চেয়ারম্যানের নির্দেশে বৃদ্ধকে পিটিয়ে আহত করলো গ্রাম পুলিশ
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোমবার সকাল ১১:৪৮, ১২ জুন, ২০২৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রাম পুলিশরা এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১১ জুন) বেলা ১১টায় উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামে এই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ।
মারধরের স্বীকার বৃদ্ধ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামের মৃত রইসুদ্দিন মন্ডলের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন (৬২)।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতের স্বজন সূত্রে জানা যায়, নিজ বাসার টিউবওয়েলসহ বাড়ির সীমানা দেয়াকে কেন্দ্র করে ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোয়াজ্জেমের বাসায় কয়েকজন গ্রাম পুলিশ সদস্যকে পাঠায়। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদে যেতে রাজি না হওয়ায় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা তাকে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এর এক পর্যায়ে গ্রাম পুলিশদের লাঠির আঘাতে মোয়াজ্জেম মাথা ফেটে মাটিতে পড়ে গেলে তাকে জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যায় গ্রাম পুলিশরা।
পরে তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে তার স্বজনরা। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
এ বিষয়ে আহত মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ২০০৬ সালে একটি সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয় আমার বাসায়। এরপর থেকে আমার পরিবারসহ প্রতিবেশীরা পানি ব্যবহার করে। কিন্তু হঠাৎ করেই ছেলেদের জমিজমা ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়ার পর সেখানে ঘর নির্মাণ করা হয়। এনিয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে আমাকে জোরপূর্বক বাসা থেকে নিয়ে যেতে চাই। আমি যেতে না চাইলে গ্রাম পুলিশ সদস্যরা লাঠি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এমনকি বেধড়ক মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চেয়ারম্যান ফাঁকা কাগজে আমার দুইটি স্বাক্ষর নেন। পরে খবর পেয়ে আমার স্বজনরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
আহতের ভাতিজা আমিনুল ইসলাম জানান, ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্য নিরঞ্জন কর্মকার, আনারুল ইসলাম, জিতেন, আব্দুল আলিম, জালাল, ভুটু লাল, বিবেক সিংহ, আলাল উদ্দিন চাচা মোজাম্মেলকে মারধর করে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা এই মুহুর্তে আতঙ্কিত, নিরাপত্তাহীনতা ও হুমকির মধ্যে রয়েছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, মারধরের ঘটনাটি সঠিক নয়। আমার নির্দেশে গ্রাম পুলিশরা মোজাম্মেলকে ইউনিয়ন পরিষদে আসার জন্য বলতে গেলে উল্টো গ্রাম পুলিশ সদস্যদেরকেই মারধর করেছে তার পরিবারের লোকেরা।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, এ বিষয়ে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।