সাঘাটার পরিত্যক্ত ভরতখালী স্টেশনের জমি যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে
আসাদ খন্দকার,গাইবান্ধা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ০৭:২৪, ১৭ আগস্ট, ২০২১
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পরিত্যক্ত ভরতখালী রেলস্টেশনের অধিনে রেলওয়ের জায়গা দিনদিন প্রভাবশালীদের দখলে যাচ্ছে। প্রভাব খাটিয়ে যে যত পারে দখল করে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দুই দশক আগেও যেখানে ট্রেনের ঝন্ ঝন শব্দে ঘুম ভাঙতো ওই এলাকার মানুষজনের। এখন সেখানে আর ট্রেনের শব্দ নেই, চলছে না ট্রেন। রেল স্টেশনটি পরিত্যক্ত হওয়ার সাথে রেল লাইনের জায়গার উপর গড়ে উঠতে থাকে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ স্থাপনা। দেখে বোঝার উপায় নেই এখান দিয়ে কখনো ট্রেন চলাচল করতো।
বিগত ১৯৯৮ সালে ভরতখালী স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। এরপর থেকেই স্টেশনের পূর্বপাশে রেল ব্রিজের পশ্চিম পার থেকে শুরু করে পূর্বপাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রেলনাইন দখল করে কাঁচা, পাকা, আধাপাকা দোকান-হোটেল ও বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
ভরতখালী স্টেশনে এক সময় ৯টি জংশন রেললাইন ছিল। তার মধ্যে দু’টি আগেই হারিয়ে গেছে। যে সাতটি লাইন ছিল সেগুলো এখন সবুজ ঘাসের ঘন আস্তরণে ঢেকে গেছে। অভিযোগ আছে, স্টেশনের টিকিটঘর এবং স্টেশন মাস্টারের ঘর দিনে-রাতে এখন মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো কক্ষ আবার করা হয়েছে চায়ের স্টল। স্থানীয় নজরুল ইসলাম, জাবেদ আলী, রাজা মিয়া, সেলিম, কাসেম, রাজা ,জহুরুল, রহিম, টুকু মেকারসহ আরো অনেকেই রেল লাইনের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
এছাড়া রেলওয়ে কলোনীর আবাসিক ঘর গুলো যে যেমন পারে ভোগদখল করে আসছেন। শুধু কলোনীর আবাসিক ঘরই নয় কলোনী এলাকার জমি গুলোর কিছু নাম মাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে বাকী জমি নিজেদের ইচ্ছে মত ভোগদখল করে আসছেন। কিছু লোক আবার রেলওয়ের জলাশয় লিজ নিয়ে শর্তভঙ্গ করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন বলে এলাকা বাসির অভিযোগ রয়েছে।
ভরতখালী স্টেশনের পাশের রেল লাইনের উপর ফার্নিচারের দোকান করছেন প্রশান্ত সূত্রধর। তিনিও বললেন, এখানে যার যার মতো দখল করে আছে। কেউ বাধা দেয় না একারণে যার মত সেই ঘরতুলে ব্যবসা করছেন। সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া-ভরতখালী হয়ে ট্রেন যেত ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাটে। যে ঘাট এক সময় বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই ঘাটও এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নাব্যতা সংকটের কারণে ঘাট টিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসী নামক স্থানে। সেখানে গিয়েও নাব্যতা সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে চলাচল। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মানুষ তাদের উৎপাদিত মরিচ, ধান, পাটসহ বিভিন্ন শস্য ট্রেনে করে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেত। ট্রেন বন্ধ হওয়ার পর এখন সড়কপথে খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বেড়েছে। তাই এলাকাবাসীর দাবি বোনারপাড়া, ভরতখালী, ফুলছড়ি পর্যন্ত ট্রেন পুনরায় চালু করে মানুষের মুখে হাসি ফোটানো হোক।
এলাকাবাসীর দাবি প্রসঙ্গে স্থানীয় নজরুল ইসলাম বলেন, ট্রেন চালু করার জন্য এর আগে আমরা ৩০০ জনের স্বাক্ষর নিয়ে সাঘাটা -ফুলছড়ি আসনের সাংসদ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছি।
রেলওয়ের জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে যাওয়ার ব্যাপারে রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা পূর্ণেন্দু দেব এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পরিত্যক্ত ভরতখালী স্টেশনের সম্পদ মাষ্টার প্ল্যান করে উম্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে লিজ দেয়া হবে। লকডাউনের কারণে অনেকটা সময় বিলম্ব হয়ে গেছে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জনবল কম, এজন্য সময় লাগবে। তবে মাষ্টার প্ল্যানের কাজ চলছে। আর যে সব অবৈধ দখল হয়েছে তা উচ্ছেদ করা হবে।