ঢাকা (সকাল ৭:১১) বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ ইং

আইডি কার্ডের তথ্য ফাঁস হচ্ছে টেলিগ্রামে



বাংলাদেশী নাগরিকদের স্মার্ট আইডি কার্ডের তথ্য ফাঁস হচ্ছে টেলিগ্রামে। এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই পাওয়া যায় একজন মানুষের ব্যক্তিগত সকল তথ্য। তথ্য ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ নাগরিক।

আইডি কার্ডের তথ্য ফাঁসের বিষয়টি গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর), বিভিন্ন আলোচনায় প্রকাশ পায়। একটি বিশেষ সফটওয়্যার (বট)- এর মাধ্যমে নাগরিকদের  NID Card এর সকল ব্যক্তিগত তথ্য সংযুক্ত করে এই কাজটি করা হচ্ছে। এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে সার্চ করলেই একজন ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ, পিতার নাম, মাতার নাম, স্ত্রীর নাম, ধর্ম, লিঙ্গ, মোবাইল ফোন নম্বর, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ছবি বেরিয়ে আসে। তবে এখনো জানা যায়নি, টেলিগ্রাম চ্যানেলটি কে বা কারা পরিচালনা করছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এনআইডি সার্ভারে প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের তথ্য আছে। তন্মধ্যে, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিতে রয়েছে এই সকল নাগরিকরাই। এসব কিছুর মাঝেও অনেক ওয়েব সাইট নাগরিকদের NID Service সম্পর্কিত টিউটরিল, তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছে।

গত ৫ অক্টোবর ২০২৩, (বৃহস্পতিবার) জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ.কে.এম. হুমায়ুন কবীর বলেন- “টেলিগ্রাম চ্যানেলে অ্যাক্সেসযোগ্য কোন তথ্য সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ হ্যাক হয়নি। ইসি’র (ইলেকশন কমিশনের) কোনো দুর্বলতা নেই।

ইসির টেকনিক্যাল দিকটা খুবই স্ট্রং এবং সব সময় এটা মনিটর করা হয়। মূলত একাধিক মাধ্যম থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য একত্রীকরণের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাদের কাছ থেকে তথ্য প্রকাশ হয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে, তাদের সকলের সার্ভিস দেওয়া বন্ধ আছে।”

 

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা (পরিচয় গোপন রেখে) জানান, “ইলেকশন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন পোর্টাল স্থাপন করেছে। সেই পোর্টালগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল দুর্বল। যার ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ডাটাবেজ থেকে ফাঁস করা সম্ভব হয়েছে।”

 

এ বিষয়ে, জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারের সিস্টেম ম্যানেজার- ‘আশরাফ হোসেন’ জানান, “৩ অক্টোবর তারা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১৭৪টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরাসরি নির্বাচন কমিশন (EC)- এর কাছ থেকে তথ্য সেবা গ্রহণ করে। সরাসরি এনআইডি সার্ভারে এদের অ্যাক্সেস রয়েছে। এই ১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেকোনো একটির মাধ্যমে স্মার্ট আইডি কার্ডের তথ্য ফাঁস হচ্ছে বলে শনাক্ত করা গেছে।”

 

টেলিগ্রাম চ্যানেল শনাক্তকরণ ও নাম যাচাইয়ের জন্য ৩ জন আইটি বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা হয়েছিল। তাদের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে, টেলিগ্রাম চ্যানেলে এনআইডি ডাটাবেজ বা সার্ভার থেকে সরাসরি কোন তথ্য প্রদর্শন করা হয়নি।

 

টেলিগ্রাম চ্যানেলে এসকল তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরসহ নির্বাচন কমিশনের সকল পার্টনার সার্ভিসকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের ব্ল্যাক লিস্টেড করা হবে। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশের অন্য কোথাও কাজ করতে পারবে না।

অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে, নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট- এর ধারা ২৬-এ বলা হয়েছে, ” কেউ বেআইনিভাবে কোন ব্যক্তির পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, দখল, সরবরাহ বা বিক্রি করলে শাস্তি হতে পারে। তার মধ্যে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড/ ৫ লক্ষ টাকা জরিমান কিংবা উভয় শাস্তি হতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের আইটি সম্পর্কিত সেক্টরগুলোতে সঠিক নিরাপত্তা ও শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে না। ইউএস-ভিত্তিক অনলাইন মিডিয়া আউটলেট, টেকক্রাঞ্চ- এ বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাতের খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেই তথ্য মতেগত জুলাই মাসে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন (BDRIS)- থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। মাত্র আড়াই মাস পর, স্মার্ট আইডি কার্ডের তথ্য দেখাতে ঘটনা প্রকাশিত হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের কারণে বিভিন্ন সংস্থাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরের ইন্টিগ্রেটেড হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম থেকে রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের জন্য, তাদের ৭৫০,০০০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৮কোটি টাকা জরিমানা করে। তবে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত তেমন শাস্তির নজির পাওয়া যায়নি। ফলে অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়তই।

 

আইডি কার্ড সঙ্ক্রান্ত আরও পরামর্শ পেতে ভিজিট করতে পারেন: https://nidbd.org/ (বিঃদ্রঃ এই ওয়েবসাইটের তথ্য ও অন্য যেকোনো বিষয়ে মেঘনা নিউজ দায়ী নয়)

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT