ঢাকা (রাত ৩:০২) সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


বান্দরবানে দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে ঐতিহ্যবাহী খাবার মুন্ডির

সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, বান্দরবান সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, বান্দরবান Clock শুক্রবার রাত ১০:৪৩, ২৪ জুলাই, ২০২০

বান্দরবানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার মুন্ডির খ্যাতি দিন দিন বাড়ছে। কিছুটা নুডুলসের মতো এই খাবার বিক্রি করছে জেলা শহরের বেশ কয়েকটি “মুন্ডি হাউস”। এসব রেস্টুরেন্টে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত থাকে ভোজনরসিক মানুষের ভিড়। স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে খাবারটি।

বিকেল থেকেই মুন্ডি হাউসগুলোতে ভিড় শুরু হয়। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বান্দরবান শহরের উজানীপাড়া, মধ্যমপাড়া ও বালাঘাটা এলাকায় গড়ে উঠেছে অন্তত ৩০টি মুন্ডি হাউস। শহরের উজানীপাড়ায় কং রং মুন্ডি হাউসের মালিক উচি মং মারমা বলেন, অপেক্ষাকৃত তরুণদের মধ্যেই মুন্ডির জনপ্রিয়তা বেশি। তাই মুন্ডি হাউসগুলো এখন তরুণদের আড্ডা ও বিনোদনস্থলে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে সন্ধ্যায়।

বান্দরবানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা বলেন
– এখানকার মুন্ডির স্বাদ দারুণ। স্থানীয়দের এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ মনে রাখার মতো।

টক-ঝাল স্বাদের খাবারটির মূল উপাদান চাল। আর এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে দোকানগুলোর অন্যান্য খাবার যেমন- কাবাব, লাকসো (ভর্তা), মুরগির স্যুপসহ অন্যান্য খাবারের।

বান্দরবানের উচিং মার্মা বলেন, “মারমা জনগোষ্ঠী সুদীর্ঘকাল ধরে মুন্ডি তৈরি করে আসছে। ঐতিহ্যবাহী এই ঘরোয়া খাবারের বাণিজ্যিকীকরণ অনেক পরিবারকে আর্থিকভাবে লাভবান করে তুলছে।”

মুন্ডি প্রস্তুতকারক মে চিং নু মার্মা জানান, প্রথমে আতপ চালকে দুই থেকে তিনদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এই চালকে ছোট ছিদ্রযুক্ত চালুনির ওপরে রেখে পরিষ্কার করে পানি শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর ঢেকিতে দিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। এই মন্ডকে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে চাপ দিলে নিচের দিকে চলে আসে নুডলসের মতো চিকন লম্বা মুন্ডি। বিশেষ এই যন্ত্রও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারিগরদের হাতে তৈরি।

তিনি বলেন, প্রতি কেজি চালে দুই কেজি মুন্ডি তৈরি করা সম্ভব। প্রতি কেজি মুন্ডির দাম ৮০-১০০ টাকা আর প্রতি বাটি বিক্রি হয় ১০-২০ টাকা করে।

পরিবেশনের সময় মুন্ডির সঙ্গে মাছের ঝোল বা স্যুপ দিলে স্বাদ বেড়ে যায় বহুগুণে। এছাড়া, মাছ কিংবা চিংড়ি শুঁটকির সঙ্গেও খাওয়া যায়। খাওয়ার সময় মুন্ডির সঙ্গে গোলমরিচ ও পাহাড়ি মরিচের গুঁড়া, পেঁয়াজভাজা, ধনেপাতা, চিংড়ি ও শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা পরিমাণ অনুযায়ী মেশাতে হয়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার ও চীন থেকে আসা নুডলসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে এই খাবারটি। রেস্টুরেন্ট মালিকেরা জানান, বিদেশি শুকনা মুন্ডি বাজার দখল করায় স্থানীয় মুন্ডি কারিগরেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

শহরের মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা কো কো মারমা জানান, পর্যাপ্ত সহায়তা পেলে মুন্ডি বিক্রি করে অনেকেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এই সুস্বাদু খাবার পৌঁছানো সম্ভব হবে। তাই সরকারি সহায়তা ও সহজ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT