মোর ঘরত বন্যার পানি ঢুকচে ২ সপ্তা এংকেরেই আচম, কেউ খোঁচ খবর নেয় না
আসাদ খন্দকার, সাঘাটা, গাইবান্ধা শনিবার রাত ০২:০৭, ২৫ জুলাই, ২০২০
মোর ঘরত বন্যার পানি ঢুকচে। ২ সপ্তা এংকেরেই আচম। কেউ খোঁচ খবর নেয় না। তাই ছোল ও শোয়ামী নিয়্যা রাস্তাত আস্যা পলিতিন দিয়্যা কোন মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিছি। আত হলে অসুকআলা শোয়ামী নিয়্যা কষ্ট করান নাগে।
এভাবেই আবেগপ্লুত হয়ে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়েই এ কথা গুলো বলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল গ্রামে বন্যায় রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া সুবাশের স্ত্রী নিরতি রানী।
এছাড়াও বিধবা বুলি বেওয়া জানান, বন্যার পানি মোর ঘরত ঢুকছে বাবা, মানষের বাড়িত মুই কাম করে খাম। ২ সপ্তা ধরে কাম করব্যার যাবার পাচ্চম না। তোমাক দেকে মুই আনা অ্যাগে আসলুম। একন পযন্ত মোক কোন মেম্বর, চেয়ারম্যান কিচ্চুই দেয় নি।
শুধু নিরতী রানী ও বিধবা বুলি বেওয়াই নয়, ছবিনা বেগম, চাম্পা বেগম, রুপিয়া বেগম, সবুনা বেগম, কাকলী সহ অনেকেই বন্যায় পানিবন্দি হয়ে রাস্তা কিংবা অন্যের বাড়ী, উঁচু জায়গা, বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের ঘরে দু’বেলা খাওয়ার মতো কোন খাদ্য নাই। রাস্তায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই দৌঁড়ে ছুটোছুটি করে চলে আসে একটু ত্রাণের আশায়। সবচেয়ে বন্যায় বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুদের। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বানভাসীরা। উঁচু রাস্তা কিংবা বাঁধে গাদাগাদি করে রাখছেন গবাদিপশু। অনেকেই গবাদিপশুর খাদ্য নিয়েও পড়েছেন বিপাকে।
প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ব্র²পুত্র ও যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার ফলে এসব দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন বানভাসী পানিবন্দি মানুষেরা। ৩য় দফা বন্যায় সাঘাটা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহরুপ ধারণ করেছে। উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ০৮টি ইউনিয়নের ৫০ টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ২ সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে পাহাড়ী ঢল নেমে এসে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা, করতোয়া, বাঙ্গালী, আলাই, কাটাখালি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সাঘাটা উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশ সহ ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
প্লাবিত গ্রাম গুলো হলো- হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বেড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, পাতিলবাড়ি, গুয়াবাড়ি, কালুরপাড়া, কানাইপাড়া, কুমারপাড়া, জুমারবাড়ি ইউনিয়নের কাঠুর, থৈকরেরপাড়া, পূর্ব আমদিরপাড়া, ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, খামার পবনতাইড়, সাঘাটা ইউনিয়নের হাটবাড়ি, গোবিন্দী, বাঁশহাটা, দক্ষিণ সাথালিয়া, হাসিলকান্দি, ভরতখালি ইউনিয়নের বরমতাইড়, ভাঙ্গামোড়, কামালেরপাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়ী, কিংকরপুর, কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর, কচুয়া, গাছাবাড়ী ও বোনারপাড়া ইউনিয়নের বাটি, শিমুলতাইড়, দূর্গাপুর, রাঘবপুর সহ নিন্মাঞ্চলের ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার নিন্মআয়ের মানুষেরা বেকার হয়ে পড়ায় তাদের মধ্যে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, তার ইউনিয়নের হাটবাড়ি, গোবিন্দী, বাঁশহাটা, দক্ষিণ সাথালিয়া, হাসিলকান্দি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লোকজন পানিবন্দী হয়ে বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে দিন মজুররা বেশী সমস্যা রয়েছে, তাদের কাজকর্ম না থাকায় পরিবারে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারী ভাবে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
সাঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিঠুন কুন্ডু জানান, সরকারীভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।