সাঘাটায় কাউন চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষক
আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা রবিবার সন্ধ্যা ০৬:১১, ৯ মে, ২০২১
সারা দেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে গেলেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার উদ্ভাবিত নতুন জাতের বারী কাউন -২ এর ফলন বাম্পার হওয়ায় গাইবান্ধার সাঘাটায় যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা বালু চরে কাউন চাষে কৃষক ঝুঁকে পড়েছে।
গাইবান্ধা কৃষিগবেষণা ইন্সটিটিউট এর সরেজমিন বিভাগের তত্বাবধানে নতুন উদ্যোমে কাউন চাষ শুরু করেছে কৃষক। চরে এখন ব্যাপকভাবে কাউন চাষ করতে দেখা যাচ্ছে।এ বছর সাঘাটায় কাউনের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।
সাঘাটা উপজেলায় যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত চরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,চিনিরপটল, কুমারপাড়া,কালুরপাড়া,হলদিয়া,কানাইপাড়া, গাড়ামারা,দীঘলকান্দী ও পাতিলবাড়ি সহ বিভিন্ন চরের কৃষকরা নতুন উদ্যোমে কাউন চাষ শুরু করেছে।
এক সময় যমুনা নদী ভাঙ্গন আর বন্যার কারণে দরিদ্রসীমার নীচে ছিলো চরাঞ্চলের মানুষের বসবাস। সে সময় এই এলাকাকে মঙ্গাপীরিত অঞ্চল বলা হতো। ততকালী কাউনের চালের ভাত,পায়েস ও পান্তা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো চরাঞ্চলের মানুষ।সেই কাউন এখন আর দরিদ্র মানুষের খাবার নয়, কাইনের চালের পিঠা, পায়েস ও মলা সহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী গ্রাম বাংলার পাশাপাশি শহরের মানুষের সখের খাবারে পরিণত হয়েছে।
এক সময় চরাঞ্চল জুঁড়েই ছিলো শুধূ বালু আর বালু এখানে কোনো ফসল হতো না, কিছু কিছু জমিতে কেবল কাউনের আবাদ হতো তখন চরের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসাই ছিলো কাইনের আবাদ করা আর নদীতে মাছধরা। কালেরবর্তনে পলি পড়ে সেই বালুময় চরাঞ্চলের জমি গুলো এখন ফসল ফলানো উপযোগী হয়ে উঠেছে। চর গুলোতে এখন নানা ধরণের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। ফলে চর এখন যেন চর নেই, সম্ভাবনাময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে চরাঞ্চল।
এর আগে দেশী জাতের কাউনের ফলন কম হওয়ায় দিন দিন কাউনের আবাদ সারা দেশের ন্যায় সাঘাটার চরাঞ্চল থেকেও হারিয়ে যাওয়ার পথে বসেছিলো। কিন্তু বর্তমান কৃষি গবেষণায় নতুন উদ্ভাবিত বারী কাউন -২ জাতের বাম্পার ফলন হওয়ায় চরাঞ্চরের কৃষক এখন আবার কাউন চাষে ঝঁকে পড়েছে।। গাইবান্ধা কৃষিগবেষণা ইন্সটিটিউট এর সরেজমিন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে চলতি বছর এ উপজেলার চরাঞ্চলে কাউনের আবাদ ১ হাজার বিঘা ছাড়িয়ে গেছে।
উপজেলার চিনিরপটল চরের কৃষক আলতাব,সদরুল,আমিনুল সহ অনেকের সাথে কথা তারা জানায়, চরের একজন কৃষক ১৫-২০ বিঘা পর্যন্ত জমি কাউনের চাষ করে থাকেন। এর আগে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা ব্যয়ে দেশী জাতের কাউনের আবাদ করে প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মণ কাউন ফলন হতো । ফলনও কম বাজারে দামও ছিলো অনেক কম। ফলে কাউন চাষে তেমন লাভ না হওয়ায় দিনদিন কাউন চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ছিল তারা।
বর্তমানে একই পরিমান টাকা ও শ্রম খরচ করে বারী কাউন -২ জাতের প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন হয় ১০-১২ মণ। প্রতি মণ কাউন বাজারে বিক্রি হয় ১৬ শত থেকে ১৭ শত টাকায়। খরচও কম, লাভও বেশি ,বাজারে চাহিদাও বেশী এ কারণে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাউনের আবাদ নতুন উদ্যোমে শুরু করেছেন চরের এসব কৃষক। ইতি মধ্যেই চলতি মৈসুমের কাউন কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। চরের উৎপাদিত এসব কাউন কোনো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না, ব্যবসায়ীরা কৃষকের বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এবার কাউনের বাম্পার ফলন ও দাম বেশী পাওয়ায় চাষিদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটেছে।
গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা সরেজমিন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্যাহ আল মাহমুদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিগত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশ কৃষিগবেষণার উদ্ভাবিত রাবী কাউন-২ সহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের চাষ হচ্ছে চরে।
গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা সরেজমিন বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাতের শস্য বীজ ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের কৃষকরা আর্থিভাবে লাভবান হচ্ছে। কৃষি খাত আরো এগিয়ে নিতে গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা সরেজমিন বিভাগের চেষ্টা অব্যহত থাকবে।