ঢাকা (সকাল ১০:৪৫) শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News গৌরীপুরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বর্ণিল বিদায় সংবর্ধনা Meghna News স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান সানাউল্লাহ হলেন নির্বাচন কমিশনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধার, আটক-১ Meghna News নাগরপুরে যদুনাথ স. প্রা. বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত Meghna News দ্রুত সুমনের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানাল পরিবার Meghna News সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেটের সম্পাদক গরম পানিতে ঝলসে গুরুতর আহত Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে খাস জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষে নিহত একজন Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিখোঁজের ৪ দিন পর আদিবাসী শিশুর মরদেহ উদ্ধার Meghna News মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় যুবক নিহত

জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তালিকা নিয়ে টানা-টানি;উলিপুরে প্রকল্পের গরু পায়নি সাড়ে ৩১‘শ হতদরিদ্র পরিবার

সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম Clock বৃহস্পতিবার রাত ১১:৩৯, ১৮ আগস্ট, ২০২২

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রায় ১৪ কোটি টাকার গরু পায়নি সাড়ে ৩১‘শ হতদরিদ্র পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তালিকা নিয়ে টানা-টানির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। একই অবস্থা হয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজারহাট উপজেলাতেও। ফলে প্রকল্পের সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন এ অঞ্চলের দারিদ্র পীড়িত মানুষজন।

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র হ্রাসকরণ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বগুড়ার বেসরকারি সংস্থা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)। কিন্তু শুরুতেই একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি, স্বচ্ছল ও ধনাঢ্য পরিবারের মাঝে গরু বিতরণসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। পরে এ উপজেলায় বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে প্রকল্পটি কাজ শুরু করে। ২০২১ সালের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর (২৩ সালের জুন পর্যন্ত) বাড়ানো হলেও গরু বিতরণ কার্যক্রম বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে এ উপজেলায় ৩১৬০ হতদরিদ্র পরিবার গরু পাচ্ছেনা। এছাড়াও রাজারহাট উপজেলায় ১৯৬০ পরিবার এ প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে প্রকল্পের এগ্রো প্রসেসিং ইউনিট নির্মাণ ও ১৯৫৭০ জনের প্রশিক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি।

প্রকল্প পরিচালক জাহেদুল হক চৌধুরী বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার ৮টি উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার জন হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে গরু বিতরণ করার টার্গেট ছিলো। তারমধ্যে ১৮ হাজার ৯৫ পরিবারের মাঝে গরু বিতরণ করা হয়। তবে নাগেশ্বরী এবং চিলমারীতে সুষ্ঠু ভাবে বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক গরু (সম্পদ হস্তান্তর) বাদ দেয়ার কারণে আগামীতে উলিপুরে ৩১৬০টি ও রাজারহাটে ১৯৬০টি পরিবারকে আর গরু দেয়া যাচ্ছে না।

এদিকে নাম প্রকাশ না করতে প্রকল্পের একটি সূত্র বলছেন ভিন্ন কথা, সূত্রটি জানায় প্রকল্পের সুবিধাভোগি নিবার্চন করা হয়েছে বিবিএসের খানা জরিপের মাধ্যমে। কিন্ত উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি চান তাদের মনোনিত তালিকা অনুযায়ী উপকারভোগি নিবার্চন করতে। দীর্ঘদিনেও সমঝোতায় আসতে না পারায় এ অর্থবছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও, গরু বিতরণ কর্মসূচি বাদ দেয়া হয়।

জানা গেছে, দারিদ্র পীড়িত এ জেলার মধ্যে উলিপুর উপজেলায় ৪১০৫টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে গরু বিতরণ শুরু হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে থেতরাই ইউনিয়নে। এছাড়াও চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে ধামশ্রেনী ও দূগার্পুর ইউনিয়নে ৬৩০ জন পরিবারের মাঝে গরু হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে ৯টি গরু মারা গেছে। তবে সময়মত গরু কিনতে না পারায় পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৩১৬০টি গরু বিতরণ করা হবে না।

প্রতিটি গরুর মূল্য ৪০ হাজার টাকা। গরু লালন-পালনের জন্য ওষুধ বাবদ এককালীন ৩৫০ টাকা এবং প্রতিমাসে ৫০০ টাকা (৬ মাস) দেয়ার কথা। কিন্ত এটি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।

এছাড়াও অনেক সুবিধাভোগি তাদের গরু বিক্রি করেছেন, আবার কারো গরু মারা গেছে। দারিদ্র হ্রাস প্রকল্পের গরু পেয়ে কতজনের দারিদ্র হ্রাস পেয়েছে সেদিকেও খেয়াল নেই প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের লিয়াকত আলী পেয়েছিলেন প্রকল্পের গরু। গরু পাওয়ার এক বছরের মাথায় নাক দিয়ে রক্ত পড়ে তার গরুটি মারা যায়। লিয়াকত আলী জানান, গরুসহ নগদ তিন হাজার টাকা পেয়েছিলেন তিনি। পরে গরুটি মারা গেলে প্রকল্পের লোকজন এসে বিভিন্ন নমুনা নেয়। এসময় তাকে মাছ চাষের আওতাভুক্ত করার জন্য এক হাজার টাকাও নেন প্রকল্পের লোকজন। কিন্ত এ পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি। একই গ্রামের ফুলবাবু নামের এক গ্রাম পুলিশের গরুটিও মারা গেছে।

ফাঁসিদাহ মাঝিপাড়ার রংমালা জানান, গরু আনার পর থেকে নানান অসুখ শুরু হয়। অনেক টাকা পয়সা খরচ হয়ে যায়। প্রাণি সম্পদ অফিসে বহুবার খবর দিলেও তারা কেউ আসেনি। খরচ বাবদ তিন হাজার টাকা দিলেও ওষুধের টাকা দেয়া হয়নি। পরে গরুটি বিক্রি করেন তারা।

জোগেস চন্দ্রের স্ত্রী তাপসী রাণি জানান, গরু দেয়ার পর আর খোঁজ নেয়নি। অন্যের বাড়িতে কাজের বিনিময় খড় নিয়ে আসি। খড় কেনার টাকা দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেয় নি।

ধামশ্রেনী ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া গ্রামের জয়নাল মিয়া জানান, ৩৯ হাজার টাকায় গরু কিনে দিয়েছে। খরচ বাবদ এক হাজার টাকা কেটে নেয় তারা। কিন্ত গরুটির বাজার মূল্য ৩৯ হাজার হওয়ার কথা না বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নিবার্হী অফিসার বিপুল কুমার বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো হাটের আয়োজন ও তার নিরাপত্তা দেয়া। ৩১৬০ জন হতদরিদ্র গরু পাওয়ার দ্বায়ভার প্রকল্পের ম্যানেজমেন্টের। তারা তাদের মত তালিকা তৈরি করেছে। তারাই বিতরণ করেছে। তিনটি ইউনিয়নে দেয়া গেলেও বাকি ইউনিয়নগুলোতে কেন দেয়া গেল না। কিন্ত এ বিষয়ে তারা আমাদের সাথে বসেনি।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম.এ মতিন বলেন, আরডিএ প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পাশাপাশি বিভিন্ন মহলেরও সহযোগিতা ছিল না। সময়মত গরু কিনতে না পারায় যে টাকা ফেরত গেছে, ওই টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT