ঢাকা (রাত ১২:৪২) শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News গৌরীপুরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বর্ণিল বিদায় সংবর্ধনা Meghna News স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান সানাউল্লাহ হলেন নির্বাচন কমিশনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধার, আটক-১ Meghna News নাগরপুরে যদুনাথ স. প্রা. বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত Meghna News দ্রুত সুমনের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানাল পরিবার Meghna News সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেটের সম্পাদক গরম পানিতে ঝলসে গুরুতর আহত Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে খাস জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষে নিহত একজন Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিখোঁজের ৪ দিন পর আদিবাসী শিশুর মরদেহ উদ্ধার Meghna News মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় যুবক নিহত

অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে মাতামহুরী রির্জাভ ও সাঙ্গ এলাকায় গাছ কেটে উজার হচ্ছে বনাঞ্চল

সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ,বান্দরবান সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ,বান্দরবান Clock রবিবার রাত ১১:৩৯, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০

বান্দরবানের আলীকদম থানচি এলাকায় দুর্গম সংরক্ষিত বন এবং অভয়ারণ্যে গত দুই মাসে শতাব্দী প্রাচীন বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে গত দুমাসে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, বনের প্রায় একশ একর জমি সম্পূর্ণ খালি হয়ে গেছে গত কয়েক বছরে।

পাহাড়ী বনাঞ্চলের শতাব্দীর প্রাচীন গাছগুলো সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চল মাতামহুরী রির্জাভ থেকে অবৈধভাবে কেটে সাঙ্গু মাতামহুরী নদী দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী থানচির স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বান্দরবান শহর চট্টগ্রামের কাঠ ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গত কয়েক বছর ধরে শীতের মৌসুমে এই পাহাড়ি বন থেকে গাছ কাটাচ্ছেন।

তবে এর বিরুদ্ধে কখনই ব্যবস্থা নেয়নি বনবিভাগ সব সময়ই তারা বলে আসছেন, ‘জনবল ঘাটতি কারণে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে তারা পাহারা দিতে পারছে না।

বনের গাছ লুটপাটে বন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

বাংলাদেশ স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশনের (স্পারসো) নেওয়া এবং বিশ্লেষণ করা স্যাটালাইট চিত্রগুলো থেকে দেখা যায়, বৃহৎ বনাঞ্চলের অন্তত ২৪টি স্পট থেকে গাছ কাটা হচ্ছে।

স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা . মো. মাহমুদুর রহমান সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৮৬৭ হেক্টর (দুই হাজার একরও বেশি) এলাকার একটি চিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। যার মধ্যে অন্তত ৪০ হেক্টর (প্রায় ১০০ একর) জায়গার সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

. মাহমুদুর জানান, ২০১৬, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে তোলা চিত্রগুলো দেখলে এটা স্পষ্ট হয় যে প্রতি বছরই গাছ কেটে বন খালি করা হচ্ছে।

স্থানীয় গ্রাম লোকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান যে প্রতিদিন বৃক্ষনিধন করা হয় সংরক্ষিত পাহাড়ী বনাঞ্চলে। তাদের কেউই নাম প্রকাশে আগ্রহী নন।

তারা বলেন, সংরক্ষিত বনের আন্দারমানিক, ডুংডুং পাড়া, মিলিঙ্গা পাড়া, ম্রংগং পাড়া, নরিষা জিরি, বড়মাদোক জিরি এবং সিঙ্গাপা মৌজা জিরি, তৈনফা মৌজা, মাংঙ্গু মৌজা,মাতামহুরী এলাকা,থানচি সড়কের পাশ থেকে নির্বিচারে গাছ কাটছে।

সম্প্রতি অন্দরমানিক নরিশা জিরি এলাকায় গিয়েছিলেন এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি যাদের গাছ কাটতে দেখেছেন তারা মূলত কক্সবাজারের চকোরিয়া থেকে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তারা নরিশা জিরিতে তাঁবু গেড়েছে এবং সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে পেট্রোল চালিত বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে নির্বিচারে শতবর্ষ পুরানো গাছ কেটে ফেলছে। এভাবে কাটতে থাকলে একদিন বনটি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।

ধ্বংস হচ্ছে সাঙ্গু।গত মাসে থানচির স্থানীয় নু মং প্রু বলেছিলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরে সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছিল। দ্যা ডেইলি স্টারে প্রতিবেদন প্রকাশের পর, কয়েক সপ্তাহ ধরে গাছ কাটা বন্ধ রেখেছে তারা।

থানচি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান চা সা থোয়াই মারমা বলেন, ‘গত কয়েকমাসে চোরাকারবারিরা সাঙ্গু সংরক্ষিত বন থেকে প্রায় ৩০ হাজার ফুট গাছ কেটে ফেলেছে।

অবৈধভাবে এসব গাছ কাটতে দেখেছেন এমন একজনের কাছ থেকে তিনি এই তথ্য পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘গাছগুলো কেটে সাঙ্গু নদী দিয়ে বান্দরবান শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বান্দরবান শহরে আসার পর সেগুলো ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ পাচারে সহায়তা করেন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান জেলা টিম্বার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ‘প্রায় সাতআট জন অসাধু ব্যবসায়ী এই বন থেকে গাছ কাটছেন। তাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রামের।

থানচির একজন স্থানীয় অধিবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি সাঙ্গু সংরক্ষিত বন থেকে কাঠ সরবরাহ করার জন্য জামাল নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নগদ প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন, আলীকদমের কুতুব উদ্দীন সও, নাছির উদ্দীন সও,মোজাম্মেল হক মোজাফ্ফর সও থানচি উপজেলার জসিম উদ্দীন সওদাগরসহ আরো অনেকে মাতামহুরী সাঙ্গু সংরক্ষিত বনের অন্যতম কাঠ পাচারকারী।

যোগাযোগ করা হলে মো. জামাল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সাঙ্গু বনে গাছ কাটার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি বান্দরবান থেকে যারা চট্টগ্রাম ঢাকায় কাঠ পাঠান তাদের কাছ থেকে আমি এগুলো কিনেছি।

বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া অস্বীকার করেন যে এই বন থেকে গাছ কাটা হয়।

তিনি বলেন, ‘সংরক্ষিত বন রক্ষায় আমাদের সহযোগিতা করতে বলিপাড়া বিজিবি এবং আলিকদম বিজিবিকে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। সম্প্রতি সংবাদ  প্রকাশের পর আমরা এসিএফ (সহকারী বন সংরক্ষক) এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি পরিদর্শন দলও গঠন করেছি।

প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, সাঙ্গু সংরক্ষিত বনে গাছ কাটার কথা শুনেছি এবংবিষয়টি তদন্তের জন্য আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিষয়ে পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা)

১৮৮০ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষিত হয় সাঙ্গু। এখানে রয়েছে ৩৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৯ প্রজাতির উভচর এবং ১১ প্রজাতির বিরল পাখি।

অরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক উদ্ভিদবিদ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, এই বনে অনেক দুর্লভ প্রজাতির পুরানো গাছ রয়েছে।

মাতামহুরী সাঙ্গু বনের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গাছের প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে গামার, গর্জন, চাপালিশ, টুন, গোদা, গুটগুটিয়া, চম্পা, সিভিট এবং শিমুল।

বর্তমানে দুবাই চিড়িয়াখানায় কর্তব্যরত বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ . রেজা খান জানান, তিনি গত বছর সাঙ্গু সংরক্ষিত বনে গিয়ে গাছ কাটতে দেখেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আসলে, বান্দরবানে দায়িত্বরত সব সরকারি কর্মকর্তা গাছ কাটা সম্পর্কে জানেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসন বন কর্মকর্তাদের অজান্তে কারো পক্ষে গাছ কাটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি পৃথক বন্যপ্রাণী বিভাগ গঠন না করে তাহলে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না। কারণ বন অধিদপ্তর বন্যপ্রাণী এবং প্রাকৃতিক বনের বিষয়ে চিন্তা করে না।

ঝুঁকিতে বান্দরবানের অন্যান্য সংরক্ষিত বন।এই জেলায় তিনটি প্রধান সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। সেগুলো হলোআলীকদমের মাতামুহুরি, লামার বামু বিলছড়ি এবং থানচির সাঙ্গু।

মাতামুহুরি বামুর আয়তন এক লাখ চার হাজার ৮৮২ দশমিক ৪২ একর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই বান্দরবানের দুই শীর্ষ স্থানীয় বন কর্মকর্তা জানান, এই বনগুলোর অনেক জায়গা খালি এবং অনুর্বর হয়ে গেছে নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে।

লামা বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ মূল্যবান মাতৃগাছ কেটে ফেলার কারণে মাতামুহুরি বামু সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় দুইতৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়সার বলেন, ‘মাত্র ১৪ জন কর্মী দিয়ে মাতামুহুরি বামু বনের এক লাখ চার হাজার ৮৮১ একর জায়গা রক্ষা করা সত্যিই কঠিন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT