গৌরীপুরে গণশহীদদের নামফলকে লেখা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ সোমবার দুপুর ০৩:৩৮, ২৩ আগস্ট, ২০২১
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালিহর গ্রামে বধ্যভূমিতে নবনির্মিত স্মৃতিসৌধের নাম ফলকে গণশহীদদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লেখা হয়েছে। শনিবার (২১ আগস্ট) বধ্যভূমিতে গণশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় এ বিষয়টি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তানদের ও সাংবাদিকদের দৃষ্টিগোচর হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে গণশহীদদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহলে এ নিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগ এ ভুলের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহিম জানান, ১৯৭১’র ২১ আগস্ট পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা রেলযোগে গৌরীপুরে আসে। এদিন তারা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে পশ্চিম শালিহর গ্রামে হানা দিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসিমের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এসময় পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকে। এর আগে ১৬ মে ধরে নিয়ে যায় সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চুর বাবা মধু সূদন ধরকে।
তিনি আরও বলেন, পাক বাহিনী এদিন অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে কান্ত হয়নি এ গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে শালিহর কদমতলা নামক স্থানে ব্রাস ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে সেখানেই তাদেরকে কবর দেয়া হয়। পাক-বাহিনীর ব্রাস ফায়ারে গণশহীদরা হলেন- এ উপজেলার ২ নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালিহর গ্রামের মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নবর আলী, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনী কান্ত বিশ্বাস, খৈলাস চন্দ্র নমদাস, শত্রগ্ন নমদাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র নমদাস, কামিনী কান্ত বিশ্বাস ও রায় চরণ বিশ্বাস।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধে গণশহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শালিহর বধ্যভূমিতে সম্প্রতি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগ। শনিবার গণহত্যা দিবসে বধ্যভূমিতে গণশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় দেখতে পান স্মৃতিসোধের শ্বেত পাথরের নাম ফলকে গণশহীদদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সামিল বলে মন্তব্য করে এ ভুলটি সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুজ্জামান চুন্নু সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গণশহীদদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখপূর্বক তালিকা মোতাবেক বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধের নাম ফলকে তাদের নাম লেখা হয়েছে। আর এ তালিকা মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ে প্রেরন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তাছাড়া নবনির্মিত স্মৃতিসৌধ হস্তান্তরের সময় এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোন অভিযোগ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে উল্লেখিত ব্যক্তিদের গণশহীদ হিসেবে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রেরিত তালিকায় কাউকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং এ ভুলের দায় ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ভুলটি সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড গৌরীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি আবুল ফজল মুহম্মদ হীরা অভিযোগ করে বলেন, এ স্মৃতিরসৌধ নির্মাণে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়ম করা হয়েছে। এটি নির্মাণে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয়ভাবে প্রচার করা হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যাপক হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিলের সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। তিনি স্মৃতিসৌধের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে স্মৃতিসৌধের তদারকি কর্মকর্তা ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারি প্রকৌশলী মোঃ আনার মিয়া প্রথমে সাংবাদিকদের সাথে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণে ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকার কথা জানালেও শনিবার (২১ আগস্ট) জানান এর জন্য বরাদ্ধ ছিল ৭৯ লাখ টাকা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৯০ লাখ টাকা। বর্তমানে এ নিয়ে জনমনে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।