ঢাকা (রাত ১২:০১) সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

তেতো গাছে মিষ্টি রস, রোগবালাই থেকে মুক্তির আশা



চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি নিম গাছ থেকে বের হয়ে আসছে পানির ফেয়ারা। আর এই পানির ফোয়ারার জল এতটাই মিষ্টি যেন তা খেজুর রসকেও হার মানায়। পথচারী ও গ্রামবাসী অনেকেই ছুটে আসছেন নিম গাছের গা বেয়ে পড়তে থাকা মিষ্টি রস খেতে। ছোট ছেলেমেয়েরা হাতে নিয়েই চেটে চেটে খাচ্ছে নিম গাছ থেকে বের হওয়া মিষ্টি রস। নিম গাছের মিষ্টি রস খেতে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ৷ আর তাই বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তির আশায় তেতো নিম গাছ থেকে

মিষ্টি রস সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে। গ্রামের অনেকেই বিভিন্ন পাত্র গাছে ঝুলিয়েছেন রস সংগ্রহ করতে। এমন নিম গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জস সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামের মৃত কালুর ছেলে নাসির আলীর বাড়ির গলিতে।

 

স্থানীয়রা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে গাছ থেকে অল্প অল্প রস বের হলেও তিন দিন আগে থেকে এর পরিমান বেড়েছে। গ্রামের এক ব্যক্তি মুখে নিয়ে নিম গাছের রসের মিষ্টতা দেখলে এ খবর ছড়িয়ে যায় পুরো গ্রামে। এরপর থেকেই অদ্ভুত এই নিম গাছ দেখতে ছুটে আসছে উৎসুক জনতা। নিম গাছের পাতা, কাঁচা ফল, বীজ, কান্ড ও রস স্বাভাবিকভাবে তিতা হলেও এই গাছের রস মিষ্টি হওয়ায় অবাক গ্রামবাসী ও পথচারী।

 

এ বিষয়ে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই গাছটি দিয়ে ফেনাযুক্ত রস বের হতে দেখা যায়।

কিন্তু গত তিনদিন ধরে এর পরিমান বেড়েছে। কেউ একজন মুখে মিষ্টি বলার পর সবাই এসে মুখে নিয়ে বিশ্বাস করছে। কেউ কেউ আবার দূর দূরান্ত থেকে নিম গাছের এমন অদ্ভূত কার্যক্রম দেখতে সরেজমিনে আসছেন। কেউ কেউ এসে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোডও করছেন।

তিনি আরও বলেন, গ্রামের অনেক মানুষের মনেই বিশ্বাস রয়েছে এটি মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ। তাই নিম গাছটির রস খেলে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আর এমন বিশ্বাস থেকে রস সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাচ্ছেন। তবে গ্রামে এখন পর্যন্ত এই রস খেয়ে কেউ সুস্থ্য হয়েছেন বলে কোন খবর পাওয়া যায়নি।

 

গ্রামের মুরুব্বী মোবারক আলী জানান, ৬৫ বছরের জীবনে কখনো এমন অদ্ভূত ব্যাপার দেখিনি। নিম গাছের পাকা ফল ছাড়া বাকি সবকিছুই তেতো। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে গত কয়েকদিন থেকে আমাদের গড়াইপাড়া গ্রামের একটি নিমগাছ থেকে অতিরিক্ত পরিমানে রস বের হচ্ছে যার স্বাদ মিষ্টি। আমি নিজেও খেয়ে দেখেছি। খেতে হুবহু খেজুরের রসের মতো লাগলো।

 

কলেজ শিক্ষার্থী ওসমান আলী বলেন, শুধু স্বাদই নয়, নিমগাছটি থেকে বের হওয়া

রসের গন্ধও খেজুরের রসের মতো। খেলে রোগবালাই ভালো হবে এই বিশ্বাস করে অনেকেই গাছের বিভিন্ন স্থানে বোতল লাগিয়ে রেখেছে রস সংগ্রহের জন্য। এমনকি রস বের হওয়ার ধরনটিও খেজুরের গাছের মতোই ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে। তবে দিনের থেকে রাতে বেশি পরিমানে রস বের হচ্ছে। এছাড়াও এতো বেশি রস প্রবাহিত হচ্ছে যে গাছের গোড়া ভিজে থাকছে সবসময়।

 

পাশের গ্রামের আকতারা বেগম (৫০) গড়াইপাড়ার নিম গাছটিতে এসেছিলেন রস নিতে।

স্থানীয় এক যুবককে বলে বোতলে করে রস নেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি জানান, আমার ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘদিন ধরে মাজা ও পা ব্যথার সমস্যা আছে। এই গাছ দিয়ে নাকি মিষ্টি রস বের হচ্ছে এবং তা খেলে বিভিন্ন রোগবালাই ভালো হচ্ছে শুনে নিতে এসেছি। আল্লাহর নাম নিয়ে ভালো নিয়তে রস খাব। আশা করি সুস্থ্য হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

এ বিষয়ে নাসির আলী বলেন, কয়েকদিন আগে মৃত বাবা-মায়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রায় ২৪ বছরের নিম গাছটি গড়াইপাড়া জামে মসজিদের নামে দান করা হয়েছে। তবে এর আগে থেকেই গাছটি দিয়ে রস বের হচ্ছে। এমনকি মসজিদ কমিটিও গাছটি বিক্রি করেছে। কখন কাটা হবে তা জানা নেই। এর মধ্যেই গাছ থেকে রস বের হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে এবং তা সংগ্রহ করার হিড়িক পড়েছে।

 

গড়াইপাড়া জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. মহসীন আলী জানান, গাছটি দান পাওয়ার পর মসজিদ কমিটি ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করলে গাছ ক্রেতা ইতোমধ্যে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন। গাছ যেদিন কাটবে সেদিন বাকি টাকাও পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যেই গাছ নিয়ে হুলস্থুল কান্ড পড়ে গেছে। এর রস সংগ্রহ করতে গাছের যে কোন অংশে বোতল লাগাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।

 

এ বিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক একেএম শফিকুর রহমান বলেন, শুনামতে নিমগাছটির আশেপাশে মেহগনি ছাড়া আর কোন গাছ না থাকলেও গাছ থেকে বের হওয়া রসের স্বাদ খেজুরের রসের মতো। এমন ঘটনা খুব কম দেখা গেলেও একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ গাছের নিচে থাকা মাটির গুণাগুণ ও আশেপাশের বিভিন্ন পরিবেশের কারনে নিমগাছের রসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এটি হয়ত কয়েকদিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।

 

ফিজিও কেমিক্যাল কন্ডিশন এর কারণ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গাছের জড় মাটির নিচে যেখানে গেছে, হয়ত সেখানে এমন কোন পদার্থ রয়েছে যার সংস্পর্শে এসেও নিমগাছটিকে আঘাত করার পর বের হওয়া রসের স্বাদে মিষ্টতা আসতে পারে। বিষয়টি আহামরি তেমন কিছুই নয় বা এর কোন বিশেষ গুণ বা উপকারীতা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT