চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১ম জাতীয় পরিবেশ পদক অর্জন করলেন দাউদকান্দির মতিন সৈকত
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার,দাউদকান্দি,কুমিল্লা রবিবার ১২:০২, ১২ জুন, ২০২২
পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে প্রথম জাতীয় পরিবেশ পদক অর্জন করেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি আদমপুরের মতিন সৈকত। ২০২১ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাক্তিগত ক্যাটাগরিতে দেশ সেরা একক ব্যক্তি নির্বাচিত হন মতিন সৈকত। ৫ জুন আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সন্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে জাতীয় পরিবেশ পদক প্রদান করেন।
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী’র পক্ষে জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২১ মতিন সৈকতের হাতে তুলে দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ সাহাব উদ্দিন এমপি, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ব্যবহার ও সম্প্রারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাত থেকে মতিন সৈকত ২০১০ এবং ২০১৭ সালে দুই বার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক গ্রহন করেন। মতিন সৈকত একজন বহুমুখী সৃজনশীল উদ্ভাবক-উদ্যোক্তা। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাক্তিগত ক্যাটাগরিতে ছয় বার সরকারিভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে শীর্ষস্থান অর্জন করেন। মতিন সৈকত ১৯৮৭ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি’র অভিনন্দন পত্র পান। তিন দশকের বেশি সময় ধরে কৃষি, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টান্ত স্হাপন করেন মতিন সৈকত। তাকে নিয়ে ‘অব দ্যা বেটেনটেক দি ক্রপ ক্রুসেডার, এরিয়েল প্রেট্রিয়ট, এম্যান টুবিফলোইড, এন লাইটেড মতিন সৈকত, মতিন সৈকত এরিয়েল ফ্রেন্ড অব ফারমার্স ইন কুমিল্লা শিরোনামে অভিহিত হয়েছেন। শাইখ সিরাজ, রেজাউল করিম সিদ্দিক, রামেন্দু মজুমদার, মুন্নী সাহা, প্রভাষ আমিন, সাদিয়া ওহাব-রোম্মান রশিদসহ অনেকে মতিন সৈকতকে নিয়ে টেলিভিশন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। বিবিসি টেলিভিশন মতিন সৈকততের একাধিক তথ্য চিত্র সম্প্রচার করেছে।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সারোয়ার জামান বলেন, আদমপুর গ্রামের পরিবেশ যোদ্ধা মতিন সৈকত উপজেলার কৃষকদের খুব আপনজন। সরকারের পাশাপাশি তৃণমূলে কৃষকের পাশে থেকে তিনি সব সময় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। তিনি ৩০ বছর ধরে নাম মাত্র মূল্যে মাত্র দুইশ টাকায় বিঘা প্রতি সেচ ব্যবস্থা করে কৃষকদের সেবা দিয়ে আসছেন। তিনি কৃষকদের যেভাবে সংগঠিত করে তাদের সহযোগিতা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিনুল হাসান বলেন, মতিন সৈকত দাউদকান্দি উপজেলার গর্ব। পরিবেশ সচেতন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে তার উদ্যোগসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মোহাম্মদ আলী সুমন উল্লেখ করেন, মতিন সৈকত কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়নে ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশব্যাপী দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন। বিষমুক্ত ফসল, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন, খাল-নদী পূনঃখনন, বন্য প্রাণীসহ পাখি উদ্ধার ও অবমুক্ত, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুমুখী সামাজিক আন্দোলন করে যাচ্ছেন। মহাসড়কের দুই পাশের ময়লা আবর্জনা, শহর-নগরের বর্জ্যকে রুপান্তরিত করে সিটিজেন ফার্টিলাইজার বা নাগরিক সার তৈরি করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। কালাডুমুর নদী পূনঃখনন মতিন সৈকতের আন্দোলনের ফসল। কৃষি, পরিবেশ, সামাজিক উন্নয়নে নিবেদিত মতিন সৈকত।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিশিষ্ট সমাজ বিশ্লেষক, প্রযুক্তিবিদ অশোক কুমার সিনহা বলেন, মতিন সৈকত খুব ভালো কাজে জীবনকে অর্থবহ রেখেছেন। চারিদিকের প্রাকৃতিক দূষণ, সামাজিক দূষণ, রাজনৈতিক দূষণের মধ্যেও তার মত মানুষ’রা ভরসা। পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য থাকুক এর থেকে বড় চাওয়া আর কি থাকতে পারে। আর মানুষ তো একক নয়, আছে পরিবার, সমাজ, দেশ, প্রকৃতি, জীবজন্তু-পাখি, সমগ্র প্রাণী জগত। প্রত্যেকে ভালো থাকলেই সবাই ভালো থাকবে, আলাদাভাবে কারও ভালো থাকা সম্ভব নয়। মতিন সৈকতের নদী-খাল বাঁচানোর লড়াই পরিবেশ আন্দোলনের এক গৌরবজনক অধ্যায়। তাকে দেখে নদীমাতৃক দুই বাংলার মানুষ নদী-খাল বাঁচানোর লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত হোক।
জাতীয় সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল অবঃ মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূইয়া বলেন, মতিন সৈকত দুই দশকের বেশি সময় ধরে কৃষি পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে জাতি গঠনে অবদান রাখছেন।
পরিবেশ মন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং পরিবেশ সচিব স্বাক্ষরিত সনদে উল্লেখ করা হয়-পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ জনাব এম, এ মতিন (মতিন সৈকত) সাং-আদমপুর, ডাকঘর-রায়পুর, উপজেলা-দাউদকান্দি, জেলা -কুমিল্লা-কে জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২১ প্রদান করা হলো।ভবিষ্যতেও পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধে জনাব এম, এ মতিন (মতিন সৈকত) আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এই কামনা করি।