ধর্মপাশায় স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা,সুনামগঞ্জ বুধবার সন্ধ্যা ০৭:১৭, ১২ জানুয়ারী, ২০২২
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা সদর ইউনিয়নের টানমেউহারী গ্রামের নিজেদের বসতঘরের ভেতর থেকে স্ত্রী শাদিনা বেগমের (৪৯) গলাকাটা ও স্বামী বাচ্চু মিয়ার (৫৬) ঝুলন্ত লাশ বুধবার বিকেল তিনটার দিকে উদ্ধার করেছে ধর্মপাশা থানা পুলিশ। ওইদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সোয়া একটার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
ধর্মপাশা থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার টানমেউহারী গ্রামের বাসিন্দা বাচ্ছু মিয়া (৫৬) ও তার স্ত্রীর শাদিনা বেগমের (৪৯) দাম্পত্য জীবনে তাদের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বাচ্ছু মিয়া জলমহালের ইজারাদারদের কাছ থেকে ডোবা ক্রয় করে এর মাছ তিনি আহরণ করে তা অন্যত্র বিক্রি করার ব্যবসা করে আসছিলেন। এই ব্যবসায় তিনি তেমন লাভবান হচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় তিনি আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে হতাশা হয়ে পড়েন।। ঋণগ্রস্ত হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ নিয়ে প্রায়ই কলহ চলে আসছিল। নিজেদের বাবা মায়ের সঙ্গে একই বাড়িতে বেশ কিছুদিন ধরে বড় মেয়ে রিপা আক্তার (৩৩) স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন।
বুধবার সকাল নয়টার দিকে রিপার বাবা মায়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।ওইদিন সকাল ১০টার দিকে রিপা আক্তার (৩৩) তার ছোট ভাই অনিক মিয়া (১৪)কে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য উপজেলা সদরের জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রিপার ভাগ্নে ১০বছর বয়সী আবু রায়হান রিপাকে মোবাইল ফোনে জানান যে, তার নানা নানীর মধ্যে দরজা বন্ধ করে ঝগড়া শুরু হয়েছে। তাড়াতাড়ি তিনি যাতে বাড়িতে চলে যান।
রিপা তাৎক্ষণিকভাবে ৯৯৯ কল করে এ নিয়ে পুলিশের সহায়তা চান। বেলা একটার দিকে রিপা বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মায়ের বসতঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। খবর পেয়ে বেলা পৌনে দুইটার দিকে ধর্মপাশা থানার ওসি মো.খালেদ চৌধুরী একদল থানা পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রথমে টিনের চাল খুলে ও পরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে থানা পুলিশ ঘরে প্রবেশ করে, বিকাল তিনটার দিকে তাদের নিজেদের বসতঘরের ভেতর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন।
রিপা আক্তার (৩৩) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,আমার আব্বা বিল বাদারের ব্যবসা করতাইন। এই ব্যবসায় তেমন লাভ অইতাছিল না। সব মিলাইয়া এই বছর আব্বার ৮৫হাজার টাকা ঋণ অইছে। এই ঋণের টেহা লইয়া আমার আম্মার সাথে আব্বার প্রায়ই ঝগড়াও অইতো। আউজগা সহালেও ঝগড়া অইছে। দরজা লাগাইয়া ঝগড়া শুরু অইছে হুইন্না আমি সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ কল দিছি। আমার মনে অয়,ঘরে থাকা ধারালো দা দিয়ে আব্বা হইলা আম্মার গলা কাটছে। হরে হেইন নিজে গলায় রশি দিয়া ফাঁস লইয়া মরছইন।
ধর্মপাশা থানার এসআই সোহেল মাহমুদ বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। খবর পেয়ে বুধভার বেলা পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার টানমেউহারী গ্রামের ঘটনাস্থলে যাই।
পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় ওই বসতঘরের ভেতর থেকে বিকেল তিনটার দিকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।