উলিপুরে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের গৃহ নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ
সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম বুধবার সন্ধ্যা ০৬:৩৪, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
মুুুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ কুড়িগ্রামের উলিপুরে ‘’ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্প”এর গৃহ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গৃহ নির্মাণে প্রথম শ্রেণির ইট ব্যবহার করার কথা থাকলেও, ব্যবহার করা হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির ইট। প্রকল্পের শুরুতেই এমন অনিয়মের কারণে সরকারের এত বড় মহৎ প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মুজিববর্ষে সব গৃহ ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ঘরসহ ভূমি উপহার দিতে সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। এ প্রকল্পের অধীনে সরকার প্রতিটি ২ কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা গৃহে একটি টয়লেট,একটি রান্নাঘর ও ইউটিলিটি স্পেস নির্মাণের জন্য ১ লাখ ৭১ হজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
জানা গেছে, ৩৯৪ বর্গফুট আয়তনের এ উপজেলায় ২’শ ঘর নির্মাণের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় ৬০ টি ঘর নির্মাণ কাজ চলমান। যা উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে ১৬ শতক সরকারি জমিতে ৮ টি, হাতিয়ায় ২০ শতকে ১০টি,পান্ডুলে ২৬ শতকে ১৩টি, বজরায় ৪০ শতকে ২০টি ও ধামশ্রেনীতে ১৮ শতক জমিতে ৯টি ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ঘরে ৩ ফুট প্রস্থ ৬ ফুট উচ্চতা একটি দরজা ও ৪ টি জানালা থাকবে। ঘর নির্মাণে প্রথম শ্রেণির ইট, দশমিক ৩৬ এমএম টেউটিন, ১ দশমিক ২ এফএম বালু, গাঁথনিতে মর্টার হিসেবে ১ দশমিক ৬ থাকার কথা। কিন্তু নির্মাণের শুরুতেই প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে তৃতীয় শ্রেণির ইট, নিম্নমানের বালু ও সীমিত পরিমাণে সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। থেতরাই ইউনিয়নে নির্মাণাধীন ঘরে দরজা-জানালা লাগানো হয়েছে তা নিম্নমানের। প্রতিটি দরজা ও জানালা ভালো মানের লোহার গ্রিল লাগানোর নিয়ম থাকলেও তা লাগানো হয়নি।যার ফলে এসব ঘরের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়ে উপকারভোগিসহ স্থানীয়রা।এনিয়ে উপকারভোগি ও স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার ধামশ্রেনী,হাতিয়া,পান্ডুল ও থেতরাই ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের স্থানীরা অভিযোগ করে বলেন,কাজ একেবারে নিম্নমানের ইট দিয়ে হচ্ছে, এই ইটের ঘর কয়দিন টিকবে, কে জানে? সম্পূর্ণ টাকা ব্যয়ে যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে অসহায়, দুস্থ ও পুনর্বাসিত ব্যক্তিদের স্বপ্ন শতভাগ পূরণ হতো।প্রকল্প থেকে লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ তাদের।
থেতরাই ইউনিয়নের সুবিধাভোগি নূরনবী মিয়া, রহিমা বেগম, জালাল আহম্মেদসহ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, ইট ও কাজের মান খারাপ হচ্ছে জানালে ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী বলেন এই ঘর সরকার আপনাকে দিবে কিনা এমন গ্যারান্টি কি? যেমন ঘর নির্মাণ করে দিবে তেমনটা নিতে হবে।আরও জানান জোর কিছু বলতেও পারি না, কিছু বললে যদি ঘর না দেয়।এছাড়াও ঘরের চাল তৈরিতে কাঠ বহনের গাড়ী ভাড়া দাবি করেছে উপকারভোগিদের নিকট এমন অভিযোগও রয়েছে।
এব্যাপারে থেতরাই ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি শুধু কাজ দেখতে গিয়েছি যাবতীয় কাজ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) করছেন।
নীতিমালা অনুযায়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে পিআইসির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন র্কমর্কতা (পিআইও), সদস্যরা হলেন সহকারী কমশিনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু সকলের সমন্বয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কাজ করার কথা থাকলওে পিআইসির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন র্কমর্কতা (পিআইও) ক্ষমতাবলে তার পছন্দের লোকজনকে দিয়ে প্রকল্পের কাজ গুলো করাচ্ছেন। যা নিয়ে স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, নীতিমালা অনুযায়ি চেয়ারম্যানরা পদাধিকার বলে কমিটির সদস্য হলেও, কাজ করার সময় তাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। উপজেলায় এমনও ইউনিয়নে উদ্বোধনের পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক জানান,আমাদের করার কিছুই নেই ঠিকাদার যেসব মালপত্র এনে দেয় আমাদের সেই মোতাবেক কাজ করতে হয়।তবে গৃহগুলো নির্মাণে যেসব ইট ব্যবহার করা হচ্ছে তা একেবারে নিম্নমানের।
প্রকল্পের সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজুদ্দৌলার নিকট অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে দাম্ভিকতার সহিত হুমকির মাধ্যমে গালিগালাজ দিয়ে বলেন,প্রকল্পের চাপের কারণে ভাটায় ইট না পেয়ে ৬ হাজার নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে আমরা না সবাই জানে।কত বড় সাংবাদিক হয়েছেন কি করার করেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান,সারাদেশে একযোগে এই প্রকল্পে কাজ হচ্ছে ঘর প্রতি সামান্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকার কাজে অনিয়মের প্রশ্নই আসে না।এমন অভিযোগ এই প্রথম শুনলাম।যদি এমনটি হয়ে থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।