ঠাকুরগাঁওয়ে পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে ১১ বছর ধরে শিকলে বন্দি মুন্না
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার বিকেল ০৪:২০, ১০ জুলাই, ২০১৯
মোঃ ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে ১১ বছর ধরে শিকলে বন্দি মুন্না ৬/৭ বছর বয়স থেকে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মনোয়ারুল ইসলাম মুন্না। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার আগের মতো অসুস্থ হয়ে পরে।এভাবেই ধীরে ধীরে মুন্নার বয়স বাড়তে থাকে।
সংসারের অভাব পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি মুন্নার। তার বয়স বর্তমানে ১৮ বছর। ১১ বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে বারান্দার খুঁটির সাথে।
তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট (পাড়া) গ্রামে। সেখানে তার বাড়িতে শিকলবন্দি জীবন পার করছেন মুন্না। স্থানীয়রা জানান, অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারেনি।
মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে সে এলাকাবাসীর বিভিন্ন লোকসান করে। কারো গরু ছাগল মারধর, মানুষ মারধর, অনেকের সবজি ক্ষেত নষ্ট করে। মেয়ে মানুষ দেখলে জাপটে ধরার চেষ্টা করে এমনকি নিজের পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করে।কোন কোন সময় বাথরুমের মধ্যে ঢুকে থাকে।
এ জন্যই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।
সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের-চালা একটি ঘরের বারান্দায় শিকল পায়ে মাটিতে বসে আছে মুন্না। শরীরে শুধু প্যান্ট, আর কোনো কাপড় নেই। ৩ বোনের মধ্যে মুন্না সবচেয়ে বড়। তার বাবা মুনসুর আলী (৫৫) একজন ছোট গরু ব্যবসায়ী।
বর্তমানে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার বাবা মুনসুর আলী। তিনি বলেন, সামান্য একজন গরুর দালালির কাজ করি আমি। কাজ না থাকলে আমি দিনমজুরের কাজ করি। দৈনিক ৩০০-৩৫০ টাকা এই টাকা দিয়ে সংসার চালাব না মুন্নার চিকিৎসা করব ভেবে পাচ্ছি না। তারপরেও সে টাকা দিয়ে বিভিন্নভাবে তার চিকিৎসা করছি। দৈনিক ১০০ টাকার ওষুধ লাগে মুন্নার। অবশিষ্ট টাকায় সংসারের খরচ চালাই। এভাবেই কষ্টের মধ্যে চলছে আমাদের জীবন। অর্থের অভাবে পুরোপুরিভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পেরে ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। আমি বাবা হয়ে ছেলের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, সেই সাথে ছোটখাটো নানা সমস্যার মধ্যে দিন পার করছি। সরকারিভাবে আমাদের কোনো ভাতাও দেওয়া হচ্ছে না। যদি কিছু সহযোগিতা পেতাম তাহলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের খরচ চালাতে পারতাম। প্রতিবন্ধী মুন্নার চিকিৎসা এবং পরামর্শ আশা করেন তার অসহায় বাবা। তিনি সরকারি সহায়তা চান ছেলের চিকিৎসার জন্য।
মুন্নার ছোটবোন প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মুন্নার মা ছেলের চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করার জন্য ইতিমধ্যে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়েছেন।
১০ নং জাবর হাট ইউপি সদস্য শাহের আলী বলেন মুন্নাকে পাবনা এবং দিনাজপুর মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছিল। তার বাবা-মা অসচ্ছল ব্যক্তি তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।। ইউপি সদস্য শাহের আলী আরও বলেন মুন্নার পায়ের শিকল খুলে দিলে বিভিন্ন উত্তেজিত হয়ে গ্রামবাসীকে উত্ত্যক্ত করে এবং মানুষের কাছে ও বিভিন্ন দোকানদারের কাছে গিয়ে টাকা চায়। ইউপি সদস্য শাহের আলী বলেন তাকে উন্নত চিকিৎসা করালে আমার মনে হয় ভাল হয়ে যেতে পারে এজন্য তিনি মুন্নার চিকিৎসার সাহায্যের জন্য সরকারীভাবে এবং সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।এবং তিনি নিজেও সহযোগিতা করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।