চাঁপাইনবাবগঞ্জে মনোনয়ন জমার শেষ দিনে হট্টগোল-লাঠিচার্জ;চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী একজন
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৭:৪৯, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রুহুল আমিন ছাড়া আর কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে দুপুরে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমানের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনি।
এ নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মোট ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র উঠালেও জমা দিয়েছেন মাত্র একজন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান।
এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে দুপুরে নির্বাচন অফিসেই সৃষ্টি হয় হট্টগোল। নির্বাচন অফিস দখলে নিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদেরকে ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়া নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল তৈরি হয়ে শেষ পর্যন্ত হাতাহাতিতে পৌঁছায়। পরে জেলা নির্বাচন অফিসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে।
এ সময়ে কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন অফিসের মূল ফটকে ঢুকতেই দুইটি গ্রুপের কিছু লোকজন তাদেরকে বাধা দেয়। এ সময় তারা প্রার্থীদের ও তাদের লোকজনের কাগজপত্র দেখে তল্লাশি করার পর প্রবেশ করতে দেয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই গেইটে দুইটি গ্রুপ তল্লাসি করার পর নির্বাচন অফিসের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে প্রার্থীদের।
সাধারণ সেবা গ্রহীতা ও অন্যান্য প্রার্থীর লোকজনকে গেইটে এভাবে তল্লাশি করার কারণ জানতে চাইলে বাধা প্রদাণকারী ও তল্লাসি করা এক ব্যক্তি বলেন, উপরে আমাদের নেতারা বসে আছেন। তাই তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাচন অফিসে প্রবেশ করা নিষেধ করা হয়েছে এবং সকলের কাগজপত্র ও ব্যাগ চেক করা হচ্ছে। তবে পুলিশ উপস্থিত থাকার পরেও তারা কেন এমন তল্লাশি করছেন ও বাধা দিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি হট্টগোলের সময় হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি সাধারণ সদস্য প্রার্থী আব্দুল হাকিমের ভাই। তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মো. রুহুল আমিনের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে তার সাথে এসেছিলাম। কিন্তু কে বা কারা আমার উপর হামলা করেছে আমি বুঝতে পারিনি। আমার ভাইয়ের পক্ষে এসেছি ভেবে এই হামলা করেছে তারা।
পরে ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতোয়ার রহমান, ফজল-ই-খুদা এবং সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) একেএম আলমগীর জাহান। তবে হট্টগোল ও লাঠিচার্জ নিয়ে পুলিশের কেউই এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রুহুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। তার এই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই। জেলা পরিষদের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ব্যাপক সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন। তবে এখানে নির্বাচন অফিস দখল করা ও প্রভার রাখার অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবী করেন তিনি। এখানে তেমন কোন ঘটনাই ঘটেনি।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান জানান, নিরাপত্তার স্বার্থেই পুলিশ নির্বাচন অফিসে আসা ব্যক্তিদের তল্লাশি নিতে পারে। তবে কোন দল বা প্রার্থীর লোকজন এটা করতে পারেন না। এ বিষয়ে বেলা ১১টার দিকে এক প্রার্থী অভিযোগ দিলে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। এরপর আর কোন ব্যক্তি বা প্রার্থী অভিযোগ করেননি।
তিনি আরও জানান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৯ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বাকি তিনজন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করা প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল না করার বিষয়ে কিছুই জানি না বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী ১৭ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। তফসিল অনুযায়ী-মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর।