ঢাকা (রাত ১১:০৫) শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
শিরোনাম

নওগাঁ থেকে ঢাকামূখী যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া;নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই



প্রিয়জনদের সাথে ঈদ কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে ব্যস্ত কর্মমূখী মানুষ। নাড়ির টানে নিজ এলাকায় ঈদ করলেও এখন ফিরতে হচ্ছে ইট পাথরের সেই চেনা শহরে। নওগাঁ জেলার অধিকাংশ মানুষের ঢাকার যাওয়ার ভরসা বাস। তাই বাস কাউন্টারে এখন উপচে পড়া ভীড়। তবে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ফিরতি টিকিট না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। বাড়তি টাকা দিয়েও মিলছে না টিকিট। আবার অনেক বাসে দুই সিটে এক যাত্রীর স্থলে দুইজন করে যাত্রীকে যেতে দেখা গেছে। এমন চিত্র নওগাঁর বাস কাউন্টারগুলোতো।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নওগাঁর বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। প্রিয়জনদের সাথে ঈদ কাটিয়ে ফিরতে শুরু করেছেন ঢাকার কর্মস্থলগুলোতে। কেউ যাচ্ছেন চাকরির কর্মস্থলে কেউবা যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় কাজে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশ আবার দুই সপ্তাহের লকডাউনে দিতে যাচ্ছে সরকার শুক্রবার থেকে। লকডাউন এর কারনে আগামীকাল থেকে কোন বাস নওগাঁ থেকে ঢাকায় ছেড়ে যাবেনা। যার কারনে যাত্রীরা ভীড় করছেন বাস কাউন্টারগুলোতে। অনেক যাত্রীই আগেই অগ্রীম টিকিট কেটেছেন। আবার অনেকেই দেখা গেছে টিকিট কাউন্টারে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে টিকেট কাটতে। কেউবা টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।

শ্যামলী পরিবনের যাত্রী শারমিন আক্তার জানান, আমি ঢাকাতে একটি প্রাইভেট ফার্মে জব করি। গত মঙ্গলবার অগ্রীম টিকিট কেটেছি। অন্যসময় ঢাকাতে যেতে ৪৫০-৫০০টাকা টিকিট মূল্য ছিল কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া ১২০০টাকায় টিকিট কাটতে হয়েছে আমাকে। আবার দুই সিটে এক জন যাত্রী যাবার কথা থাকলেও ডাবল করে যেত হচ্ছে। কি আর আর করার ঢাকাতে তো আমার যেতেই হবে তাই যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও দুপুর ১টা বেজে যাচ্ছে তবুও বাস ছাড়েনি। সবমিলে মহা দূভোর্গে পড়তে হচ্ছে।

আজ দুপুর ১টায় ঢাকা যাওয়ার জন্য হানিফ পরিবহন থেকে টিকিট কেটেছেন মো. বক্কর তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, অন্য সময় সাধরণত ৪০০ থেকে ৪৫০টাকা টিকিট কিন্তু ১০০০টাকায় টিকিট কাটতে হলো। দুই সিটে এক যাত্রী নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দুই সিটে দুইজন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। যাদের এসব দেখভালের কথা তাদের কাউকেই দেখলাম না বাস কাউন্ডার গুলোতে তদারকি করতে।

তিনি বলেন, ঈদ,পূজাসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোর ছুটির পর ঢাকা যাওয়ার সময় প্রতিবারই পড়তে হয় এমন বিড়ম্বনায়। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট কেটে যেতে হয়। সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের সুযোগ নিয়ে বাস মালিক এমন অন্যায্য কাজ করছে। যেন তাদের এটি অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে।

নওগাঁর রাণীনগর থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য নওগাঁর বাস কাউন্টারে এসেছেন রবিউল ইসলাম ও সুরোজ হোসেন। তারা দুজনই ঢাকার একটি প্রেট্রোলপাম্পে চাকরি করেন। তাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ঈদের আগের দিন হামরা গ্রামের বড়িত আচিছি আবার আজক্যাই যাওয়া লাগবে। কিন্তু হামরা কোন টিকিটই পাচ্চিনা। কালকা থাকা কামোত জয়েন্ট করা লাগবে আজ না গেলে সমস্যাত পড়া লাগবে কি করমু একন বুঝবার পারিচ্ছিনা। আর ২-৩দিন পর যদি লকডাউন দিলোনি তালে হয়তো হামরা কোনভাবে যাবার পারনুনি।

শাহ ফতেহ আলী বাস কাউন্টারের ম্যানেজার আজাদ হোসেন বলেন, অনেকেই আজকে ঢাকাতে যাচ্ছে। ঢাকামূখী যাত্রীদের বেশি চাপ। তাই অনেক বাসে দুই সিটে একজন করে যাত্রী যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রীদের কথা ভেবে দুই সিটে দুইজন করে যাত্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে।

অনেকের মুখে মাক্স নেই যাত্রীদের সে বিষয়ে প্রশাসনের নিদের্শনা মানা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যাত্রীদের অনুরোধ করছি যাতে তারা মাস্ক পরিধান করে বাসে ওঠে।

হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার কাঞ্চন মিয়া জানান, কাল থেকে তো আর বাস চলবে না। তাই অনেক যাত্রী। তাদের কথাওতো আমাদের ভাবতে হয়। ভাড়া একটু বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে খুব বেশি নয়। কিছু বাসে দুই সিটে দুই জন করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী চলাচলাচলের।

নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এহসান রেজা (রেনজা) বলেন, ঢাকামূখী যাত্রীদের খুব ভীড় তাই তাদের কথা বিচেনা করে অনেক বাসে দুই সিটে দুই জন করে যাত্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে।

অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন লকডাউনের কারনে বাস বন্ধ ছিল আবার দুই সপ্তাহের লকডাউন দিবে সরকার। আমাদের বাস ড্রাইভার, হেলপার থেকে শুরু করে বাসের সাথে জড়িতদের বেতনসহ সবদিক বিবেচেনা করে একটু ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর আমরা চেষ্টা করছি যতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া যায়। যদি ২৬তারিখ পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করা যেত তবে নির্ধারিত ভাড়ায় জেলার সকল যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। অনেক যাত্রীদের টিকিট দেয়া সম্বব হচ্ছেনা। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত বাস ঢাকায় যাবে। তবে তারপর আর কোন বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবেনা।

নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মাদ ইব্রাহীম এর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, বাস কাউন্টারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ একাধিক ভ্রাম্যমান টিম কাজ করছে। যদি অতিরিক্ত ভাড়া কেউ নিয়ে থাকে সে বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে আমরা তদারকি করছি।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT