ধর্মপাশায় বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর অর্থসহায়তা ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ কি এক ইউনিয়নেই?
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ) শনিবার বিকেল ০৫:১৬, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষজনদের নামে বেসরকারি সংস্থা ওয়াল্ডভিশন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে একতরফা সহায়তা কার্যক্রম চলে আসছে। এ উপজেলায় কর্মরত বেসরকারি সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধি আর্থিক সুবিধা নিয়ে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলাটি হাওর বেষ্ঠিত উপজেলা। এখানে রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন। এখানকার ইউনিয়ন গুলো হচ্ছে ধর্মপাশা সদর, পাইকুরাটি, সেলবরষ,জয়শ্রী,সুখাইড় রাজাপুর উত্তর,সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ,মধ্যনগর ,চামরদানী,বংশীকুণ্ডা উত্তর ও বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ। এই ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে হাওরবেষ্ঠিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সুখাইড় রাজাপুর উত্তর,সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ, চামরদানী ও জয়শ্রী ইউনিয়ন। এই চারটির মধ্যে হাওরবেষ্ঠিত ইউনিয়ন হিসেবে প্রথম স্থানে রয়েছে সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন। বছরের ছয়মাস পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে কাটে এখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবন। এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষজনই একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এই একমাত্র ফসলকে ঘিরেই ছেলে মেয়ের লেখাপড়া,বিয়ে ,সামাজিক নানা আচার অনুষ্ঠান এই কৃষির আয় থেকেই ব্যয় করা হয়। সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় নানাদিক দিয়ে এই উপজেলাটি অবহেলিত। একদিকে করোনা ভাইরাস এবং অপরদিকে তিনদফা বন্যায় এখানকার মানুষজনদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এমনি একটি সময়ে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মানুষজনদের মধ্যে সংস্থার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আর্থিক সুবিধা নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে একক ভাবে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সম্প্রতি তিনদফা বন্যায় ও করোনার কারণে এই ইউনিয়নটিকে দরিদ্র এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে ওই ইউনিয়নের ৯৬৬টি পরিবারের মধ্যে তিন হাজার ৫৫টাকা করে ও একই ইউনিয়নের ৬১০টি পরিবারকে হাইজীন কীট এবং ৫০০টি পরিবারের মধ্যে ওয়াশ সামগ্রী বিতরণ করেছে বলে সংস্থাটির স্থানীয় কর্তপক্ষ দাবি করেছে। তবে এই ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবতার কতটুকু মিল আছে তা একমাত্র সংস্থার কর্মকতরাই ভালোভাবে বলতে পারবেন।
ওই বেসরকারি সংস্থাটি তাঁদের নিজেদের সংস্থার প্রচার চালাতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মর্কতা ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে এসব বিতরণে স্বল্প কয়েকজন নারী পুরুষকে উপস্থিত করে এই কার্যক্রমের সূচনা করা হয়। বাস্তবে এসব অর্থ ও উপকরণ সুবিধাভোগীদের মধ্যে পৌঁছেছে কী না তা অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে।
উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ( ইউপি) চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ বলেন,উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে হাওরবেষ্ঠিত ইউনিয়ন হিসেবে আমার ইউনিয়নটি প্রথম স্থানে রয়েছে। ফলে শিক্ষা,চিকিৎসা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বেশ পিছিয়ে রয়েছে। শুনেছি, বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ হতদরিদ্র, দরিদ্র মানুষজনকে নিয়ে কাজ করছে। নিয়ম অনুযায়ী আমার ইউনিয়টি এতে প্রাধান্য পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সংস্থাটি সহায়তা প্রদানের সঠিক স্থানটি নির্ধারণ করতে পারেনি। এতে করে আমার ইউনিয়নের হত দরিদ্র ও দরিদ্র্র মানুষজন সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি।
বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ডভিশন বাংলাদেশ এর ধর্মপাশা উপজেলার এরিয়া পোগ্রাম ম্যানেজার সাগর জন কস্তা বলেন, আমাদের সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব গুজব ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা কারও কাছ থেকে কোনোরকম আর্থিক সুবিধা নিইনি। এনজিও ব্যুরো থেকে এই উপজেলার একমাত্র জয়শ্রী ইউনিয়নেই কাজ শুরু করার অনুমতি আমরা পেয়েছি। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতে পর্যায়ক্রমে অর্থ সহায়তা ,হাইজীন কীট ও ওয়াশ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন, এই বেসরকারি সংস্থাটির কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে অবশ্যই সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।