ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ
সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম মঙ্গলবার সন্ধ্যা ০৬:১৩, ৫ জানুয়ারী, ২০২১
কুুুড়িগ্রামের উলিপুরে এমআরবি ইটভাটায় মানছে না ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন আইন। ইচ্ছেমতো আবাসিক, কৃষি জমি ও পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এমআরবি ব্রিকস নামে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। আর এই ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে মূল্যবান বনজ ও ফলদ গাছ। ভাটার ধূলা, কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপে ধ্বংস হচ্ছে নিকটবর্তী এলাকার সবুজ মাঠ,বনজ সম্পদ ও ফলদ গাছ।
উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত তেলীপাড়া এলাকায় এমআরবি ব্রিকস নামের ইট প্রস্তুতকারী এমনই একটি অবৈধ ইটভাটায় দিনরাত অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটাটি ফসলী জমির মাঝখানে স্থান করা হয়েছে। কোন প্রকার নিয়মনীতিই মানা হচ্ছে না। নেই কোন প্রকার অনুমোদন।প্রতিদিন ৭০-৮০ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে মরে যাচ্ছে গাছপালা। পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটার চারপাশে শত শত মণ কাঠ সাজানো। গাড়িতে করে গাছ কেটে এনে কাঠ পরিমাপ করা হচ্ছে প্রকাশ্যে ভাটার সামনে। ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে গাছের গুড়ি পোড়ানো হচ্ছে।
ভাটার শ্রমিক সুজন,রাজন,মোস্তফিজার ওসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ইট পোড়াতে প্রায় ৭০-৮০ মণ (১ মণে ৪০ সের) জ্বালানি কাঠ লাগে।গত ১৩ নভেম্বর এই ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে এবং তা চলবে মে-জুন পর্যন্ত। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ভাটায় ইট পোড়ানো হবে।
সূত্র বলছে, এক মৌসুমে এই ইটভাটায় গড়ে কাঠ পোড়ে প্রায় ১৮ হাজার মণ।প্রতি মণ কাঠের মূল্য ১’শ ৮০ টাকা সেই হিসেবে এই ইটভাটা এবং ভাটা শ্রমিকের রান্নাবান্নার কাজেসহ প্রায় কমপক্ষে ৩৩ লাখ টাকার গাছ পুড়ছে।
অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটায় এসব জ্বালানি কাঠ যাচ্ছে বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন থেকে। ইটভাটায় গাছের ছোট ছোট ডালপালা বা পাতা ব্যবহার হয় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোটা মোটা গাছ করাত দিয়ে কেটে ছোট ছোট টুকরা করে ইটভাটার চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান,এমআরবি ব্রিকস নামের ইট প্রস্তুতকারী এই ইটভাটায় প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ কিনে প্রকাশ্যেই পোড়ানো হচ্ছে।উজার হচ্ছে এলাকার গাছপালা। পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন।কেউ দেখছে না। প্রশাসন রয়েছে নীরব। প্রশাসনের কেউ কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। কোন প্রকার অনুমোদন ও নিয়মনীতির ধার ধারছেন না ভাটা মালিক।
রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির উলিপুর শাখার সভাপতি আপন আলমগীর বলেন, যারা সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ভাটায় ইট তৈরীতে গাছ পোড়াচ্ছে আর এসব কাঠ সরবরাহে শত শত গাছ কাটা হচ্ছে। এভাবে ইটভাটা চলমান থাকলে আগামী কয়েক বছরে এলাকায় গাছ বলতে কিছু থাকবে না। গাছ না থাকলে পশু-পাখি ও কীট-পতঙ্গ হুমকিতে পড়বে, নষ্ট হবে পরিবেশের ভারসাম্য।দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে এমআরবি ইটভাটার মালিক মাহমুদার রহমান বকুল বলেন, ইট ভাটায় কয়লার পোড়ানো নিয়ম থাকলেও ফিক্সড(ড্রাম)চিমনি ব্যবহারের কারণে গাছ পোড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূূর-জান্নাত রুমি বলেন,গাছ পোড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে সব ভাটায় অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।