চাঁপাইনবাবগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম রাতেই দুই প্রার্থীর অফিস ভাংচুর
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বৃহস্পতিবার রাত ১০:৫৪, ২৮ অক্টোবর, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের প্রথম রাতেই দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। বুধবার দিবাগত গভীর রাত দেড়টার দিকে বৃহস্পতিবার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড নওদা-আদিবাসী পাড়ায় অফিসে ভাংচুর চালানো হয়৷ এ সময় রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহা. তোফিজুল ইসলাম ও স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.মনিরুজ্জামান সোহরাবের একই মোড়ে থাকা দুটি অফিস ভাংচুর করে দূর্বৃত্তরা।
এ সময় নির্বাচনী প্রচারণায় বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে উদ্বোধন করা দুটি অস্থায়ী অফিসের পোস্টার, ব্যানার ও দড়ি ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশকে জানিয়েছে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন ক্ষিপ্ত রয়েছে এবং এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহা. তোফিজুল ইসলাম বলেন, রাত ৩টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীরা অফিস ভাংচুরের বিষয়টি আমাকে মুঠোফোনে জানায়। সকালে এসে দেখি ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়েছে। পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। কে বা কারা করেছে তা আমি বা আমরা জানিনা। রহনপুর ইউনিয়নে গত কয়েক দশক ধরে আওয়ামীলীগেরই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এতেই আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্নিত হয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতেই রাতের অন্ধকারে এমন গর্হিত কাজ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।
আরেক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান সোহরাব এ বিষয়ে বলেন, একই জায়গায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিস ভাংচুর করা অবশ্যই ষড়যন্ত্রের অংশ। আইন-শৃংখলা বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এর সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করছি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনেই এমন ঘটনা প্রার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা ও মনে শঙ্কা তৈরি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সেভেরিস সরেন বলেন, রাত ১২টা পর্যন্ত আমি ও দুই প্রার্থীর লোকজন অফিসে বসে কথা বলেছি। পরে বাড়ি যাবার পর শুনতে পেলাম এমন হামলা হয়েছে। সকালে এসে অফিসে দেখি ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, সারাদিন সকলে সুষ্ঠুভাবে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে। অন্য প্রার্থীর লোকজনের সাথে কোন প্রকার ঝামেলা হয়নি। কিন্তু কি থেকে কি হলো তা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা।
দুটি অফিসের কাছেই দোকান রয়েছে আব্দুল খালেকের। তিনি জানান, দোকান লাগিয়ে যাবার পর রাত ২টার পরে শুনতে পেলাম কে বা কারা অফিস দুটিতে ভাংচুর চালিয়েছে। যেহেতু গভীর রাতে কাজটি করা হয়েছে, সেহেতু কে বা কারা এটি করেছে এটি কেউই দেখতে পায়নি।
রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আল শফি আনসারী বলেন, গত ৪০ বছরে জাতীয় ও বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি৷ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ ও প্রশ্নবিদ্ধ করতেই কুচক্রী মহল রাতের অন্ধকারে এমন কাজ করেছে। তবে এমন কর্মকান্ড ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার ষড়যন্ত্র কোনভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না।
রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতিকের ওবাইদুর রহমান জানান, দুইজন প্রার্থীর অফিস ভাংচুরের ঘটনা শুনেছি। কে বা কারা এমন কাজ করেছে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়।
গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, একই জায়গায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিস ভাংচুর করা হলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহা. তোফিজুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগে কে বা কারা এমন করেছে তার কোন উল্লেখ নেই। রাতের অন্ধকারে ভাংচুর করা হয়েছে ফলে বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারন করেছে। আরেক প্রার্থী মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গোমস্তাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস মুঠোফোনে জানান, দুই প্রার্থীর মৌখিক অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে আগামীতে এমন কাজ যাতে না হয়। এছাড়াও থানায় কারো নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ সে বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, গোমস্তাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদসহ দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশের ৮৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে ২৫ জন, ইউপি সদস্য পদে ২৭৪ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য পদে ১০৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ১৭ অক্টোবর, মনোনয়নপত্র বাছাই হয়েছে ২০ অক্টোবর, বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তি হয় ২৪ ও ২৫ অক্টোবর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার হয় ২৬ অক্টোবর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় ২৭ অক্টোবর। গোমস্তাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৪৬ জন।