ঢাকা (সন্ধ্যা ৭:৫৯) বুধবার, ৮ই মে, ২০২৪ ইং

ধর্মপাশায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইলেন কতিপয় সাংবাদিক



সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান মজুমদার দিলিপ (৬০) কে ধর্মপাশা সরকারি খাদ্য গুদামের অবৈধভাবে ধান সরবরাহ করার মূল হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ভিত্তিহীন নিউজ করায় ওই নেতার কাছে তারা তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার কয়েকজন প্রতিনিধি।

আজ শুক্রবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে দৈনিক সমকাল ও সুনামগঞ্জের খবর এবং মোহনা টিভির ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক এনামুল হক এনির নেতৃত্বে ৪-৫ জন সাংবাদিক উপজেলার সদরের হাসপাতাল রোডস্থ উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম আজহারুল ইসলাম পিকের (দিদার) এর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে এসে সেখানে থাকা আরিফুর রহমান মজুমদার দিলীপের কাছে এসে তাঁকে জড়িয়ে নিউজ করায় তাঁরা প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না বলে মৌখিকভাবে অঙ্গীকার করেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এনাম, ব্যবসায়ী আলী আমজাদ ভুলু, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার অজয় তালুকদার প্রমুখ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই নেতা, ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ০৫-০৭-২০২০ইং গত রোববার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সম্রাট মজমুদারসহ তালিকাভুক্ত ছয়জন কৃষক ট্রলার যোগে সরকারি ন্যায্যমুলে ধর্মপাশা খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে আসেন। পর্যায়ক্রমে ওই কৃষকদের ধান খাদ্য গুদাম চত্বরে এনে তা গুদামের ভেতরে ঢোকানোর জন্য প্রাথমিক কার্যাদি (ধান মাপামাপি ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন) করার কাজ চলছিল।

ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি ইসহাক মিয়া, দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান চয়ন, দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথা পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি এম. এম এ রেজা পহেল, দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি মিঠো মিয়া, দৈনিক সমকাল পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি এনামুল হক এনি, দৈনিক সুনামকন্ঠ পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি চয়ন কান্তি দাস, দৈনিক আমাদের সময় ও দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি সাজিদুল হক সাজু খাদ্য গুদাম চত্বরে ঢোকেন।

এ সময় উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক সম্রাট মিয়া, উজ্জ্বল, জইবুর রহমানসহ ছয়জন কৃষকের কাছে টন প্রতি এক হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি এনামুল হক এনি, দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান চয়ন,দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি মিঠো মিয়া । অন্যতায় কৃষকের ধান খাদ্য গুদামে ঢোকবে না বলে তাঁরা হুশিয়ারী দেন। কৃষকেরা টন প্রতি এক হাজার টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় এসময় ওই সাংবাদিকরা কৃষকদের ধানমাপামাপির কাজ বন্ধ করে দেন। কৃষকদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান মজুমদার দিলীপ ধর্মপাশা সরকারি খাদ্য গুদাম চত্বরে যান।

এ সময় চাঁদাবাজ সাংবাদিকরা সেখান থেকে সটকে পড়ে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই নেতা খাদ্য গুদাম চত্বরে দাঁড়িয়ে কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কাউকে কোনোরকম চাঁদা দিবেন না। যেসব সাংবাদিক কৃষকদের কাছে চাঁদা দাবি করবে কৃষকদের পাশে থেকে সেসব সাংবাদিকদেরকে প্রয়োজনে আমি লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাঁদেরকে থানা পুলিশের কাছে দেব। এ উপজেলায় কোনো অবস্থাতেই চাঁদাবাজি হতে দেব না।

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান মজুমদার দিলীপকে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয়ের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী বানিয়ে কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় ভূয়া তথ্য উপস্থাপন করে ওই নেতাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় গত মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলা সদরের হাসপাতাল রোডস্থ ধর্মপাশা উপজেলা প্রেস ক্লাবের কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই নেতা।

পরদিন বুধবার নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কতিপয় সাংবাদিক ওই নেতার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে। এ ঘটনাটি বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্ত করতে বুধবার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমুন হাসান বিপ্লবকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন ইউএনও।

উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান মজুমদার দিলীপ বলেন, যারা আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করেছিল তাঁরা কয়েকজন আমার সন্তান বয়সী। ওরা এ ঘটনায় আমার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে। আমিও তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এনিয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে,দৈনিক সমকালের ধর্মপাশা প্রতিনিধি এনামুল হক এনি কে কল দিলে সে রিসিভ করেনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন, কৃষকদের কাছে চাঁদা দাবি ও খাদ্য গুদাম কেন্দ্রিক ঘটনাটি তদন্ত করতে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ একিটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT