ঢাকা (রাত ৮:১৯) বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ ইং

আফগানদের স্পনসর কেন সাকিবের প্রতিষ্ঠান



দুই দলের জার্সির রং দুই রকম, আফগানিস্তানের জার্সি নীল। ফরচুন বরিশালের লাল-গাঢ় নীল। তবু এই সিরিজে মাঠে আফগানিস্তানের জার্সি দেখে কেউ যদি ভুল করে দলটাকে ফরচুন বরিশাল ভেবে বসেন, তাহলে কি তাকে দোষ দেওয়া যাবে?

এমন প্রশ্নের পেছনের কারণটা সহজেই বুঝে যাওয়ার কথা, যদি আপনি সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলের রানার্সআপ দল ফরচুন বরিশাল এবং বাংলাদেশ সফরের আফগানিস্তান দলের জার্সি ভালো করে দেখে থাকেন। এই সিরিজে আফগানিস্তান দলের টিম স্পনসর হিসেবে আছে মোনার্ক মার্ট, জার্সির বুকেও বড় করে বাংলায় লেখা ‘মোনার্ক মার্ট’। অন্যদিকে ফরচুন বরিশালেরও গোল্ড স্পনসর ছিল মোনার্ক মার্ট। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে জার্সির পেছনের দিকে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকলেও পরে ‘মোনার্ক মার্ট’ বড় করে চলে আসে জার্সির বুকে।

মোনার্ক মার্ট কার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সেটিও নিশ্চয়ই এত দিনে কারও অজানা নেই। অনলাইন শপিংয়ের এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, সঙ্গে অন্য অংশীদারেরাও আছেন।

লেখার বিষয়বস্তু অবশ্য মোনার্ক মার্ট, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ বা পুরোপুরি জার্সিও নয়। বিষয়বস্তু ক্রিকেটারদের ক্রিকেটেরই পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসা। তবে সেটির উদাহরণ হিসেবে শুধু সাকিব আল হাসানের নাম উল্লেখ করাটা বোধ হয় ভুলই হবে। খুঁজলে এ রকম হয়তো আরও অনেকই পাওয়া যাবে। একটি উদাহরণ তো আছে চোখের সামনেই!

আফগানিস্তান দলের জার্সির দিকে যদি আরেকবার ভালো করে তাকান, দেখবেন জার্সির এক হাতে যেমন ‘মোনার্ক মার্ট’ লেখা, আরেক হাতে লেখা ‘এমএন ৭’। ‘এমএন’ হচ্ছে আফগানিস্তান ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীর নামের সংক্ষিপ্ত রূপ, আর ‘৭’ তাঁর জার্সির নম্বর।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ‘এমএন ৭’ নামে আফগানিস্তানের পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি মোহাম্মদ নবীর। তার এই প্রতিষ্ঠানই আফগানিস্তান দলের কিট স্পনসর। আর সে কারণেই আফগানদের জার্সিতে ‘এমএন ৭’-এর লোগো।

ক্রিকেটার নবীর প্রতিষ্ঠান ক্রিকেটের সঙ্গে আছে শুধু আফগানিস্তান দলের জার্সিতে উপস্থিত থেকেই নয়, গত বছর মার্চে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে সিরিজেরও সহযোগী পৃষ্ঠপোষক ছিল তারা। আফগানিস্তানের ক্রিকেটকে প্রতিষ্ঠানটি পৃষ্ঠপোষকতা করছে আরও অনেকভাবেই।

ক্রিকেটারদের ব্যবসায় জড়ানোটা নতুন নয় মোটেও। বাংলাদেশের ক্রিকেটেই এর উদাহরণ ভূরি ভূরি। আর সাকিবের বেলায় তো তিনি আগে ক্রিকেটার না ব্যবসায়ী, এই প্রশ্নই উঠে যায় মাঝেমধ্যে! একই রকম ব্যবসা আছে অন্য দেশের ক্রিকেটারদেরও। তাদের প্রতিষ্ঠান অনেক কিছুর পৃষ্ঠপোষকতাও করে। তবে ক্রিকেট খেলে আয় করা টাকা ব্যবসায় খাটিয়ে আবার ক্রিকেটকেই পৃষ্ঠপোষকতা করার উদাহরণ বোধ হয় খুব বেশি নেই।

বিষয়টি নিয়ে সাকিব ও নবীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই যে নিজেদের ব্যবসার প্রসারের জন্যই ক্রিকেটের পাশে আছেন তারা। কিন্তু সাকিব কেন সেটির জন্য আফগানিস্তানকেই বেছে নিলেন, ভবিষ্যতেও নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা আছে কি না, থাকলে বাংলাদেশের ক্রিকেটেই নয় কেন—এসব প্রশ্ন তো জাগেই। এ রকম কিছু প্রশ্ন ছিল নবীর কাছেও। কিন্তু আন্তর্জাতিক সিরিজ চলছে বলে স্বাভাবিকভাবেই এসব প্রশ্ন নিয়ে তাদের সামনে হাজির হওয়া যায়নি। এই সময়ে যে তারা শুধুই খেলোয়াড়!

অবশ্য এ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে এই মুহূর্তে চট্টগ্রামে থাকা আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের উপপ্রধান মেনহাজ রাজের সঙ্গে।

অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ক্রিকেট বোর্ড এসিবির জন্য ক্রিকেটারদের ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসাটাকে বড় সুখবর হিসেবেই দেখেন তিনি, এসিবি ধনী ক্রিকেট বোর্ড নয়। আর্থিক সংকট আমাদের বড় সমস্যা। সেখানে ক্রিকেটাররাই যে এভাবে আমাদের ক্রিকেটের পাশে থাকছে, এটা আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। আমি সাকিবকে ধন্যবাদ জানাই যে তাঁর মতো একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটারের প্রতিষ্ঠান আমাদের দলের পৃষ্ঠপোষক হয়েছে।

সাকিবের প্রতিষ্ঠান নতুন, আফগানিস্তানও আর্থিকভাবে অসচ্ছল ক্রিকেট বোর্ড। সব মিলিয়ে দুই পক্ষের ব্যবসায়িক সম্পর্কে আর্থিক লেনদেনটা খুব বড় অঙ্কের নয়। এখানে একজন ক্রিকেটারের ক্রিকেটের সঙ্গে থেকে নিজের প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বাড়ানোর চেতনাটাই বেশি কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন মেনহাজ।

সাকিবের আগে থেকেই আফগানিস্তানের ক্রিকেট সঙ্গে পাচ্ছে নবীকে। অবশ্য আফগান অধিনায়ক যে শুধু সে দেশের ক্রিকেট বোর্ডেরই পাশে আছেন, তা নয়। মেনহাজ বলছিলেন, নবীর প্রতিষ্ঠান আরও অনেকভাবেই আফগানিস্তানের ক্রিকেটকে সাহায্য করছে। খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগতভাবে স্পনসর করা, টুর্নামেন্ট স্পনসর, এ রকম অনেক কিছুই ওরা করে।

‘এমএন ৭’-এর প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই চলে এল আফগানিস্তানের আরও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম—‘আরকে ১৯’। ‘আরকে’ কার নামের আদ্যক্ষর, সেটিও কি বোঝা যাচ্ছে? রশিদ খান—আফগানিস্তানের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। ‘১৯’ হচ্ছে তার জার্সি নম্বর।

মেনহাজ জানালেন, গত নভেম্বরে বাজারে আসা রশিদ খানের কাপড়ের ব্র্যান্ড ‘আরকে ১৯’ও আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ক্রিকেটের পাশে, এসিবির সঙ্গে এখনো যুক্ত না হলেও ক্রিকেটারদের নানাভাবে সাহায্য করে রশিদ খানের প্রতিষ্ঠান। ওরা আমাদের গর্ব।

নবী-রশিদদের নিয়ে আফগানদের গর্বের এই জায়গাতে এবার বুঝি ভাগ বসালেন সাকিবও।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT