চাঁপাইনবাবগঞ্জে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রকল্প পরিদর্শন
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ রবিবার রাত ০১:৫৭, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেছেন, কৃষি ঋণের একটি অংশ হল মৎস্য ঋণ। দেশের বানিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো তাদের ব্যবসার স্বার্থে মৎস্য চাষীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান না করে নানারকম অনিয়ম-দূর্নীতি করেন। ভবিষ্যতে আর এমন অনিয়ম থাকবে না। এ লক্ষ্যে সরকার ব্যাংকগুলোর সাথে আলোচনা করেছে। ব্যাংকগুলো এখন এ বিষয়ে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। প্রযুক্তি ভিত্তিক মৎস্য চাষে ব্যাংক ঋণ প্রদাণ আরো সহজ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মৎস্য চাষে আর কোন অন্তরায় থাকবে না বলেও জানান তিনি।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার এলাকায় অবস্থিত দেশের প্রথম ইন পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম-আইপিআরএস পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্দ্যোগে করা মাছ চাষের নবাব হাইটেক মৎস্য খামার পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব আরও বলেন, আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছ চাষ অত্যন্ত নিরাপদ। ফলে মাছে দেশীয় বাজারে যেমন প্রসার ঘটবে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও মাছ রপ্তানিতে এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর তাই আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছ চাষের এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে পারলে মৎস্য চাষীরা লাভবান হবেন। তবে ব্যয়বহুল হওয়ার কারনে সবার পক্ষে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা সম্ভব না হলেও মাছ চাষীদের এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আমরা আহবান জানাই।
সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, আইপিআরএস পদ্ধতিতে রেসওয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে চ্যানেলগুলোয় কৃত্রিম স্রোত তৈরি করা হয়। ফলে প্রবাহমান পানিতে ২৪ ঘণ্টা অধিক অক্সিজেন তৈরি হয়। যাতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ গুণ বেশি মাছ বসবাস করতে পারে। আর জলাশয়ের মাছেরা প্রতিটি চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উন্নত ও পুষ্টিকর খাবার পায় ও পাশাপাশি অবাধে বিচরণ করতে পারে। এতে একেকটি চ্যানেলে রাখা যায় একেক ধরনের মাছ। প্রযুক্তির সাহায্যে খাবার সরবরাহ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা হওয়ায় মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং কোনো রোগবালাইও তেমন হয় না।
এ বিষয়ে নবাব হাইটেক মৎস্য খামারের মালিক ও উদ্যোক্তা আকবর হোসেন বলেন, ৬ শত বিঘা জলাশয়ে যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব, আইপিআরএস প্রযুক্তিতে ৬০ বিঘার খামারে সেই পরিমাণ মাছ উৎপাদিত হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি কেটে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষের একটা প্রবণতা চলছে। এতে কৃষিপণ্য বা ফসল উৎপাদনের জমি কমে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে যদি আইপিআরএস প্রযুক্তিতে খামার গড়ে তোলা হয় তাহলে কম জায়গাতেই বেশি মাছ পাওয়া যাবে। এতে ফসলি জমি নষ্ট করে হাজার হাজার পুকুর তৈরির দরকার পড়বে না।
পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় মৎস্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম প্রজেক্টের আওতায় মৎস্য চাষীদের মাঝে পিকআপ ভ্যান হস্তান্তর করেন। শেষে শিবগঞ্জের পাগলা নদীতে মৎস্য অভয়ারণ্য পরিদর্শন করেন সচিব।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রউফ, রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণী সম্পদের পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন, মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ ও পরিকল্পনা) মো. সাহেদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, মৎস্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম প্রজেক্টের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রুহুল আমীনসহ নবাব হাইটেক মৎস্য খামারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মাছ চাষে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় ২০১৭ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষীর পুরস্কার লাভ করেন নবাব হাইটেক মৎস্য খামারের মালিক আকবর হোসেন।