বাইডেন-ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণী মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচন
নিজস্ব প্রতিনিধি মঙ্গলবার রাত ০৯:১০, ৮ নভেম্বর, ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যবর্তী নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট, তার দলের ভাগ্য নির্ধারণের পাশাপাশি পুরো জাতির দিকনির্দেশনার ওপর এক বিরাট প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চার বছর মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে যেহেতু এই নির্বাচন হয়, তাই একে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়। ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা যাচাইয়েরও অন্যতম মাধ্যম এটি। তবে কেবল কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের নির্বাচিত করার ভোটই হয় না। কালকের নির্বাচনে গভর্নর এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পদেও ভোট হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৩৫টির ভোট হবে কাল। আর প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সবকয়টিতেই ভোটাভুটি হবে। ৫০ রাজ্যের মধ্যে ৩৬টিতে গভর্নর পদে ভোট হবে। আর ১৯ জন নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হবেন।
বর্তমানে সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৫০টি ডেমোক্র্যাটদের এবং ৫০টি রিপাবলিকানদের। তবে ভাইস প্রেসিডেন্টের ভোটটি ডেমোক্র্যাটরা পাওয়ায় বিল পাশ হয়ে যায়। প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের মধ্যে ২২০টির নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতে এবং ২১২টি নিয়ন্ত্রণ করছেন রিপাবলিকানরা। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যে কোনো দলকে ৫১ টি আসনে জয় পেতে হবে। রিপাবলিকানরা ২০টি আসনে এবং ডেমোক্র্যাটরা ১২টি আসনে এগিয়ে। জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে তিনটি আসন। প্রতিনিধি পরিষদে ২১৮টি আসনে জয় পেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যায়।
বিবিসি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন মধ্যবর্তী এই নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে।
ইতোমধ্যে ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। গতকাল সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি বিশাল ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন।
ফলে এই মধ্যমেয়াদী নির্বাচন তার হাতকে হয় শক্তিশালী করবে বা তার সব আশা গুঁড়িয়ে দিতে পারে। যদিও এই নির্বাচনে তার ওপর কোন ভোট হচ্ছে না, কিন্তু তার নির্বাচিত কয়েক ডজন প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রবীণ রিপাবলিকান নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও প্রথাগত রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জিয়ার প্রাক্তন রাগবি খেলোয়াড় হার্শেল ওয়াকার, পেনসিলভেনিয়ায় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ডা. মেহমেত ওজ এবং ওহাইও’র জনপ্রিয় লেখক জেডি ভ্যান্সের মতো কিছু সিনেট পদপ্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
নির্বাচনে এরা জয়লাভ করলে এটা প্রমাণিত হবে যে তার রাজনৈতিক সহজাত প্রবৃত্তি বেশ সুতীক্ষ্ণ এবং জাতীয় পর্যায়ে তার তৈরি রক্ষণশীল রাজনীতির ব্র্যান্ডের একটা আবেদন রয়েছে। কিন্তু যদি কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সংখ্যা কমে যায় – এবং যদি এটি ঘটে ট্রাম্পের হাতে গড়া প্রার্থীদের ব্যর্থতার কারণে – তাহলে সব দোষ গিয়ে পড়বে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘাড়ে।
এই ধরনের ফলাফল দলের মধ্যে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনে আশা বাড়িয়ে তুলবে। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস এবং টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট – দু’জনেই নভেম্বরে পুন:নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, এবং ২০২৪ সালে রিপাবলিকান মনোনয়ন জয়ের জন্য তাদের নিজস্ব প্রচারণায় তারা এই ফলাফলকে একটা স্প্রিংবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যদিকে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জনমত জরিপে বাইডেনের রেটিং বেশ খারাপ ছিল। যদিও গ্রীষ্মকালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সৌভাগ্য কিছুটা ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু এই নির্বাচনের প্রচারের চূড়ান্ত পর্বে মুদ্রাস্ফীতির উঁচু হার এবং অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা আবার ফিরে এসেছে। এর ফলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষতে ক্ষমতা ধরে রাখা ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি কঠিন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম দু’বছরে, কংগ্রেসে তার সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তন, আগ্নেয়াস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ এবং দরিদ্র শিশুদের জন্য নতুন আইন চালু করতে পেরেছেন।
যদি মার্কিন সংসদের দুটি কক্ষের মধ্যে কোন একটি রিপাবলিকানদের হাতে চলে যায়, তাহলে ডেমোক্র্যাটদের আনার বিলগুলি কংগ্রেসে পাস হওয়া তারা ঠেকিয়ে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে। এবং এর ফলে জটিলতা তৈরি হবে।
ডেমোক্র্যাটদের জন্য এই নির্বাচনের একটি খারাপ রাতকে বাইডেনের রাজনৈতিক দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হবে, এবং ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের মৌসুম শুরু হলে অন্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর স্বার্থে বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর ডাক নতুন করে উঠতে পারে।
প্রেসিডেন্ট এবং তার উপদেষ্টারা জোর দিয়ে বলছেন, যে তিনি পুনঃ নির্বাচনে লড়বেন। তবে কোন কোন প্রাইমারি নির্বাচন– যেখানে একই দলের প্রার্থীরা মনোনয়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন – তার মাধ্যমে একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে শুধুমাত্র একবারই ঘটেছে।
বিবিসি, সিএনএন