মীর এম ইমরান,মাদারীপুর বুধবার রাত ০৮:১৫, ১২ মে, ২০২১
শত চাপ মাথায় নিয়েও ঘরে ফেরা হলো না ছয় পরিবারের।বুধবার (১২ মে) দুপুরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরূটের পদ্মানদীতে একটি রোরো ফেরিতে আসছিল কয়েক হাজার যাত্রী। ফেরির খোলা জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রখর রোদের তাপে ফেরিতে থাকা হাজার হাজার যাত্রী ছয় ঘন্টার মত সময় ফেরীতে অবস্থান করায় যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে আসা মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েন, ফেরীতে থাকা হাজার হাজার যাত্রীদের ভিড়ে দুইজনের মৃত্যু দেহ দেখা মেলে, পাশাপাশি অসুস্থ অবস্থায় আরো দুই জনের মৃত্যু হয়। শতাধিক যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পরে। পানির পিপাসা আর গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকেন তারা। ওই ফেরিতে পার হওয়া একাধিক যাত্রীর বর্ণনা ছিল এমনই।
ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাটে ভিড়লে ঐ যাত্রীদের মধ্যে দুইজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় আরো দুইজন ফেরীঘাটে আসা মাত্রই মারা যায়। পানির জন্য হাহাকার করে কর্তব্যরত কেউ তখন এগিয়ে না আশায় এ দুজনের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ জানান ফেরীতে থাকা যাত্রীরা। এছাড়া সকাল ১১ টায় পন্টুনে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। অসুস্থ অর্ধশতাধিক যাত্রীকে দ্রম্নত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিতে নেওয়া হয়েছে।
যাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে শিমুলিয়া থেকে রোরো ফেরি এনায়েতপুরীতে উঠেন কমপক্ষে তিন হাজার যাত্রী। এনায়েতপুরী ফেরিটি মাঝপদ্মায় যাওয়ার পরে তীব্র গরমে ফেরির ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এনায়েতপুরী ফেরিটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে ভিড়লে দেখা যায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। ভিড়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে ফেরি যখন ঘাটে ভিড়ে তখন হাজার হাজার মানুষে নামতে শুরু করে। এ সময়ই অসুস্থ লোকগুলো চাপে পড়ে মারা যায়। অসুস্থ হয় পরে অনেকে। তাদের পিকআপে ভ্যানে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে এক কিশোর, দুইজন নারী ও দুইজন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বালীগ্রাম এলাকার নিপা আক্তার (৩৪) এবং শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলিকা প্রসাদ এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আনচুর মাতুব্বরের (১৪) পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
মৃত নিপা আক্তারের ছেলে রিফাত হোসেন (১৪) কান্নারত অবস্থায় জানান, তার মা ফেরিতে থাকার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে ফেরি যখন ঘাটের ভিড়ে তখন লোকজন নামতে শুরু করে। এসময় সেও ব্যাগ হাতে নেমে আসে। পন্টুনে নামার পর তার মাকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে ভিড়ের মধ্যে। লোকজন নেমে গেলে ফেরিতে ডুকে মৃত অবস্থায় তার মাকে পড়ে থাকতে দেখে।
বজলুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, ফেরিতে প্রচুর ভিড়। ফেরির বেশিরভাগ যাত্রী গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় চার ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকে ফেরি বাংলাবাজার ঘাটে যাওয়া আগেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। লোকজনের ভিড়ে আমরা প্রায় শ্বাস নিতে পারছিলাম না। তার ওপর রোদের কড়া তাপ। অনেকেই পানির জন্য চেঁচামেচি করছিল।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, লোকগুলো হিটস্ট্রোকে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ প্রচুর ভিড় আর তীব্র গরম রয়েছে। এ কারণেই এক কিশোর, ২ নারী ও ২ পুরুষ যাত্রীর মৃত্যু হয়।অসুস্থ হয়ে পড়ে অর্ধশতাধিক। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।