ঢাকা (রাত ১২:১৯) শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং

ঈদের পরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা বিশ্লেষকদের

<script>” title=”<script>


<script>

বাংলাদেশে এখন চলছে করোনা ভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ। আর সামনেই মুসলামনদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা। স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আসছে ঈদে করোনাভাইরাস আরও বিস্তৃত হবে।

তাদের মতে, সবচেয়ে সংকট তৈরি করছে বুস্টার ডোজ নেয়ায় মানুষের অনাগ্রহের বিষয়টি। আর করোনাভাইরাসের নতুন উপধরন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। কারণ এখন এই উপধরনের দাপট চলছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত ২০ জুন শনাক্তের হার শতকরা ১০% ছাড়িয়ে গেছে। ওই দিন সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৭৩ জন। মারা গেছেন একজন। আক্রান্তের হার ছিল শতকরা ১০.৮৭%। আক্রান্তের এই হারকে করোনাভাইরাসের উচ্চমাত্রা বলা হয়।

এরপর ১২ দিনের মাথায় গত ২ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৫ জন। মারা গেছেন ছয় জন। আক্রান্তের হার ১৩.২২%। তার একদিন আগে ১ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৯৭ জন। মারা গেছেন পাঁচ জন। আক্রান্তের হার ১৫.৩১%।

গত ১২ দিনে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৯ হাজার ৫৮৭ জন। আর মারা গেছেন ২৮ জন। এ পর্যন্ত সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৭ জন। মারা গেছেন ১৯ হাজার ১৬০ জন। আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার এই হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেস্টের ভিত্তিতে করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস আবার বিশ্বের ১১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে প্রথমে ঢাকা শহরে চতুর্থ ঢেউ শুরু হলেও এখন দেশের সব বিভাগ ও জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তা না হলে সামনে কোরবানির সময়ে এটা আরও বেশি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সরকার মাস্ক আবার বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে। কিন্তু এটা মনিটরিং করা হচ্ছে না। গরুর হাট বসে গেছে কিন্তু সেখানে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আর ঈদযাত্রায় যদি স্বাস্থ্যবিধির প্রতি এই উদাসীনতা থাকে তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে বাধ্য।

তিনি বলেন, উদ্বেগের বিষয় হলো মৃত্যুহার বাড়ছে। যারা বয়স্ক, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য বিপদ বেশি। এবার দেখছি কেউ টেস্ট করাতেও চাচ্ছেন না। করোনাভাইরাসের সব উপসর্গ থাকার পরও টেস্ট করাচ্ছেন না। এর ফলে করোনাভাইরাস তাদের মাধ্যমে আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে।

সবাইকে টিকা ও বুস্টার ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, টিকা ও বুস্টার ডোজ যারা নিয়েছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এর কারণ হলো টিকার কার্যকারিতা থাকে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চতুর্থ ডোজ শুরু করেছে। আরও কিছুটা দেখে আমাদের চতুর্থ ডোজের ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত।

বাংলাদেশে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে ১২ কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দুই ডোজ পেয়েছেন ১১ কোটি ৮০ লাখের কিছু বেশি মানুষ। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন দুই কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ; যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৪.২৪%।

১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক কোটি ৭৩ লাখ শিশু-কিশোর প্রথম ডোজ পেয়েছে। দুই ডোজ পেয়েছে এক কোটি ৪১ লাখ। সরকার চলতি জুলাই মাস থেকে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু করবে।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, আমরা আগেই দেখেছি টিকাকে চ্যালেঞ্জ করে করোনাভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করছে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন তারা বিএ ফাইভ উপধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ক্ষতি করার ক্ষমতা বেশি। আক্রান্তরা গত তিন সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন তা প্রকাশ পাচ্ছে। শনিবার সংক্রমণ কিছুটা কমলেও আমার ধারণা মৃত্যু হার আরও বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, তিন মাস আগে করোনাভাইরাসে মৃত্যু যখন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে তখন আমরা উদাসীন হয়ে পড়ি। টিকার প্রতি আগ্রহ সরকার, সাধারণ মানুষ সবারই কমে যায়। এটা ঠিক হয়নি। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরব, তবে সতর্ক থাকব। কিন্তু সেটা হয়নি। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও মাস্ক ছাড়া প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেন। যা এখন নতুন করে বিপদ ডেকে আনছে।

তার কথা, সামনে কোরবানি। গরুর হাট বসে গেছে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে ফেরির গাদাগাদি হয়তো কমবে। তারপরও ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। টিকা কার্যক্রম আবার জোরদার করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত টিকা আছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন টেস্ট অনেক কম হচ্ছে। টেস্ট অনেক বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং বিনামূল্যে করা উচিত। তাহলে বাস্তব চিত্র যেমন বোঝা যাবে তেমনি পজিটিভ লোককে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তবে সেজন্য সরকারকে গরিব মানুষের প্রতি আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে তারা টেস্ট করাবেন না। তারা দিন আনেন দিন খান। তাদের আক্রান্ত হয়ে ঘরে থাকতে হলে তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT