কিচির মিচির শব্দে মুখরিত নওগাঁর “পাখি গ্রাম”
আবু ইউসুফ,নওগাঁ মঙ্গলবার বিকেল ০৫:৫৩, ১০ নভেম্বর, ২০২০
ঋতু বৈচিত্রের এই দেশে প্রকৃতি যেমন তার নানা রুপ পরিবর্তন নিয়ে আসে, সেই সাথে প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য হাজার হাজার মাইল দূর থেকে আসে অতিথি পাখিরা। সবুজে ঘেরা ও ছায়া সুনিবিড় গ্রাম হাতিপোতা । এখন পাখি গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। এক সময় পাখিরা অতিথি হলেও এখন তারা স্থায়ী বাসিন্দা। গত ৮-১০ বছর আগ থেকে পাখিদের বিচরণ শুরু হয়েছে। প্রতি বছর তাদের আসা-যাওয়া থাকলেও এবার তারা বাসা বেঁধে সংসার পেতেছে গাছে। ডিম পেড়ে বাচ্চা দিয়েছে। তাই মনের সুখে এবার তারা নিশ্চিন্তে সংসার করছে। সকাল-বিকেল তাদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত থাকে গ্রামটি। সূর্য উঠার পরপরই তারা আহারে বেরিয়ে যায়, আবার ফিরে আসে বিকেল নাগাদ। প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা পাখিদের কিচিরমিচির উপভোগ করতে গ্রামটিতে বেড়াতে আসছেন।
নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পূর্বে দিকে গ্রামটির নাম হাতিপোতা দক্ষিণ পাড়া। তৎকালিন জমিদার আমলে হাতি নিয়ে খাজনা আদায় করতে এসে হাতিটি মারা যায়। এরপর হাতিটি এ গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় মাটিতে পুতে রাখা হয়। একারণে হাতিপোতা হিসেবেও এলাকাটি পরিচিত। গ্রামের আক্তার ফারুক নামে এক ব্যক্তির বাগানে বড় গাছ শিমুল, আম ও কড়ই এবং বাঁশ ঝাঁড় রয়েছে। গত ৮-১০ বছর আগ থেকে তার বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বিচরণ শুরু হয়। সেখানে গড়ে ওঠে পাখি কলোনী। যেখানে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের মধ্যে রয়েছে শামুকখোল, সাদা বক, রাতচোরা, পানকৌড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু।
নিরাপদ মনে করে প্রতি বছরের নির্দিষ্ট সময় আসে এবং শীতের সময় চলে যায়। তবে কিছু অংশ সারা বছরই থাকে। এবছর পাখিরা গাছে বাসা বেঁধে সংসার পেতেছে। ডিম পেড়ে বাচ্চা দিয়েছে। সবসময় কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে আছে গ্রামটি। গ্রামের মানুষরাও এখন পাখি প্রেমি হয়ে গেছে। তারা পাখিদের বিরক্ত করে না। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন গ্রামের সকলেই। এছাড়া কাউকে বিরক্ত এবং শিকার করতে দেয়না। পাখি শিকার রোধে গ্রামবাসী নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। ফলে সারা বছরই সেখানে হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটে। গ্রামে প্রবেশে আগে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে -‘পাখি কলোনীসমুহ দেশের সম্পদ, এদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের।’
স্থানীয় গৃহবধু লিমা ও নাজমা বলেন, অতিথি পাখি হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। গরমের সময় আসে। আর শীতের মৌসুমে অধিকাংশ পাখি চলে যায়। তবে প্রতিবারের মতো এবার কোন পাখি চলে যায়নি। গাছে অসংখ্য বাসা বেঁধে বাচ্চা দিয়েছে। ভোর থেকে সকাল এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত থাকে। সূর্য উঠার পরপরই তারা আহারে বেরিয়ে যায় আবার ফিরে আসে বিকেল নাগাদ। তারা যে শামুক খেয়ে খোল ফেলে দেয় নিচে থাকা হাঁস সেগুলো খেয়ে নেয়। বলতে গেলে পাখির ডাকে ভোর হয় এবং ঘুম ভাঙে। প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত হলেও এখন ঠিক হয়ে গেছে।
স্থানীয় মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা এখন বিষয়টি উপভোগ করি। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন পাখি দেখতে আসে। তবে এলাকাটি শহরের কাছে হওয়ায় একটু প্রশান্তি পেতে শহরের মানুষরা বেশি আসেন। আমরা পাখি শিকার রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন জানান, পাখিগুলো যাতে কেউ অবৈধভাবে শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহন করবো। হাতিপোতা গ্রামে নানা ধরনের পাখির কলবরে প্রখরিত থাকে। আর প্রতিদিই দূর দুরান্ত থেকে মানুষ আসে এই গ্রামে যা অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করে। আমাদের পক্ষ যা যা করা সম্ভব আমরা অব্যশই করবো।