চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁকা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহত
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বুধবার রাত ০৮:৫১, ২২ জুন, ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ গুলি চালিয়েছে। আর গুলিতে দুলাল হোসেন (৩৩) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (২২ জুন) রাত ৩টার দিকে সীমান্তের ভারতীয় অংশে দুলাল নিহত হয়।
নিহত দুলাল শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দশরশিয়া গ্রামের মো. আলতাফ হোসেনের ছেলে।
নিহত দুলালের স্ত্রী শাহিদা খাতুন জানান, আমার স্বামী মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যার পর কয়েকজনের সাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে শুনেছি গভীর রাতে সীমান্তে গুলির শব্দ পেয়েছে গ্রামবাসী। পরে জানতে পারি বিএসএফের চাঁদনীচক ফাঁড়ির জোয়ানদের গুলিতে আমার স্বামী মারা গেছেন। ভারতের এক কিলোমিটার ভেতরে তার লাশ রয়েছে।
নিহত দুলালের আত্মীয় তরিকুল ইসলাম বলেন, এলাকার মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনরা বুধবার সকালে বিজিবির ওয়াহেদপুর কোম্পানি ফাঁড়িতে গিয়ে খবর দেয়। আমরা দুলালের মরদেহ ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করি বিজিবির কাছে। পরে বিজিবির ওয়াহেদপুর কোম্পানি ফাঁড়ির একটি দল দুলালের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জানান, নিহত দুলালের সাথে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় আরও দুই ব্যক্তি তার সাথে গিয়েছিলো। শুনেছি তারা ফিরে এসেছে। কিন্তু তারা ফিরে আসলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, নিহত দুলালের স্ত্রী ও স্বজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিহত দুলালের মরদেহ সীমান্ত লাইন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভেতরে ভারতের অভ্যন্তরে পশ্চিমবঙ্গের সুতি থানার চাঁদনীচক এলাকার মাঠের ভেতরে পড়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, নিহত দুলাল হোসেন একটি মাদক সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। একটি মাদক চোরাচালান মামলায় এক বছর কারাগারে থেকে সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পান তিনি। আর জামিনে মুক্ত হয়েই তিনি আবারও মাদক কারবারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তার নামে আরও কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা দুলাল তার অপর দুই সহযোগীর সঙ্গে গভীর রাতে মাদকের চালান নিয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী হাসেনপুর থেকে বাংলাদেশে ফিরছিল। বিএসএফ চাঁদনীচক ক্যাম্পের জোয়ানরা গুলি চালালে দুলাল গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তবে তার অপর দুই সহযোগী পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আমার সভা ছিল। এর মধ্যে দুলালের আত্মীয়-স্বজনরা বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। এখনও (বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত) মরদেহ ফেরত পাওয়া যায়নি।
তবে পাঁকার ওয়াহেদপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কোনো বাংলাদেশির হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শাহেদ। মুঠোফোনে তিনি বলেন, সীমান্তে কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পায়নি। তবে এক ব্যক্তির পরিবার তাদের স্বজন নিখোঁজ হবার বিষয়টি আমাদেরকে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে আমরা বিষয়টি অনুসন্ধান করছি।