ঢাকা (রাত ১১:১০) বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ ইং

অসামাজিক কাজে বাঁধা দিয়ে বিপাকে গ্রামবাসি



নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের হাটশাওলী গ্রামে অসামাজিক কর্মকান্ড প্রতিহত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে গ্রামবাসী। অপকর্ম ঢাকতে একঘরে করা ও গ্রামছাড়া করার মিথ্যা অভিযোগে গ্রামের সাধারন মানুষকে হয়রানীর পাঁয়তারা করছে ওই গ্রামের আব্দুর রউফ। একঘরে করে রাখার বিষয়টি সত্য নয় বলে ওই গ্রামবাসী দাবী করছেন।

তথ্য অনুসন্ধানে সম্প্রতি সরেজমিনে হাটশাওলী গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের নিকট থেকে জানা যায়, ওই গ্রামের আব্দুর রউফ এর কন্যা (১৬) বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন সময়ে গ্রামে একাধিকবার অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় ২/৩ বহিরাগত যুবকের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে গ্রামবাসীর নিকট হাতে নাতে ধরা খায়। পরে গ্রাম্য শালিশে প্রাথমিক ভাবে তাকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়া হয়। তার পরেও অনরুপ ঘটনা সে একের পর এক ঘটাতে থাকে। সে নিজ বাড়িতে বহিরাগত যুবক ছেলে পেলেকে আত্নীয়ের পরিচয়ে রেখে অনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে। এক পর্যায়ে গ্রামের লোকজন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বার বার ওই পরিবারকে সতর্ক করে।

এ ঘটনার কিছু দিন পর তার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে বাবা আব্দুর রউফ গ্রামবাসীকে জানান। মেয়ের বিয়ের খরচ হিসেবে সহায়তা চাইলে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তাদেরকে ৩০ হাজার টাকা দেয়। যথা সময়ে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে সে আবার বাবার বাড়ি ফিরে আসে এবং ঢাকায় চলে যায়। তার পর থেকে সে দীর্ঘদিন যাবত ঢাকায় অবস্থান করে আসছিল।

কিছুদিন আগে ওই মেয়ে অন্তঃসত্তা অবস্থায় গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে এসে কিছু দিনের মাথায় ভোর রাতে হাটশাওলী ফকিরপাড়া পুকুর পাড়ে গিয়ে সে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। শিশুর কান্নার আওয়াজে আশপাশের লোকজন তা দেখে ফেললে ঘটনা প্রকাশ পায় ।বিষয়টি গ্রামের সকলের মাঝে জানাজানি হলে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াছিন আলী সহ গ্রামবাসী বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সবাই বসলে গ্রামের লোকজন মেয়েটির সদ্য ভুমিষ্ঠ হওয়া কন্যা শিশুর পিতার পরিচয় ও তার সন্ধান জানতে চায়। এ সময় মেয়ের বাবা আব্দুর রউফ গ্রাম সমাজে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মেয়ের ওই সন্তানের পরিচয় জানাবে। এক সপ্তাহ অতিক্রম হয়ে গেলেও তথ্য প্রমান দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে আবার সমাজ বসে। লোকসমাজে ওই মেয়ের বড় ভাই আব্দুর রইচ উপস্থিত হয়ে গ্রাম বাসীর নিকট আবারো ৪ দিন সময় চায়। যদি শিশুর বাবা কে? এই সন্ধান দিতে না পারে তাহলে বাবা মা কে সে আর ওই গ্রামে না রেখে নিজের বাড়িতে রাখবে বলে সমাজের নিকট প্রস্তাব দেয়।

এদিকে এরই মধ্যেই মেয়েটি তার ছোট ভাইয়ের সাথে গোপনে ঢাকায় চলে যায়। এদিকে গ্রামের লোকজন ওই পরিবারের সাথে চলাফেরা থেকে কিছুটা বিরত হয়ে পড়ে। আর এটিকে পুঁজি করে চতুর রউফ সমাজের মুখ বন্ধ করতে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে তার পরিবারকে এক ঘরে করার মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করে।

ওই গ্রামবাসী জানান গত ২৩ আগস্ট গ্রামের সমাজ ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত হয় যে মেয়েটির প্রসবকৃত কন্যা শিশুর প্রকৃত বাবাকে গ্রামবাসীর সামনে হাজির করতে হবে এবং সেই সাথে গ্রামবাসী বিয়ের খরচ বাবদ যে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিল সেই টাকা ফেরত দেয়ার। তারা ৩০ হাজার টাকা গ্রামবাসীর নিকট ফেরত দিলেও শিশুর বাবার পরিচয়ের বিষয়ে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। এই ঘটনা ধামা চাপা দিতেই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে তাদেরকে এক ঘরে করা ও গ্রাম ছাড়া করার মিথ্যা অভিযোগ তুলে হয়রানীর চেষ্টা করছে বলে গ্রামবাসী জানান।

এ বিষয়ে আব্দুর রউফ-এর সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টির আপোষ মিমাংসা চান।

এ বিষয়ে নির্মইল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য ইয়াছিন আলী’র সাথে কথা হলে তিনি জানান ঘটনাটি গ্রামবাসীর উপর চাপানো হচ্ছে। গ্রাম ছাড়া বা একঘরে করার মত কোন সিদ্ধান্ত গ্রামবাসী নেয়নি। আব্দুর রউফ তার পরিবার নিয়ে এখনও গ্রামেই আছে। তিনি যদি গ্রামবাসীর সাথে না চলে ফেরা করেন তাহলে আমাদের করণীয় কিছুই নেই। গ্রামবাসীর সাথে চলাচলে কোন বাধানিষেধ নেই।

বিষয়টি পত্নীতলা থানার ওসি শামসুল আলম শাহ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষনিক ভাবে ওই গ্রামের সমস্যা সমাধানে সুষ্ঠ তদন্তের জন্য একজন পুলিশ অফিসারকে পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহরে মাধ্যমে নিরসন করা হবে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT