আল বিদা রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান
নিজস্ব প্রতিনিধি সোমবার রাত ০১:৪৫, ২ মে, ২০২২
আর মাত্র একদিন পরই আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছেন ১৪৪৩ হিজরী সনের মাহে রমজান। বিদায় শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কষ্ট। যে কোন বিদায় অনুভূতিতে নাড়া দেয়। আর রমজান তো এসেছিল রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের প্রাচুর্য নিয়ে। এ থেকে আমরা বঞ্চিত হবো, এরকম ভাবতেই কষ্ট হয়।
রমজান শুধু একটি মাসের নাম নয়। আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের শ্রেষ্ঠ মাস মাহে রমজান। পাশাপাশি আত্মসমালোচনার একটি অনন্য প্রশিক্ষণ এই মাস। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ একটি সুন্দর সমাজ গঠনের বড় উপাদান হলো রমজান মাস। মুসলিম বিশ্বের সকল মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয় এ রমজান। রমজানের মাধ্যমে ধনীরা গরিবের দুঃখ অনুধাবন করতে পারে। ফলে ধনীরা গরিবের পাশে এসে দাঁড়ায়। আর গরিবেরা ধনীদের প্রতি হয়ে ওঠে কৃতজ্ঞ। উভয়ের মাঝে সৃষ্টি হয় উষ্ণ প্রীতি ও বন্ধন। সমাজ সুখি, সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে ওঠে।
রমজান তো তাকওয়া অর্জনের মাস অর্থাৎ খোদাভীতি লাভ। আমরা কি পেরেছি খোদাভীতি অর্জন করতে? পেরেছি কি আল্লাহর ভয়ে সব রকম অন্যায়, অপকর্ম, লোভ ছাড়তে? রমজান তো সহনশীল ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি, না রমজান আসা-যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো। নিজেকে শুধরে নেয়ার সময় ছিল রমজান। আমরা কি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। অর্থাৎ লোভ-লালসা, গিবত, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, আত্ম-অহঙ্কার, মিথ্যা বলা, কার্পণ্য ইত্যাদি থেকে মুক্ত হতে পেরেছি।
রমজান রোজাদারকে সুশৃংখল জীবনের প্রশিক্ষণ দেয়। যাতে আমরা রমজানের পরও বাকি ১১ মাস আল্লাহর রহমত, বরকত, মাগফিরাত এবং নাজাত থেকে বঞ্চিত হতে না হই। সুতরাং বান্দার উচিত রমজানে গড়ে ওঠা ভালো অভ্যাসগুলো রমজানের পরেও চালু রাখা। কেননা আল-কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, মৃত্যুর আগমন তোমার জন্য অবধারিত। চূড়ান্ত সেই সময় আসা পর্যন্ত তুমি তোমার প্রভুর ইবাদতে মগ্ন থাকো।
এই রমজানে কুরআন এসেছে আমাদের কল্যাণের জন্য। তাই কুরআনের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে হবে। আল্লাহকে পাওয়ার আর একটি মাধ্যম হলো দান। দান হলো পূণ্যের কাজ। অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে এক পূণ্যে ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বেশি সওয়াব। এর থেকে আমরা কি লাভ করেছি। রোজার মাসে রোজাদারগণ ভালো কাজে অভ্যস্ত ছিলেন, সেটা যেন রোজার পরেও অব্যাহত থাকে। খেয়াল রাখা দরকার, ভালো কাজের এ অভ্যাস যেনো বন্ধ না হয়।
মুমিন বান্দারা রোজার মাধ্যমে কতগুলো কার্যাদি থেকে দূরে থাকার অভ্যাস অর্জন করেছে, যা সবর বা ধৈর্য্যরেই নামান্তর। এই সবর, ত্যাগ এবং সংযম হচ্ছে মুমিনের সম্বল। মুমিন বান্দারা ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগী চালিয়ে যায়। মুমিনদের উচিত পরবর্তী মাসে তাদের এই ত্যাগ স্বীকারের অভ্যাস চালু রাখা। নিয়মিত নামায, ভালো কাজে সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান, সাদকা প্রদান, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি রমজান মাসের পরেও অব্যাহত রাখা উচিত। তাহলে রমজান মাস চলে গেলেও একজন বান্দা আল্লাহ তাআলার রহমত, বরকত ও মাগফেরাত পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।
ভালো অভ্যাস চালু রাখা জান্নাতের পথকে সুগম করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের অবস্থা যেনো সেই মহিলার মত না হয়, যে নিজ পরিশ্রমে সুতা কাটে, আবার নিজেই তা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে।’ (সূরা নাহল: ৩২)।
আসুন রমজানের যতটুকু সময় আছে এর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। কল্যাণকামী হই এবং আল্লাহর কৃপা লাভ করি।