পরিবেশ সচেতনতায় বড়লেখায় ম্যারাথন দৌড়
মোঃইবাদুর রহমান জাকির শনিবার রাত ০১:২৫, ৬ নভেম্বর, ২০২১
বিভিন্ন বয়সের একদল নারী-পুরুষ টিলা ও চা-বাগানের পথে ছুটছেন। বিষয়টি এলাকার জন্য সম্পূর্ণ নতুন। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটা ছিল চমকে ওঠার মতো উপলক্ষ। দৌড়ে চলা মানুষের গন্তব্য কোথায়? সাজ সকালে যাদের ঘুম ভেঙেছে, অনেকেরই হয়তো জানা নেই, তারা শুধু পথের পাশে দাঁড়িয়ে অলোপভরা চোখে দেখছেন, লোকজন দৌড়াচ্ছেন।
এটা ছিল প্রান্তিক জনপদ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ‘মাধবকুণ্ড ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ে’র ছবি। ‘রক্ষা করি পরিবেশ, গড়ি সোনার বাংলাদেশ’ স্লোগানে গতকাল শুক্রবার সকালে যৌথভাবে এই ম্যারাথনের আয়োজন করে সিলেট রানার্স সোসাইটি ও বড়লেখা ওয়ারিয়র্স। সার্বিক সহযোগিতা করেছে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন। দৌড়ের পথে স্বেচ্ছাশ্রমে পথনির্দেশ ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি করেছেন দুর্বার মুক্ত স্কাউট বড়লেখার সদস্যরা। মাধবকুণ্ড ও বড়লেখা উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করতেই এই ম্যারাথনের আয়োজন।
আয়োজক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাধবকুণ্ড ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়কে উপলক্ষ করে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই উৎসবের আমেজে অংশগ্রহণকারী ও আয়োজকেরা। এতে শুধু বৃহত্তর সিলেটেরই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দৌড়বিদেরা। গত ৫ অক্টোবর শেষ হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধন। সেই থেকেই দৌড়ের উৎসবটিকে সম্পন্ন করতে আয়োজকদের চলেছে সময় গণনা। সীমান্তবর্তী একটি প্রান্তিক জনপদে এ রকম আয়োজন একেবারেই নতুন নত্বের জন্মদেয়। এ নিয়ে সবার মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। উৎসবকে সফল করার বাড়তি তাগিদ ছিল সবার প্রাণে।
সকাল সাড়ে ছয়টায় বড়লেখা থানার সামনে থেকে শুরু হয় ম্যারাথন। এরপর দুই পাশের সবুজে মোড়ানো টিলা ও চা-বাগানের পথ মাড়িয়ে দৌড়বিদেরা আরও গভীর সবুজের দিকে ছুটে গেছেন। তাদের পা গিয়ে থেমেছে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান পাথারিয়া পাহাড়ের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায়, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের প্রবেশের ফটকে। দৌড়ে পুরুষের মধ্যে প্রথম হয়েছেন খুলনার আসিফ বিশ্বাস। নারীদের মধ্যে শ্রীমঙ্গলের মুভি সূত্রধর। ম্যারাথনে সারা দেশ থেকে অংশ নেন ১৯৭ জন নারী ও পুরুষ।
সকাল সাড়ে আটটায় মাধবকুণ্ডে জেলা পরিষদের বাংলো প্রাঙ্গণে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মেডেল বিতরণ করেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, সিলেট রানার্স সোসাইটির অ্যাডমিন আতিকুর রহমান, বড়লেখা ওয়ারিয়র্সের সভাপতি ফরহাদ হোসেন প্রমুখ। পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া একটি উজ্জ্বল সকাল স্মৃতিতে নিয়ে ফিরে যান অংশগ্রহণকারীরা। ইউএনও তার বক্তব্যে আরও বড় পরিসরে মাধবকুণ্ড থেকে হাকালুকি হাওর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড় আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন আয়োজকদের।
বড়লেখা ওয়ারিয়র্সের সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই প্রথম বড়লেখায় এ রকম একটি আয়োজন হয়েছে। অনেক বেশি আনন্দ করেছি আমরা। গান, হইচই করে উৎসবের মতো আমাদের সময় কেটেছে। আমাদের এই আয়োজনের লক্ষ্য ছিল মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে সারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা। এলাকার পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে সচেতন করে তোলা।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এবারই আয়োজন শেষ না। এটাকে প্রতিবছর নিয়মিত করার ইচ্ছা আছে আমাদের।’