্টার এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিবাহ রেজিস্টার এর ব্যাপারে তার কোন গাফলতি থাকলে সেটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।