ঢাকা (রাত ৯:১৬) রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News ৫০ মাসের বকেয়া বেতন প্রদাণের দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন Meghna News আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম Meghna News ময়মনসিংহে সিপিবি’র সমাবেশ ও লাল পতাকার মিছিল Meghna News বাংলাদেশ স্কাউটসের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত, সামাদ সভাপতি-জাহাঙ্গীর সম্পাদক Meghna News দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৩ হাজার ছাড়ালো Meghna News খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডা, ককটেল বিষ্ফোরণে আহত ২ Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাঁচ দিন বন্ধের পর আবারো শুরু হয়েছে আমদানী রপ্তানী Meghna News সাঘাটায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পথ রোধ করে মারপিট Meghna News দুর্গাপূজায় ভারতে যাচ্ছে ৩ হাজার টন ইলিশ Meghna News গৌরীপুর মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন তানজীন চৌধুরী

হাকালুকি হাওর ভ্রমন – মোঃ মাহফুজুর রহমান

এবাদুর রহমান জাকির, সিলেট এবাদুর রহমান জাকির, সিলেট Clock বুধবার রাত ০২:০৫, ৫ আগস্ট, ২০২০

ষড়ঋতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ বাংলাদেশ। একে একটি ঋতুতে এ দেশের প্রকৃতি সাজে ভিন্ন ভিন্ন রূপে যা ভ্রমণ পিপাসুদের অতৃপ্ত মনকে আনন্দ দিয়ে থাকে। সব ঋতুতে যদিও প্রকৃতির বহুরূপী সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবুও, নির্দিষ্ট ঋতুতে কিছু কিছু স্থান যেন তার যৌবন ফিরে পায়। অর্থাৎ, সেই নির্দিষ্ট সময়ে আপনি ওই স্থানের রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই। আর শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করতে ভ্রমণের বিকল্প নেই।
ভ্রমনের জন্য আল কোরআনে তাগিদ রয়েছে,”বলুন তোমরা পৃথিবী ভ্রমন কর এবং আল্লাহর নির্দশন গুলি দেখো আল্লাহকে অস্বীকারকারীর পরিনতি কি হয়ছিলো! তেমনই এক সৌন্দর্য উপভোগের অভিজ্ঞতার ট্রাভেল বাংলাদেশের পাঠকদের জানাবেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ৩নং নিজ বাহাদুর ইউনিয়নের দৌলতপুর বাজার ক্রিকেট ক্লাব।
ঈদ পরবর্তী ২য়দিনে করোনা প্রাদুর্ভাব বন্যায় সারা দেশে প্লাবিত বাইরে প্রখর রৌদ্র তারই মাঝে মেঘের হুঙ্কার। কিন্তু কোথায় যাবো ঠিক করতে পারছিলাম না। আমরা ভাবলাম বর্ষায় হাওড়গুলো অপরূপ রূপ ধারণ করে আছে। তাই ঝটপট সিদ্ধান্ত নেই হাকালুকিতে যাবার।
আমাদের ক্লাবের সাবেক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক লন্ডন প্রবাসী ফেরদৌস আহমদের পৃষ্টপোষকতায়।তাই সোমবার (৩আগষ্ট) বিকেল ২ টায় একে একে দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকল সদস্য একত্রিত হতে লাগলেন। ১৩০ জন সদস্যদের কে নিয়ে ৫০টি বাইক হোন্ডাে নিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে ভ্রমনের পথে রওয়ানা হই।
একদিকে বাইরে প্রখর রৌদ্র আর অন্য দিকে বাতাস বহমান, ‘ মাঝে মাঝে আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে…’ এক অন্য রকম রৌদ্রময় পরিবেশ। আমরা এগিয়ে চলছি ভ্রমন স্নাত মহাসড়ক বেয়ে দুরের পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ভেসে চলা কার্পাশ তুলোর মতো মেঘ, বৃষ্টির জলে এলিয়ে দেয়া নাগরিক জঞ্জালে ক্লান্ত শরীরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দাসের বাজার আসার পর  কিছুটা রোদ্রের প্রখরতা কমেছে হঠাৎ করে দেখলাম সেই সু সু করা মধুর শব্দ করে বাতাস বসছে।
 আমরা দাসের বাজারে কিছু সময় থামলাম খেজুর গাছের নিচে প্রাকৃতিক আলপনায় নিজকে গুচিয়ে দিতে। এরপর দ্রুত কানগো বাজার গেলাম নৌকা ঘাটে , মানুষ বেশী তাই বড় ইঞ্জিন ছইওয়ালা ট্রলার নিলাম।
চারদিকে থৈথৈ পানি, সাগরের মতো ঢেউ আর দূরে দূরে ছোট ছোট হাওর দ্বীপ, যে কারোর মনকে মুগ্ধ করবে আমরা আকট্য ভাষায় বলতে পারি। হাওর হলো এমন একটি বিস্তীর্ণ এলাকা, যেখানে বৃষ্টি মৌসুমে থৈ থৈ জলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, সমুদ্রের মতো ঢেউ থাকে। হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজারের আগর আতরের রাজধানী আজিমগঞ্জ-সুজানগরসহ ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। ২৩৮টি বিল,একটি মৎস্য আভাসিন কেন্দ্র,দুটি ওয়াচ টাওয়ার ও নদী মিলে তৈরি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার একরের এ হাওর।
বর্ষাকালে একে হাওর না বলে সমুদ্র বলা যায় নির্ধধায়। জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর এ হাওরে নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্ষায় থৈথৈ পানিতে নিমগ্ন হাওরের জেগে থাকা উঁচু স্থানগুলোতে অনেক পাখি আশ্রয় নেয়। আর শীতের সময়ে হাজার হাজার রকমের পাখি মেলা বসায় হাওরের বুকে হিজল বন। হাকালুকি হাওড়ের বিলের পাড় ও কান্দায় বিদ্যমান জলাভূমি বন পানির নিচে ডুবে গিয়ে সৃষ্টি করেছে ডুবন্ত বন যা ব্যবহৃত হয় মাছের আশ্রয়স্থল হিসাবে।
হাওড় এলাকার প্রতিটি মানুষ মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত এমন কি ছোট বাচ্চারা ও মাছ ধরছে। আমাদের মাঝি জাবির আহমদ তার সুমধুর গলায় শাহ আব্দুল করিমের গান ধরলেন … গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান … আমাদের  জিজ্ঞেস করলাম হাকালুকি নাম কিভাবে হলো, তিনি বললেন হাকালুকি হাওড়ের নামকরণ নিয়ে অনেক মজার মজার কল্পকাহিনী শোনা যায়।
হাওড় শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সাগর এর পরিবর্তিত রূপ বলে ধারণা করা হয়। হাওড় শব্দের বংশ পূর্ব শব্দ ছিল সাগর। এই সাগর থেকে পর্যায়ক্রমে সাগর>সাওর>হাওড় শব্দে রূপান্তর হয়েছে। প্রচলিত একটা তথ্য আছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা ওমর মাণিক্যের সৈন্যদের ভয়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখা এলাকার কুকি প্রধান হাঙ্গর সিং তখনকার এই হাওড় এলাকায় জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। কালক্রমে এই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি’।
আরেক কাহিনীতে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচণ্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’। আরও এক ইতিহাস থেকে শোনা যায়, বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে ‘হেংকেল’ নামে একটি উপজাতি বাস করত। ঐ উপজাতি এলাকার নাম ছিল ‘হেংকেলুকি’। এটি পরে ‘হাকালুকি’ নাম ধারণ করে। অপর একটি জনশ্রুতি মতে, একসময় এই হাওড়ের কাছাকাছি বসবাসকারী কুকি ও নাগা উপজাতি তাদের ভাষায় এই হাওড়ের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’- যার পূর্ণ অর্থ লুকানো সম্পদ।
পাঁচটি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওরটি সিলেট ও সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। হাওরের ৪০ শতাংশ অংশ বড়লেখা, ৩০ শতাংশ কুলাউড়া, ১৫ শতাংশ ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০ শতাংশ গোলাপগঞ্জ ও ৫ শতাংশ সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। হাওরের আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর। ২৪০টি বিল নিয়ে ২৮০টি খাল নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওরের বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওর ধারণ করে এক অনবদ্য রূপ।
বিলের পানির মধ্যে ও চারিধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিত উঁচুভূমি বিলের পানির প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করেছে অপরূপ দৃশ্যের।তারই মধ্যে গাছের একটি ডাল পানির উপরে উকিদিলো কাছে যাই সাচন্দে গিয়ে দেখি হিজল বন মনে পড়েগেলো সাইফুল্লাহ মোঃ মনসুরের গান”হিজল বনে পালিয়ে গেলো পাখি তারই কিবা করুন কাঁদে ডাকি দেয়নি সাড়া নিরব গহিন বন বাতাসে তার ব্যাথার গুজ্জরণ” পড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আলো আরেক দিকে ত্রিপুরা রাজ্যের ছোট বড় পাহাড়ের ঢালে লালচে আকাশ। রাখালিয়ারা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরা। কোথাও জেলেরা তীরে নৌকা ভিড়াচ্ছে। একদল জেলে নৌকার বৈঠা কাঁধে একপ্রান্তে জাল অন্য প্রান্তে মাছের ঝুড়ি বেঁধে গাঁয়ের বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পাখির দল এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে ছুটে চলছে। আর কিছুক্ষণ পরেই ডুবে যাবে লাল সূর্য। ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা। আর আমাদের ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলো।
যে ভাবে যাবেন হাকালুকিতে :
ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার হয়ে :মাইজগাঁও থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার থেকে নৌকা ঘাটে চলে আসুন। এখান থেকে নৌকা দরদাম করে উঠে পড়ুন সারা দিনের জন্য। বড় গ্রুপ হলে (১০/১৫ জন) বড় ছইওয়ালা ট্রলার দিন। দিন প্রতি ভাড়া নিতে পারে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা । কিছু খাবার এবং পানি কিনে নিন, কারণ হাওর ও কোনো দোকানপাট পাবেন না। তবে দয়া করে কোন ধরনের প্লাস্টিক এর বোতল, প্যাকেট, খাদ্য দ্রব্য হাওড়ের ফেলে হাওরের পরিবেশ কে দূষিত করবেন না। এবার নৌকায় উঠে কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়ান। কুশিয়ারা পারি দিতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগবে।
ঘিলাছড়া বাজার হয়ে :
কুশিয়ারা নদীর পার মাইজগাঁও থেকে সরাসরি ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিয়ে চলে আসতে পারেন গিলাছড়া বাজারে। এখান থেকেই হাওর শুরু। তবে সমস্যা হলো এখানে বড় নৌকা পাওয়া যায় না। নৌকা আনতে হবে সেই ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার থেকেই।এখানকার লোকজন খুব অতিথিপরায়ণ।
মৌলভীবাজারঃ
কুলাউড়া হয়ে সরাসরি হাকালুকি হাওরে যেতে পারেন।
জুড়িঃ
জুড়ি বাছিরপুর হয়ে সরাসরি হাকালুকি হাওরে যেতে পারেন।
বড়লেখাঃ
বড়লেখা সদর হতে বড়লেখা পুরাতন বাজার ভায়া কানগো বাজার গিয়ে মূল স্পটে যেতে পারেন।অথবা দাসের বাজার হয়ে কানগো বাজার যেতে পারেন।
লেখকঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান, এল.এল.বি অনার্স, মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, দৌলতপুর বাজার ক্রিকেট ক্লাব, বড়লেখা, মৌলভীবাজার।



শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT