বাড়ছে নদী ভাঙন
ডেক্স রিপোর্ট সোমবার রাত ০২:৪৮, ৫ জুলাই, ২০২১
উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিন ধরে চলা ভারী বর্ষণে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলেও গতকাল রোববার হঠাৎই এসব অঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। তবে গাইবান্ধায় এদিনও পানি বেড়েছে। এদিকে নদ-নদীর পানি কমা-বাড়ার মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন।
লালমনিরহাটের দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর প্রতি ঘণ্টায় পানি কমে সন্ধ্যা ছয়টায় তা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে শনিবার রাত থেকে তিস্তার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর বাসাবাড়িতে পানি উঠতে শুরু করে।
ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হক বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্ব খড়িবাড়ি টাপুরচর এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে করা বালুর বাঁধটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ওই গ্রামের প্রায় পাঁচ শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডালিয়া ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিস্তার পানি সকালে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রামে সব কয়টি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ জেলার ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়লেও এখন দ্রুত কমে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এক সপ্তাহে প্রায় অর্ধশত বাড়িঘর, কয়েকশ একর আবাদি জমি, কয়েকটি বিদ্যালয় ভবন ও ঈদগাহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব এলাকার পাট, সবজি, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে।
ইতিমধ্যে গতকাল দুপুরে রৌমারীর চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমার এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বাঁ তীরে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের কাজ উদ্বোধন করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। পরে চিলমারী ও রাজীবপুর উপজেলার নদীভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি।পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলা ও উলিপুর উপজেলার কয়েকটি স্থানেও নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ৯ উপজেলায় বন্যাদুর্গত ও নদীভাঙা মানুষকে সহায়তায় ৩৭৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও প্রতিটি উপজেলায় ৭৫ হাজার টাকা ইউএনওদের মাধ্যমে বিতরণের কার্যক্রম চলছে।
উত্তর গড়কান্দা এলাকার দিনমজুর আবদুস সালাম বলেন,‘প্রশাসনের পক্ষ থাইকা শুকনা খাবার দিছিল। কিন্তু বান্দের (বাঁধ) ব্যবস্থা করে নাই।’ জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, ভাঙন অংশ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে।কত ব্যয় হতে পারে, তারা তা জানাবে। ভাঙন অংশ মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে নদ-নদী ও হাওরে পানি কমছে। জেলার সব নদীর পানিই এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে পানি আবার বাড়বে বলে জানিয়েছে পাউবো।
ভারী বর্ষণে গাইবান্ধায় নদীর পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। জেলা পাউবো সূত্র জানায়,শনিবার বিকেল থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদের জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ও করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি, কুন্দেরপাড়া গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেসব স্থানে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হচ্ছে।