বছরে ২ সেমিস্টার নিয়ে উদ্বেগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা
নিজস্ব প্রতিনিধি সোমবার রাত ০৩:০৯, ২৭ জুন, ২০২২
তিনটা নয়, বছর শেষ হবে দুই সেমিস্টারে-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির এমন নির্দেশনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন—নতুন পদ্ধতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তার চেয়ে বিদ্যমান পদ্ধতিই বহাল রাখা হোক। এই নির্দেশনা নতুন করে বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অসন্তোষ তৈরি করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বছরে দুটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। তারা বলছে—২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে। এটা করার এখতিয়ার নেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)।
২০২১ সালের ৯ আগস্ট দুই সেমিস্টারে ভর্তির নির্দেশনা দিয়েছিল ইউজিসি। বলা হয়েছিল—কোনোক্রমেই ২০২১ সালের পর বছরে দুই সেমিস্টার ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী জুলাই থেকে দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির করাতে হবে। তবে বছরে দুটি সেমিস্টারে ভর্তির বাধ্যবাধকতা না রেখে তিন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি অব্যাহত রাখতে ইউজিসিকে পত্র দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছি। আলাপ-আলোচনা চলছে। দেখা যাক।
ইউজিসির এই নির্দেশনাকে অপকৌশল উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। অ্যাকাডেমিক বিষয়ে এমন নির্দেশনা দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ানো হয়েছে। এই নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ইউজিসির এক ধরনের খবরদারি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন সেমিস্টার পদ্ধতি থেকে দুই সেমিস্টারে গেলে তেমন কোনও লাভ হবে না। বরং নতুন করে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনও সমস্যা থাকলেও তা ঠিক করার জন্য এটি কাজে লাগবে না। এমনটাও নয় যে শিক্ষার্থীরা দুই সেমিস্টার চাচ্ছে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে, তা-ও নয়। পক্ষান্তরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামানোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ভূমিকা রাখতে পারে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও দুই সেমিস্টার এবং তিন সেমিস্টার পদ্ধতি বিদ্যমান। তাহলে বাংলাদেশে অভিন্ন পদ্ধতি কেন জরুরি হবে?
অভিভাবকরা বলছেন, নতুন পদ্ধতি চালু করে কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক এমনটা কেউ চায় না। দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে দুইবারে একসঙ্গে অনেক টাকা দিতে হবে। এতে অভিভাবকরা চাপে পড়বেন। তিনবারে টাকা দিলে চাপ কিছু কম হয়। তাছাড়া দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে কী লাভ তাও স্পষ্ট নয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতি থেকে দুই সেমিস্টারে গেলে দুবারে অনেক টাকা দিতে হবে। এতে আমার মতো অনেক অভিভাবকই চাপের মুখে পড়বে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর অভিভাবক উচ্চবিত্ত শ্রেণির নয়। তাই যেভাবে চলছে সেভাবেই চলা উচিত।
দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে স্থানান্তর বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, তিন সেমিস্টার পদ্ধতিতে কোনও সমস্যা দেখছি না। দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে লাভ কী তাও বুঝতে পারছি না। যেভাবে আছে সেভাবে চললে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়া আরেক শিক্ষার্থী বলেন, তিন সেমিস্টার থাকায় একসঙ্গে বেশি লেখাপড়া ও পরীক্ষার চাপ নেই। বরং দুই সেমিস্টার করলে বেশি চাপ হবে। এতে ফল খারাপ হতে পারে। যা আছে তা রাখাই ভালো।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে—২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে অ্যাকাডেমিক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। আলোচনা না করেই অ্যাকাডেমিক বিষয়ে ইউজিসি হঠাৎ নির্দেশনা দিয়েছে দুই সেমিস্টারে ভর্তি করানোর।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন এর আগেও বলেছিলেন, আমরা মনে করি, আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। যারা নতুন বিষয় চালু করতে চায় তাদের এই শর্ত দেওয়া হচ্ছে, যা আইনের মধ্যে পড়ে না। দুই সেমিস্টার হলে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে বেশি টাকা দিতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপরও আর্থিক চাপ পড়বে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেক চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক-এর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা বলেছে দুই সেমিস্টারের কথা। এটি তো আর ইউজিসি তৈরি করেনি। শিক্ষাবিদদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পাঁচটা আঞ্চলিক কর্মশালা হয়েছে। একটি জাতীয় পর্যায়ের কর্মশালাও হয়েছে। সরকার এর অনুমোদন দিয়েছে। এখনও গেজেট নোটিফিকেশন হয়নি, হবে।
কোনও বিশ্ববিদ্যালয় যদি তিন সেমিস্টার পদ্ধতিতে চালায় তাহলে কী হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, অনেক নিয়মই অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানছে না। যদি তারা এটাও না মানে সে ক্ষেত্রে আরও একটি নিয়ম না মানা যুক্ত হবে।