বিএনপির কমিটিতে থাকার অভিযোগে ২ প্রাথমিক শিক্ষক বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিনিধি মঙ্গলবার রাত ০৮:৪৭, ৮ নভেম্বর, ২০২২
রংপুরের পীরগাছায় ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে থাকার অভিযোগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান ও একজন সহকারী শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে রংপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক জানান, সরকারি চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজাহিদুল ইসলাম বুলেট বলেন, সাময়িকভাবে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের আফতাব উদ্দিন হাসিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী জুলফিকার ও একই ইউনিয়নের আলহাজ আব্দুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলতাব হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আলতাব হোসেন ছাওলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও আব্দুল বারী জুলফিকার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সরকারি চাকরি বিধামালা ১৯৭৯ সালের ২৩ ও ২৫(১) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন অপতৎপরতা চালিয়ে আসছেন। যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা লঙ্ঘন ১৯৭৯-এর ২৩ ধারা ও ২৫(১)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি জানান, ২৩ ধারায় বলা আছে, ‘সরকারি কর্মচারী নিজ নামে প্রকাশিত কোনো লেখায় বা তার কর্তৃক জনসমক্ষে প্রদত্ত বক্তব্যের অথবা বেতার-টেলিভিশনে সম্প্রচারে কোনো বক্তব্যে এমন কোনো বিবৃতি বা মতামত প্রকাশ করতে পারবেন না, যা সরকারকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে।’ আর ২৫ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে বা কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বা কোনো প্রকারেই সহযোগিতা করতে পারবেন না।’
রংপুর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, গত ২৩ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে তাদের বিরুদ্ধে বরখাস্তের চিঠি ইস্যু হয়। দুই শিক্ষক চিঠি গ্রহণও করেছেন।
বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক আলতাব হোসেন ও আব্দুল বারী জুলফিকার জানান, তারা রাজনীতির সব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তবে শিক্ষা অফিসে অব্যাহতির কোনো কাগজ এখনো জমা দেওয়া হয়নি।
রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ রংপুরের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের অনেক পদ-পদবী বহন করছেন। প্রকাশ্যে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও ইউনিয়ন বিএনপির নেতা হওয়ায় দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করার বিষয়টি অমানবিক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এবং বরখাস্ত তুলে নেওয়ার আহবান করছি। দুই শিক্ষক পদ থেকে আগেই অব্যাহতি নিয়েছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে এ ধরণের আদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও শামিল।