কিস্তির টাকা আদায়ের চাপে দিশেহারা ঋণ গ্রহীতারা, অভিযোগ অস্বীকার মাঠকর্মীদের
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার রাত ০২:৪৮, ১ জুলাই, ২০২০
মিরু হাসান বাপ্পী, আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি: শুক্রবার ২৬ জুন, ২০২০ইং করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি জেলায় রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে।
আয় রোজগার না থাকায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবৃত্তদের অবস্থা অনেকটা নাজুক। বিশেষ করে যারা বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছেন। দু’বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলোকে। সেখানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনওজিও) থেকে ঋণের কিস্তির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়ছে দরিদ্র গ্রাহকরা।
উপজেলার ছোট-বড় বেসরকারি সংস্থাগুলো কয়েক দিন ধরে ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে। করোনার মধ্যে ঋণ পরিশোধ করা তাদের পক্ষে অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ছোট বড় এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠকর্মীরা ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের উপর চড়াও হচ্ছে। কিস্তির টাকা না দিলে তারা বাড়িতে বসে থাকাসহ অশোভন আচরণ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। আর এমন অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার আদমদীঘিতে অবস্থিত দেশের সুনামধন্য এনজিও আশা, জাকস ফাউন্ডেশন, এসকেএস ফাউন্ডেশন, মানবিক সাহায্য সংস্থা (এমএসএস) ও স্থানীয় যুগান্তর সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে।
যেখানে সরকার করোনা পরিস্থিতিতে চলতি মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত। ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি শিথিলযোগ্য করা হলেও তা বাড়িয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ‘করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক অক্ষমতার কারণে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি অপরিশোধিত থাকলেও তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্য কোনো কিস্তি বা ঋণকে বকেয়া বা খেলাপি দেখানো যাবে না।
তবে কোনো ঋণের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী শ্রেণিকরণ করা যাবে।’ তারপরও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জোরপূর্বক এনজিওর ঋণের কিস্তি আদায় অব্যাহত রয়েছে।
কখনো স্বশরীরে এলাকায় গিয়ে আবার কাউকে মুঠোফোনেও কল করে তাগাদা দিচ্ছে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দিন দিন ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। যুগান্তর সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির উপজেলার দমদমা গ্রামের এক সদস্য বলেন, কিস্তি ১হাজার টাকার মধ্যে ৬শ টাকা দিয়েছি।
কথা প্রসঙ্গে বলেন সরকার তো এখন শিথিলযোগ্য করছে, মাঠকর্মী ক্ষিপ্ত হয়ে নানান কথা বলেন। গ্রাহক বলেন এখন তো কাজ কর্ম না থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে, টাকা যখন নিয়েছি অবশ্যই দিবো।
উত্তরে মাঠকর্মী বলেন, কোনো আজুহাত না দেখিয়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। মানবিক সাহায্য সংস্থা (এমএসএস) এবং জাকস ফাউন্ডেশনের দমদমা গ্রামের কয়েক সদস্য বলেন, কিস্তির টাকা না দিতে পারলে ঘন্টার পর ঘন্টা বাড়িতে বসে থাকে। নানান কথা ও অশোভন আচরন করে। বর্তমানে কোনো ইনকাম না থাকায় কিস্তির চাপে খুব অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
আশা এনজিওর সান্দিড়া গ্রামের এক সদস্য বলেন, আমার কিস্তি ১০৫০। সরকার অনুমতি দিয়েছে কিস্তি দিতেই হবে মাঠকর্মীর এমন কথায় ৫শ টাকা ছিলো, বাকি টাকা ধার করে দিয়েছি। সারাদিন কাজ করে সে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের সান্তাহার পৌর এলাকার এক সদস্য বলেন, প্রত্যেক সপ্তাহে এসে কিস্তির জন্য চাপ দেয়। যেখানে দু’বেলা খাওয়ার সমস্যা কিস্তি দিবো কোথায় থেকে। বাধ্য হয়ে ধার দেনা করে কিস্তির টাকা দিতে হচ্ছে। দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি।
আবারও লকডাউনে পড়তে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে এ সংকট মোকাবেলায় এনজিওগুলোর কিস্তি আদায় বন্ধে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
গ্রাহকদের এমন অভিযোগের বিষয়ে উপজেলার সান্তাহার শাখার আশা, এসকেএস এনজিওর মাঠকর্মী বলেন, আমরা গ্রাহকদের কোন চাপ প্রয়োগ করিনা। একই কথা বলেন জাকস ফাউন্ডেশন, মানবিক সাহায্য সংস্থা সহ যুগান্তর সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির মাঠকর্মীরাও।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, যারা একান্ত দরিদ্র টাকার সঙ্কট তাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক কিস্তি আদায় করতে পারবেনা। এক্ষেত্রে যদি কোনো এনজিও জোর করে তবে মালিক পক্ষের সাথে কথা বলবো যেন এই কাজ থেকে বিরত থাকে। অতপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।